পদ্মার চরে আতঙ্কের নাম রাসেলস ভাইপার
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম
পদ্মার চরে আতঙ্কের নাম রাসেলস ভাইপার। ছবি: সংগৃহীত
পদ্মার তীরে উপদ্রব বেড়েছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের (চন্দ্রবোড়া)। গত ৩ মাসে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এ সাপের কামড়ে মারা গেছে অন্তত ৫ জন। স্থানীয়রা ২০টিরও বেশি সাপ মেরে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। হঠাৎ করে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ। হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে রাসেলস ভাইপারের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। দুটি ইউনিয়ন পদ্মার ওপারে। উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাট থেকে আজিমনগর চরে পৌঁছতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। সোমবার (৩ জুন) সরেজমিন আজিমনগর চরে পৌঁছে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দেখা মিলে দেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কাজিরকান্দা গ্রামের কৃষিশ্রমিক সামাদ সেখ ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপটি দেখতে পান। এরপর তার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন লাঠি নিয়ে এসে সাপটি মেরে ফেলে।
ওই গ্রামের আবুবক্কর জানান, অল্পের জন্য সামাদ সেখ প্রাণেরক্ষা পেয়েছেন। একটু বেখালি হলেই হয়তো ছোবল মারতো। সাপ না মেরে কি করবো আমাদেরও তো বাঁচতে হবে।
এসময় জড়ো হন গ্রামের আরো কয়েকজন নারী-পুরুষ। তাদের সবার মুখেই রাসেলস ভাইপারের আতঙ্কের কথা। ঘর থেকে বের হতেই ভয় পান তারা। ধানাকাটা মৌসুম কিন্তু কৃষিশ্রমিক মিলছে না। ধান ও ভুট্টা ক্ষেতে এ সাপের দেখা মিলছে বেশি।
কাজিরকান্দা গ্রামের ইদ্রিস সেখের ছেলে লাল মিয়া (৩৮) মারা গেছেন রাসেলস ভাইপারের ছোবলে। ৩ মাস আগে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় সাপে দংশন করে তাকে। প্রথমে তাকে স্থানীয়ভাবে ঝাঁড়-ফুক করা হয়। এরপর ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় তার ।
স্থানীয় কৃষক শমসের আলী জানান, কিছুদিন আগে পাশের গ্রামে তোতা মিয়া নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে সাপের কামড়ে। তাদের হিসাবে ৩ মাসে অন্তত ৫ জন মারা গেছেন। বেশ কয়েকজন সাপের দংশনে আহতও হয়েছেন। এরমধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এ এলাকায় হাসপাতাল না থাকায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না সাপে কাটা রোগীরা। পদ্মা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে আসতে আসতেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সাপ দেখা মাত্র মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না জানান, অনেককে দেখা যায় সাপে কাটার পর ওঝার কাছে গিয়ে ঝাড়-ফুঁকে সময় নষ্ট করেন। কিন্তু সেখানে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো এন্টিভেনম নেই। সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতাও নেই তাদের। কোনো রোগী এলে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, পদ্মার চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সেখানে মাইকিং করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে। একই সঙ্গে কৃষকদের মাঝে গামবুট জুতা বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন: মোটরসাইকেল ঠিক করে না দেয়ায় মেকানিককে গুলি করলো কনস্টেবল!
তিনি আরো জানান, কচুরিপানা বা অন্য কোনোভাবে পদ্মার অববাহিকা ধরেই রাসেলস ভাইপার মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলে পৌঁছেছে। কয়েক বছর বড় বন্যা না হওয়ায় এর বংশবিস্তার হয়েছে বেশি। দেশের সবচেয়ে বিষধর এ সাপ ডিমের পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দিয়ে থাকে।