×

আন্তর্জাতিক

বাইডেনের ইউক্রেন মিশন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৩ এএম

বাইডেনের ইউক্রেন মিশন

ছবি: এপির

আফগানিস্তান-ভিয়েতনাম ‘বিষাদে’র তাড়না থেকে!

ইউক্রেনের বাখমুত শহর শিগগিরই রাশিয়ার দখলে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সম্ভবত কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ। কিংবা এর চেয়েও কম। ইউক্রেন এরই মধ্যে এই শহর থেকে তার অভিজাত বাহিনীকে সরিয়ে নিয়েছে। পাল্টা আক্রমণের জন্য ইউক্রেনের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।

এরই মধ্যে রাশিয়া নিজেদের তৈরি অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাদের সরবরাহকৃত খুচরা যন্ত্রাংশ বা অস্ত্র ইউক্রেনের সত্যিকার কোনো কাজে আসছে না। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য আরো উদ্বেগের বিষয় হলো তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেছে। নতুন সরবরাহও নেই। সহজভাবে বলতে গেলে, আশপাশে প্রায় কোনো সহযোগিতাই নেই।

এই সুযোগে রাশিয়া ইউক্রেনের ব্রিগেড ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। বৃহত্তর বাহিনী, উন্নত কৌশল এবং আরো বেশি বিমান প্রতিরক্ষা এবং সরঞ্জামের সাহায্যে রুশরা খুব ভালোভাবে ইউক্রেনীয়

সেনাবাহিনীকে কাবু করতে পারে এবং কিয়েভে তাদের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনও করতে পারে। ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইসরাইল তাদের অস্ত্রের মজুত প্রায় সরিয়ে নিচ্ছে। কারণ ইসরায়েলি জেনারেলদের শঙ্কা- ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে। এই অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।

নাকের আগায় দম আটকে আছে : যুদ্ধের এই পর্যায়ে ইউক্রেন আরো সৈন্য নিয়োগের আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। বলতে গেলে ইউক্রেনীয় সেনারা কামানের গোলায় পরিণত হয়েছে। এরপরও ইউক্রেনীয় সরকার তাদের মার্কিন প্রভুদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে চাইছে এবং দেখাতে চায় যে, এখনো জান বাজি রেখে লড়াই করছে জনগণ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। যুবকরা যুদ্ধকে এখন আর দেশরক্ষার যুদ্ধ মনে করে না। সরকারও যারা এখন যুদ্ধের বিরুদ্ধে মতামত দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

অনেক ইউক্রেনীয় সাংবাদিকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে যারা এমন কিছু লেখার চেষ্টা করেন- যা ইউক্রেনের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার পছন্দ করে না। গত কয়েকদিনে ইউক্রেনের বিশেষ অভিযানে যারা ইউক্রেনের বিরোধিতা করছে এমন সাংবাদিক এবং ভাষ্যকারদের হত্যা করা হয়েছে। সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি এবং ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো স্টিফেন ব্রায়েনের মতে অদূরভবিষ্যতেই বাইডেন আগামী নির্বাচনেই দেশের নেতৃত্ব থেকে সরে যাবেন এবং জেলেনস্কিও ইউক্রেন ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় কোথাও চাকরির জন্য ঘুরবেন।

রুশ-মার্কিন আলোচনা : বাখমুত পূর্ণ দখলের পর হয়তো রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নেবে। কিন্তু বাইডেন পুনঃনির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থার পরিবর্তন হয়তো হবে না। কিন্তু বাইডেনের পুনর্নির্বাচন আরো বেশি অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে অভ্যন্তরীণ কারণে। মার্কিন অভিবাসীদের একটি বিশাল অংশ শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জড়ো হবে। নতুন কর, বন্ধকি ঋণের ওপর চাপ, মুদ্রাস্ফীতি মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া হলো শিশুদের যৌনতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।

