×

আন্তর্জাতিক

আদানির স্ত্রী ও ভাইরাও দুর্নীতিগ্রস্ত?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৪৮ পিএম

কয়েকদিন ধরে শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। তার শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু হু করে নেমেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানিদের সব সংস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারপর থেকেই তাদের শেয়ারের দামে ধস নেমেছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। সেখানে এক ধাক্কায় তৃতীয় থেকে নেমে প্রথম দশের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন আদানি। ভারতীয় ধনকুবের বর্তমানে রয়েছেন ১৭ নম্বরে। হিন্ডেনবার্গের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানিরা কারচুপি করে ধনী হয়েছেন। শেয়ারবাজারে তারা কৃত্রিমভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এভাবে লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে একা গৌতম আদানি বা তার সংস্থা নয়, আদানি পরিবারের আরো একাধিক সদস্যের দিকে আঙুল তুলেছে হিন্ডেনবার্গ। নাম করে করে দেখানো হয়েছে, কী কী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আছেন তারা। হিন্ডেনবার্গের তালিকায় আছেন গৌতম আদানির ভাই, দাদা ও শ্যালকসহ আত্মীয়দের অনেকেই।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এই সদস্যরা। হিন্ডেনবার্গের ১০৬ পাতার প্রতিবেদনে বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়ো সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, গৌতম আদানির দাদা বিনোদ। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি ও ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতে তার নাম জড়িয়েছিল। চূড়ান্তভাবে দুবাইয়ে থাকেন বিনোদ আদানি। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তার সম্পদ নজরকাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় বিনোদের নাম উঠে এসেছিল সবার ওপরে। হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে রাজেশ আদানির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি গৌতমের ভাই। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি। রাজেশ বেআইনি হীরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি মার্কিন সংস্থার।

হিন্ডেনবার্গ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজেশ হিরে দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা ডিআরআই তাঁকে এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে দুইবার রাজেশকে গ্রেপ্তারও করা হয়। গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও করা হয়েছে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে। হিরে দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল এই সমীরেরও। বর্তমানে তিনি আদানিদের অস্ট্রেলিয়া বিভাগের নির্বাহী পরিচালক।

ডিআরআই সমীরকেও হীরা দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল, প্রতিবেদনে হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একাধিক মিথ্যার আশ্রয়ও নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পেশায় দাঁতের চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান প্রীতি।

প্রতিবেদনে আছে যতীন মেটার নামও। তার ছেলে আদানির ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। হীরা দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনে।

হীরা নিয়ে এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। আদানিরাই নাকি সেই দুর্নীতির কাণ্ডারি। অভিযোগ আছে, কর ফাঁকি দিয়ে তারা হীরা ও সোনার গহনার ব্যবসা চালিয়েছেন। হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনকে ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা’ বলেও দাবি করেছে তারা।

কিন্তু আদানিদের জবাবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি শেয়ারবাজারে। তার পরেও ক্রমশ নেমেছে তাদের শেয়ারের দর। বিপর্যয়ের মুখে তড়িঘড়ি ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাতিল করে দিয়েছেন আদানি। এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র আছে। আদানিদের বহু কোটির শেয়ার কিনেছে এসব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে আছে দেশটির সাধারণ মানুষও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App