×

স্বাস্থ্য

এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সেমিনার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ০২:১৫ পিএম

এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সেমিনার
  • আইসিইউতে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ৫২ শতাংশ
  • মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি সামগ্রী খেয়ে মানুষ সহজেই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে
এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ এন্টিবায়োটিক যেমন- মেরোপেনামও কাজ করছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মাঝে সর্বোচ্চ শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীর এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনী, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মাঝে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ভোগা রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যু হার বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিএসএমএমইউয়ে ‘এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। রোববার সকালে এ ব্লক অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম এন্টিবায়োটিকের উপর আলাদা তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারে জানানো হয়, এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগীর মাংসে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিখাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এসকল খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে এন্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় হচ্ছে না। এরফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বে রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যয় বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার আশঙ্কা ২০৫০ সাল নাগাদ এই ব্যয় ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগরে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা। উপাচার্য বলেন, আমাদেরকে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং জসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন না করতে পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে এন্টিবায়োটিক ক্রয় বিক্রয় করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা বলেন, এন্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্সের মতো বৈশ্বিক সমস্যা বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত, সুপরিকল্পিত, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালসমূহে এন্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে।বিএসএমএমইউতেও এই প্রোগামটি অতিদ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার, রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার রোগের জীবাণু শনাক্ত এবং এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা। এর জন্য মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল চিকিৎসবক, হাসপাতাল প্রশাসন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের আবান জানানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App