পশ্চিমাদের নিয়মে খেলবে না : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ২৮ এপ্রিল সেন্ট পিটার্সবার্গে দেশটির আইন পরিষদের একটি সভায় বলেছেন যে, পশ্চিমা কিছু দেশের আরোপিত তথাকথিত নিয়ম মেনে মস্কো খেলবে না। নিজের নিয়মেই মস্কো খেলবে। বর্তমানে পশ্চিমাদের সম্মিলিত অর্থনৈতিক আগ্রাসন সহ্য করছে। অপেক্ষা না করে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য আইন প্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। পুতিন উল্লেখ করেছেন যে, কিছু দেশ আন্তর্জাতিক কূটনীতি ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।

বিচ্ছিন্ন করতে পশ্চিমারা ব্যর্থ : মস্কোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন করার যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের সব প্রচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। গতকাল শনিবার রুশ বার্তা সংস্থা তাস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এদিন অনলাইনে মাল্টিপোলারিটি বিষয়ক গেøাবাল কনফারেন্সে বক্তব্য দেয়ার সময় রাশিয়ার এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, এটি একেবারে স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে যে, ইতিহাসের গতিপথকে উল্টে দেয়ার এবং আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে একটি ‘নিয়মতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা’ মেনে চলতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের স্যাটেলাইটগুলোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে আমি বলব, রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে একঘরে করতে পশ্চিমাদের চালিয়ে আসা প্রচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

ভিয়েতনামের ভূত : ইউক্রেন যুদ্ধে বাইডেনকে তাড়া করছে ভিয়েতনামের দুঃস্বপ্ন। ৮০ বছর বয়সি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের তিক্ত স্মৃতিগুলো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। রোনাল্ড ডব্লিউ প্রুসেন নামের এক মার্কিন সাংবাদিক ফেসবুকে ২৬ এপ্রিল লিখেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে আকস্মিক সফরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হাঁটার সময় আফগানিস্তান ও ভিয়েতনামের পুরনো বিষাদের স্মৃতিই যেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। ২০০৯ সালে বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের একটি নিবিড় মূল্যায়ন পর্যালোচনা করেন বাইডেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন মুষ্টিমেয় কিছু বয়স্ক উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন যিনি বারবার ওবামাকে ইন্দোচীনে আগের প্রজন্মের ভয়াবহ পরিণতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

বব উডওয়ার্ড নামের আরেক বিশ্লেষক তখন ওবামাকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসুন নতুবা আপনি ভিয়েতনামের মতো ‘লকড’ হয়ে যাবেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাইডেন ভিয়েতনামের বিষাদকে অনুভব করেন এবং ইউক্রেনের বিষয়েও একই অনুভূতি পাচ্ছেন বলে মনে করছেন।

বব আরো বলেন, ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বিলিয়ন ডলারের সাহায্য এবং সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে (এ পর্যন্ত ২৭ দশমি ৫ বিলিয়ন ডলার) তা শুধু কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় ওয়াশিংটন এবং তার শক্তিশালী মিত্রদের অনেকটা ভিয়েতনামের ভূতের মতোই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

ইউক্রেন বিষয়ে কি মার্কিন পিছুটান : মার্কিন সংযম বা পিছুটানের সাম্প্রতিক উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার একটি ডাচ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাইলট প্রশিক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে। জার্মানির লেপার্ড-২ ট্যাংক ডেলিভারির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক অ্যাব্রাম ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে সম্মত হলেও তাতে বিলম্ব করে যা ইউক্রেনের ক্ষতিতে তরান্বিত করে। মার্কিন বাহিনীকে সরাসরি যুদ্ধ ময়দানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গেছে।

ইরাক এবং আফগানিস্তানে শিক্ষাগুলো স্পষ্টতই ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারসাম্যমূলক আচরণ করতে বাধ্য করেছে। বরং সময়ের ব্যবধানে আরো বেশি সংবেদনশীলতা শিখিয়ে দিয়েছে। বাইডেনের প্রথম জীবনের ভিয়েতনামের শিক্ষা ২০২১ সালে আফগানিস্তান যুদ্ধকে শেষ করার সিদ্ধান্তকে গতি এনে দিয়েছিল। ২০২৩ সালে একজন ৮০ বছর বয়সি বাইডেনকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের জীবিত অভিজ্ঞতাকে নিছক ভূতের ভয় হিসেবে দেখতে রাজি নয় অনেকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App