×

আন্তর্জাতিক

চীনের শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানাল রাশিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৯ এএম

চীনের শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানাল রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যাখ্যান করেছেন বাইডেন চীন যাচ্ছেন রুশ মিত্র লুকাশেঙ্কো

ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে চীনের দেয়া শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। তবে অস্থায়ী বা শর্তসাপেক্ষে রাশিয়ার আহ্বানে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের শান্তি পরিকল্পনায় কিছু নেই জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বছর পূর্তিতে গত শুক্রবার এই যুদ্ধ বন্ধে ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব দেয় চীন। এখন সেই প্রস্তাব নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কি। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শান্তি পরিকল্পনার প্রথমেই বলা হয়েছে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া ও রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অবসানের কথা। তা ছাড়া পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে মানবিক করিডোর গঠনের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। প্রস্তাবে শস্য রপ্তানি স্বাভাবিক করা ও ‘স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা’ পরিহারের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া ওই ১২ দফা প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনা ক্রমশ হ্রাস করার কথা বিস্তৃতভাবে বলা হলেও তাতে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে অবশ্যই সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এমন কথা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। আর রাশিয়ার ওপর ‘নিষেধাজ্ঞার একতরফা’ ব্যবহারের নিন্দা জানানো হয়েছে, যাকে পরোক্ষভাবে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনা বলে দেখা হচ্ছে।

চীনের মন্ত্রণালয়টির ওই নথিতে আরো বলা হয়, সংঘাত ও যুদ্ধে কারো লাভ নেই। সব পক্ষেরই যুক্তিসঙ্গত ও সংযত আচরণ করা উচিত, উচিত উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আগুনে ঘি ঢালা বন্ধ করা এবং এই সংকট যেন আরো নাজুক হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেদিকে নজর দেয়া।

চীনের শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানাল রাশিয়া : এরই মধ্যে চীনের শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা চীনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন সমস্যা ও মতপার্থক্য রাজনৈতি-কূটনৈতিক পন্থায় সমাধান করতে মস্কো আগ্রহী। তবে এক্ষেত্রে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে রাশিয়া কোনো ছাড় দেবে না।

এক বিবৃতিতে জাখারোভা বলেন, ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধ করা ও রাজনৈতিক-কূটনৈতিক পন্থায় রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যাবতীয় মতপার্থক্য দূর করার যে প্রস্তাব আমাদের চীনা মিত্ররা দিয়েছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। বেইজিংয়ের এই প্রস্তাবের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে।

গত এক বছরের যুদ্ধে ইউক্রেনের ৪ প্রদেশ- দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিঝিয়া দখল করেছে রুশ বাহিনী। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই প্রদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। এরপর থেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলে আসছেন- রাশিয়া ওই ৪ প্রদেশ ফিরিয়ে না দিলে মস্কোর সঙ্গে কোনো শান্তি সংলাপে যাবে না কিয়েভ। অন্যদিকে, মস্কো বলছে- এগুলো বর্তমানে রাশিয়ার ভূখণ্ডের অংশ এবং নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে মস্কো কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। মারিয়া জাখারোভার শুক্রবারের বিবৃতিতেও মস্কোর এই অবস্থানের প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে।

প্রত্যাখ্যান করেছেন বাইডেন : চীনের শান্তি পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার এবিসি নিউজকে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রস্তাবের প্রশংসা করছেন। সুতরাং এটি কীভাবে ভালো হতে পারে? আমি পরিকল্পনায় এমন কিছু দেখিনি যা ইঙ্গিত দেয়, রাশিয়া ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এটি ভালো হবে। চীনের শান্তি প্রস্তাবে রাশিয়ার জন্য সুবিধা ছাড়া কিছুই নেই জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন বাইডেন।

এ নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনও সতর্ক করে বলছেন, ইউক্রেনে অস্থায়ী যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব মেনে নিলে আরো অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত এবং রুশ বাহিনীকে পুনর্গঠনে কাজে লাগাবে মস্কো। তিনি আরো বলেন, বাস্তবতা হলো ভøাদিমির পুতিন এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনিই এটি শেষ করতে পারেন।

এদিকে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোও চীনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। জোটের মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, চীনের শান্তি আলোচনার আহ্বানের খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

দুভাগে বিভক্ত হচ্ছে বিশ্ব নেতৃত্ব : বিশ্বের প্রধান প্রধান উন্নত এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০-র অর্থবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তারা গতকাল ভারতে এক বৈঠকে বসেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধকে কীভাবে বর্ণনা করা হবে তা নিয়ে কোনো ঐকমত্যে তারা পৌঁছতে পারেননি। পরিস্থিতি এমনই থাকলে এই বৈঠকও কোনো যৌথ বিবৃতি ছাড়াই শেষ হতে পারে বলে প্রতিনিধিরা আশঙ্কা করেছেন।

প্রতিনিধিরা জানান, এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এবং শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি৭-এর মিত্ররা বিবৃতিতে প্রতিবেশী দেশে আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানোর বিষয়টি রাখতে বদ্ধপরিকর থাকলেও, রাশিয়া ও চীনের প্রতিনিধিরা এর বিরোধিতা করে যাচ্ছেন।

জি২০-র অন্যতম সদস্য রাশিয়া ইউক্রেনে তার কর্মকাণ্ডকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলছে, ‘আগ্রাসন’ বা ‘যুদ্ধ’ নয়। এমনকি আয়োজক দেশ ভারতও বিবৃতিতে ‘যুদ্ধ’ শব্দ ব্যবহার এড়াতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জি২০ কর্মকর্তারা।

এখন জি২০-র প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তারা ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে দায় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান চাইছে, পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চীন যাচ্ছেন রুশ মিত্র লুকাশেঙ্কো : আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চীন সফরে যাচ্ছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত সফর করবেন তিনি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত লুকাশেঙ্কো। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর আগে বেলারুশে ব্যাপক মাত্রায় যৌথ সামরিক মহড়া চালায় রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছে মিনস্ক। বেলারুশ তার প্রতিবেশী রাশিয়ার ওপর আর্থিক এবং রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই নির্ভরশীল। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটে চীনের সঙ্গেও আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক বেলারুশ। ইউক্রেন যুদ্ধে পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে সহায়তার অভিযোগে বেলারুশের ওপরও একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমাদের : রাশিয়ার ওপর আরো অন্তত ১০টি নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যুদ্ধের অর্থায়নকে আরো কঠিন করার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের জন্য প্রযুক্তি সরঞ্জাম ও খুচরা যন্ত্রাংশ কেনার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় এতে। ইইউ আরো জানিয়েছে, ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয় জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ সংস্থাটি। ইউক্রেনকে যতদিন লাগবে সমর্থন করবে ইইউ।

রাশিয়ার মন্ত্রী, আঞ্চলিক নেতা ও ৩টি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিষ্ঠানসহ ৬০ জনেরও বেশি শীর্ষ রুশ কর্মকর্তার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর বাইরে অন্যান্য রুশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ২০০ এর বেশি সদস্যের ওপর মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে অভিযুক্ত ৩ জন সামরিক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় মস্কোর বেশ কয়েকটি ব্যাংক, প্রযুক্তি কোম্পানি ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এদিকে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট দপ্তরের কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৯২ নাগরিককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে কানাডা। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে মস্কো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের দুই মেয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App