×

স্বাস্থ্য

শহর ছাড়িয়ে ডেঙ্গু: গ্রামাঞ্চলে নেই মশকনিধনের কার্যক্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:৫৫ পিএম

শহর ছাড়িয়ে ডেঙ্গু: গ্রামাঞ্চলে নেই মশকনিধনের কার্যক্রম

চরিত্র পাল্টেছে। পাল্টেছে আক্রমণের ধরন। ছিল শুধু রাজধানী ঢাকায়। এরপর কয়েক বছরে বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবস্থান নেয়। এবার উপজেলা ও পৌরশহরে আক্রমণের পর গ্রামেও পৌঁছে গেছে এডিস মশা। গ্রামের মানুষও এডিসবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৯ জুলাই দেশের ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আকারে। ঊর্ধ্বমুখী এই অবস্থায় ডেঙ্গু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃতের দৈনিক পরিসংখ্যানে এই চিত্র স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০০ সালের পর থেকে প্রতি বছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। মৃতের সংখ্যাটিও কম নয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। ফলে এই ডেঙ্গুই এখন দেশের বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কয়েকদিন আগেই বলা হয়েছে, ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে তা বেড়েই চলছে। গতকাল রবিবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও জেলা পর্যায়ে রোগী বাড়ছে। বেশি করে মশা মারার ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গ্রামে ডেঙ্গুরোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদক্ষেপ চোখে পড়ে। কিন্তু গ্রামে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেই। গ্রামেও বৃষ্টির পানি বাসাবাড়ি, আঙিনাসহ নানা স্থানে জমে থাকে। ফলে এডিস মশা জন্মালেও তা ধ্বংসে কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রামের মানুষের মাঝে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতাও তেমন তৈরি হয়নি। ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অনেকে তা বুঝতে পারেন না।

জানা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিধনে কোনো কার্যক্রমই নেই। মশা মারার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। কিংবা কোনো ওষুধ, মেশিনও ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া হয় না।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক দুই প্রকার এডিস মশার মধ্যে ‘এডিস এজিপ্টি’ ও ‘এডিস অ্যালবোপিকটাস’। যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যাচ্ছেন। ওই মশাও ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। পরবর্তী সময়ে সেই মশা যদি অন্য আরেকজনকে কামড়ায় তাহলে ওই ব্যক্তিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, বাংলাদেশে সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। মশক নিধন কার্যক্রমে স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতা ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য বেশি দায়ী। থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিস মশার লার্ভা বেশি প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তার ঘটে বেশি। মশার উৎস বন্ধ করতে না পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।

গ্রামে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি রোগ। তাই মশার বংশ বিস্তার ঘটলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে। এডিস মশা সুন্দর ঘরবাড়িতে থাকতে পছন্দ করে। এখন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও পাকাবাড়ি, ভবন নির্মাণের কাজ, এসির ব্যবহার বেড়েছে। সেখানেও ছাদবাগান হচ্ছে। টবে ফুলের গাছ লাগাচ্ছে। সেখানে পানি দেয়ার ফলে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকছে। সেই পানিতে এডিস মশা খুব সহজেই বংশবিস্তার করতে পারছে। মশা যুগ যুগ ধরেই আছে। অতীতেও ছিল। বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মশা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

এ প্রসেঙ্গ আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এটি তার ধরন পরিবর্তন করেছে। নগর ছাড়িয়ে এই রোগ এখন গ্রামেও ছড়িয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত হয়তো গণহারে ডেঙ্গু রোগী বাড়তেই থাকবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শহরের মতো গ্রামেও জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে, মশা মারার ওষুধ ছিটাতে হবে। সেই সঙ্গে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেও এডিস মশার প্রজনন হয়। তাই ঘরের আশপাশে পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App