একসময় পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন। এই দায়িত্বে তিনি ছিলেন ৯ বছর। এর মধ্যেই সেনাপ্রধান হওয়ার এক বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নওয়াজ শরিফকে উৎখান ও পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তগত করেন তিনি।

এসময় তিনি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন, সংবিধান স্থগিত করেন এবং দায়িত্ব নেন পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহীর। ২০০১ সালের জুনে দশম প্রেসিডেন্ট হন এই সেনাশাসক। খবর ডনের।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। জরুরি অবস্থা জারির ২৫ দিনের মাথায় তিনি সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন, তবে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকেন। ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেন তিনি।

তবে ২০০৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। অভিশংসন এড়াতে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালে পারভেজ মোশাররফ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার দলের নাম অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এপিএমএল)।

এক সময়ের প্রতাপশালী এই সেনাশাসকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তার পরিবার পাকিস্তানের করাচিতে চলে আসে। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে কাকুলের পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন।

১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ) সময় পারভেজ মোশাররফের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা হয়। তিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের এলিট স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপে (এসএসজি) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি এসএসজির একটি কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ছিলেন। পরবর্তী সময় তিনি দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন সামরিক দায়িত্ব পালন করেন। এই সুবাদে সেনাবাহিনীতে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন তিনি।

২০১৬ সালের মার্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন পারভেজ মোশাররফ। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেই বছর পাকিস্তান ছাড়েন তিনি। তারপর আর দেশে ফেরেননি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পারভেজ মোশাররফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। অ্যামাইলয়েডোসিস নামের এক বিরল রোগে ভুগছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিশেষ আদালতে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারির ঘটনায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পারভেজ মোশাররফের এই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেন লাহোর হাইকোর্ট।