×

ফিচার

তির্যক কখনোই থেমে থাকেনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ০১:০৭ পিএম

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের বিকাশে যে ক’জন মানুষের অণী ভূমিকা রয়েছে তাদের মধ্যে আহমেদ ইকবাল হায়দার অন্যতম। বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব চট্টগ্রামের ‘তির্যক’ নাট্যদলের দলপ্রধান। দলটির ৪৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ঢাকার জাতীয় নাট্যশালায় দলটির আয়োজনে চলছে তিন দিনব্যাপী নাট্যমেলা। এই নাট্যমেলা ও থিয়েটারের অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে আহমেদ ইকবাল হায়দারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহনাজ জাহান
মেলা : তির্যক নাট্যমেলা প্রসঙ্গে জানতে চাই? ইকবাল হায়দার : স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নাট্যচর্চা শুরু করে তীর্যক নাট্যদল। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নাট্যচর্চার বিকাশে নিয়মিত কাজ করেছে এই দলটি। নতুন নাটক, মহড়া, সেমিনার, প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ থিয়েটার কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে সক্রিয় থেকেছে তির্যক। এই দলটির প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর উপলক্ষে ঢাকায় এই নাট্যমেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা : চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে নাট্যমেলা করার কারণ কি? ইকবাল হায়দার : চট্টগ্রামে তো নিয়মিতই কাজ করছি। আসলে নিজ এলাকায় কাজ করলে কেবল নিজেদেরই মানুষ থাকে। মাঝে মাঝে অন্য কোনো এলাকায় গিয়ে এ ধরনের উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেখানকার মানুষগুলোকেও আপন করে পাওয়া যায়; চিন্তার আদান-প্রদান হয়। এতে আমরা নিজেরা সমৃদ্ধ হয়; পাশাপাশি চট্টগ্রামে থেকেও আমরা কতটা কি কাজ করছি সেটা সম্পর্কেও অন্যদের ধারণা তৈরি হয়। আমরা শুধু ঢাকা নয়, বিভিন্ন জেলায় নানা রকম থিয়েটার বিষয়ক কাজ করেছি। ভারতেও আমরা নাট্যমেলা আয়োজন করেছি। মেলা : এবারের নাট্যমেলার আয়োজন নিয়ে যদি বলেন? ইকবাল হায়দার : ঢাকার জাতীয় নাট্যশালায় ১৭-১৯ নভেম্বর এই নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলার আয়োজনে রয়েছে আমাদের দলের তিনটি নাটকের প্রদর্শনী। এছাড়া নাট্যসারক ও পোস্টার বিতরণ। নাট্যশালার লবিতে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রয়েছে গান, আবৃত্তি, নৃত্য, মূকাভিনয় ও চট্টগ্রামের লোকগান। সন্ধ্যা ৭টায় থাকছে নাটক। নাট্যমেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় তীর্যক প্রযোজনা বিসর্জন, ইডিপাস ও তরঙ্গভঙ্গ নাটকগুলো মঞ্চস্থ হচ্ছে। এছাড়া মেলা উপলক্ষে নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার ও নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সম্মাননা জানানো হয়। মেলা : এই নাট্যমেলার আলাদা বিশেষত্ব কি? ইকবাল হায়দার : আমরা বুঝি মেলা মানেই হৈহুল্লোড়, আনন্দ, বেচাকেনা ইত্যাদি। কিন্তু এই মেলাটা একটু ভিন্ন রকম। এখানে শুধু নাটক থাকবে। এছাড়া ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত থাকছে নাট্যভাবনা শীর্ষক আলোচনা। যেখানে নাটক নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করবেন বাংলাদেশ ও কলকাতার নাট্যকর্মীরা। মেলা : চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক নাট্যচর্চা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই? ইকবাল হায়দার : মাঝখানে নানা কারণে ভাটা পড়লেও এখন কিন্তু চট্টগ্রামের নাট্যচর্চার জোয়ার চলছে। অনেকেই ভালো কাজ করছেন। শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো বাংলাদেশে নাট্যচর্চার জায়গাটা উন্নত হয়েছে। মেলা : বাংলাদেশের নাট্যচর্চা ঢাকাকেন্দ্রিক। আপনি কি মনে করেন? ইকবাল হায়দার : আমি মোটেও তা মনে করি না। ঢাকা শুধু প্রচারণার দিক থেকে সুবিধা বেশি পাচ্ছে। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় সব কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই ঢাকাতে একটি ক্ষুদ্র কিছু ঘটলেও প্রচারণার কারণে সেটি দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে; যা অন্য জেলাগুলোর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। তাই বলে চর্চাটা কিন্তু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সারাদেশেই নাট্যচর্চা হচ্ছে। মেলা : চট্টগ্রামে থিয়েটার ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাই? ইকবাল হায়দার : থিয়েটার ইনস্টিটিউট ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কর্মকান্ড শুরু হয় ২০০৫ সালে। চট্টগ্রামের নাট্যচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে থিয়েটার ইনস্টিটিউট। একটি আদর্শ থিয়েটারের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই আছে এখানে। মেলা : তির্যকের চার দশকের সফলতা ও ব্যর্থতার কথা জানতে চাই? ইকবাল হায়দার : সব কিছুরই ভালো-খারাপ দুটো দিক থাকে; আমাদেরও আছে। সফলতা, এই ৪৪ বছরে তির্যক কখনোই থেমে থাকেনি। এই ৪৪ বছরে আমরা ৪৪টি নাটকের দুই হাজার ৬১৫টি প্রদর্শনী করেছি। এর মধ্যে বিসর্জন নাটকটির ২৪০টা প্রদর্শনী হয়েছে। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের নাটকের ২০০ প্রদর্শনী করা একমাত্র নাটক এটি। আর ব্যর্থতার কথা যদি বলি, আমরা এখনো থিয়েটারকে পেশাদারিত্বের জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি। অন্য চাকরিগুলো যেভাবে প্রফেশনালি নিয়েছি; থিয়েটারটা সেই পেশাদারিত্বের জায়গায় নিতে পারিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App