×

আন্তর্জাতিক

‘পাল্টা আক্রমণে’ মার খাচ্ছে ইউক্রেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ১০:১৮ এএম

‘পাল্টা আক্রমণে’ মার খাচ্ছে ইউক্রেন

ছবি: এপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা এবং ডিফেন্স লাইন (প্রতিরক্ষা রেখা) উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে। শুক্রবার রাশিয়ার সোচি শহরে প্রথমবার এমন বিরল মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের কথা জানিয়েছে রাশিয়াও। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘পাল্টা আক্রমণ’ নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে কিয়েভ। আক্রমণের সময় ইউক্রেন সাধারণ সাংবাদিকদের রণক্ষেত্র থেকে সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি দেয় না। রয়টার্স

ইউরোশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ভ্লাদিমির পুতিন। এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে পারছি হামলা শুরু হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সামরিক রসদ ব্যবহার দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ না দিয়ে পুতিন আরো দাবি করেন, ইউক্রেনীয় সেনারা যে লক্ষ্যে এই অভিযান শুরু করেছে, তা এখনো অর্জিত হয়নি। তাদের সেনারা বড় ক্ষতির মুখে পড়ছে। তীব্র লড়াইয়ে প্রতি ৩ জন ইউক্রেনীয় সেনার বিপরীতে প্রাণ হারাচ্ছেন একজন রুশ সেনা।

প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে কিনা- এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি কিয়েভ। কিন্তু রুশ নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি অঞ্চলে হামলার ঘটনা বেড়েছে। গত কয়েকদিনে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে রুশ বাহিনী। মস্কো দাবি করেছে, ইউক্রেনীয়রা জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখা ভেঙে ফেলতে বারবার চেষ্টা করেছে এবং দক্ষিণে সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে। রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ)। টুইটে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড ইঙ্গিত করছে যে আক্রমণ চলছে।

গত শুক্রবার সকালে ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে রুশ বাহিনী। যদিও যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল এখন দোনেৎস্কে। লিম্যান, বাখমুত, আভদিভকা এবং মারিঙ্কায় ভারি লড়াই চলছে।

পাল্টা আক্রমণ নিয়ে নীরব কিয়েভ : শুক্রবার ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে রণক্ষেত্রে লড়াইয়ের দাবি করছে মস্কো। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে কয়েক হাজার প্রশিক্ষিত সেনা অংশ নেয়ার কথা, যাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে পশ্চিমারা। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নেয়া রাশিয়া বলছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করে যাচ্ছে। তবে কিয়েভ এখনো বলেনি তাদের আক্রমণ শুরু হয়েছে।

রুশপন্থি সামরিক ব্লগাররা শুক্রবার জাপোরিঝিয়া রণক্ষেত্রে তুমুল লড়াইয়ের কথা বলেছেন। অরোখিভ শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী একটি স্থল সংযোগের মাঝামাঝিতে এই লড়াই হয়। এই স্থল সংযোগকে ইউক্রেনের একটি সম্ভাব্য প্রধান নিশানা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

পাল্টা আক্রমণের শুরুটা খেরসনে দিনিপ্রো নদীর নোভা কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বিপর্যয়ের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। বাঁধের পানিতে প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। কৃষি ও প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার কিয়েভ বলেছে, তারা একটি ফোন কল থেকে জানতে পেরেছে বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণে থাকা রুশ বাহিনী। এদিকে রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেন এই নাশকতা চালিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, তারা এখনো প্রমাণ সংগ্রহ করছে। তবে এমন বিপর্যয় ডেকে আনার মতো ইউক্রেনের কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে যখন তাদের বাহিনী আক্রমণের দিকে এগোচ্ছে।

রণক্ষেত্রের সর্বশেষ বুলেটিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা আগের ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের ২১টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে। এদিকে বাখমুত শহরের পূর্বাংশে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেন। গত মাসে প্রায় এক বছর ধরে লড়াইয়ের পর শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ সেনারা। এমন দাবি করলেও কিয়েভ দক্ষিণ রণক্ষেত্র নিয়ে কার্যত কিছু বলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই রণক্ষেত্রেই ইউক্রেনের মনোযোগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ, তারা রুশ সেনাদের উপকূলের দিকে ঠেলে দিতে এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। বৃহস্পতিবার রাতের ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বাখমুতে সফলতার জন্য সেনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে ইউক্রেন রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ চালিয়ে আসছে। বিপরীতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনীয় শহরে হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App