×

ফিচার

তারেক স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:৩২ পিএম

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ। সেই ঘটনায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রায়ের পর ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক মাসুদের স্ত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্যাথরিন মাসুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হেমন্ত প্রাচ্য
তারেক-ক্যাথরিনের পরিচয় যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে কেটেছে শৈশব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন ক্যাথরিন শেপিয়ার। ১৯৮৬ সালে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতির ওপর একটি গবেষণা করতে আসেন বাংলাদেশে। পরিচয় হয় আহমদ ছফার সঙ্গে। একই বছর ঢাকায় ছফার ‘পাগলা ঘর’ নামের বাড়িতে তারেক মাসুদের সঙ্গে পরিচয় ক্যাথরিনের। তারেক মাসুদ তখন এস এম সুলতানের ওপর তথ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ নির্মাণ করছেন। প্রায় সাত বছর ধরে এই ছবিটি নির্মাণ করেন তারেক। নির্মাণের শেষ দিকে ছবিটির ইংরেজি সাবটাইটেল তৈরিতে সাহায্য করার জন্য ক্যাথরিনকে অনুরোধ করেন তারেক। এরপরই শুরু হয় ক্যাথরিনের সঙ্গে তারেকের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব থেকে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারেক-ক্যাথরিনের যুগলযাত্রা দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে তারেক-ক্যাথরিনের যুগলজীবনের শিল্পযাত্রা। এখনো তারেক মাসুদের অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো নিয়ে কাজ করছেন ক্যাথরিন মাসুদ। তারেক-ক্যাথরিন জুটির হাত ধরে নির্মিত হয় মাটির ময়না, মুক্তির গান, মুক্তির কথা, মাটির ময়না, অন্তর্যাত্রা, নরসুন্দর ও রানওয়ে চলচ্চিত্রগুলো। ২০১১ সালে তাদের নতুন সিনেমা ‘কাগজের ফুল’-এর লোকেশন দেখে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তারেক মাসুদ। একই গাড়িতে থাকা ক্যাথরিনও সেদিন আহত হন। তিন দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ক্যাথরিন। আশির দশকে প্রথম বাংলাদেশে আসার কারণ জানাতে গিয়ে ক্যাথরিন বলেন, গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে অপশন দেয়া হয়েছিল, আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ল্যাটিন আমেরিকা। আমার প্রফেসর তখন আমাকে বলল বাংলাদেশে যেতে পারো। এরপরই এক বন্ধুর মাধ্যমে ঢাকায় আসা। এরপর তো আহমদ ছফা, তারেক, সুফি এস এম সুলতানের সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। মুক্তির গান নির্মাণ বিয়ের কয়েক মাস পরই আমি ও তারেক আমেরিকা যাই। সেখানে গিয়ে লিয়ার লেভিনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। তখন জানতে পারি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ তার কাছে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় লেভিন তখন আমেরিকাতে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার সঙ্গে দেখা করে এই ফুটেজগুলো সংগ্রহ করি। এরপর তো পাঁচ বছরের দীর্ঘ যাত্রা। এ গল্পটাও অনেক বড়। মুক্তির কথা তথ্যচিত্রে আমরা এর কিছু অংশ বলেছি। কান চলচ্চিত্র উৎসবে মাটির ময়না ২০০২ সালে ‘মাটির ময়না’ ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। কিন্তু তখন বাংলাদেশ সরকার ছবিটিকে নিষিদ্ধ করেছিল। বাণিজ্যিক ছবির ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হলে ছবি আরো জনপ্রিয় হয়। কিন্তু আমরা এ ধরনের প্রচারণা চাইনি। আমরা মাটির ময়না নির্মাণের পর এটাকে সব মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের গ্রামে যে ইসলাম ধর্মের চর্চা রয়েছে সেখানে কিন্তু উগ্রতা নেই। চমৎকার একটা লোকসংস্কৃতি। মাটির ময়না ছবির মাধ্যমে মুসলিম এই লোক সংস্কৃতিকেই তুলে ধরেছি। কান উৎসবে অনেক সাংবাদিক ছবিটির নিষিদ্ধের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল। আমরা এ বিষয় নিয়ে তেমন কথা বলিনি। তারেক মাসুদের সঙ্গে শেষ স্মৃতি কাগজের ফুল সিনেমার লোকেশন দেখে আমরা ঢাকায় ফিরছিলাম। গাড়িতে তারেক বেশ উৎফুল্ল ছিল। অনেক গল্প করছিলাম ছবির লোকেশনের গল্প, সুফি সুলতানের গল্প। গল্পের মধ্যেই এ দুর্ঘটনা ঘটল। তারেক স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করত, স্বপ্ন দেখাত তরুণদের। তারেকের মৃত্যুর পরও তার স্বপ্নগুলো যেন তরুণদের মাঝে বেঁচে থাকে তার জন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। মামলার রায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মহাসড়কে প্রতি বছর অকারণে অসংখ্য মানুষ তাদের জীবন দিচ্ছে এবং আমাদের মতো আরো অসংখ্য পরিবার স্বজন হারাচ্ছে। এই রায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহসী হবেন। এই রায়ের মাধ্যমে এমন একটা প্রক্রিয়া তৈরি হলো যা ভবিষ্যতের জন্য নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আশা করি আইনের এই ধারা সব মানুষের ক্ষেত্রে অব্যাহত থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App