×

ফিচার

মাছের রাজ্যে মাছের আকাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০০ পিএম

মাছের রাজ্যে মাছের আকাল

মাছের রাজ্যে মাছের আকাল। ছবি: রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

মাছের রাজ্যে মাছের আকাল
মাছের রাজ্যে মাছের আকাল

এখন হাওরের চারদিক পানিতে নিমজ্জিত। এখন হাওরে পুরোদমে মাছের মৌসুম থাকার কথা। মাছের রাজ্যে ভরা বর্ষা মৌসুমেও মাছের দেখা মিলছেনা। হাওর ও নদ-নদীতে জেলের জালে মাছের দেখা মিলছে না,বাধ্য হয়ে অনেকেই পরিবর্তন করছেন বাপ-দাদার পেশা। সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে হাওর, বিল, নদ-নদীতে এ সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, এখন যে অল্প সংখ্যক মাছ পাওয়া গেলেও তার দাম বাজারে আকাশচুম্বী। ফলে স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও বানচাপড়া হাওর, ঘোড়াডোবা হাওর, লুঙ্গা-তুঙ্গা বিল, হানিয়া-কলমা বিল, রুপেশ্বর বিল, শালদিঘা বিল সহ ছোট বড় ৪৪টি হাওর ও বিল দেশীয় মাছের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল। এসব হাওরের মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হতো। তবে কালের বিবর্তনে বদলে গেছে সেই চিত্র।

মৎস্য আহরণে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় জেলেদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। পাশাপাশি বাড়তি দাম দিয়েও মাছের অভাব পূরণ করতে না পারার কষ্টও রয়েছে ক্রেতা সাধারণের মাঝে। দেশীয় মাছের উৎপাদন যেভাবে কমতে শুরু করেছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ‘মাছের রাজ্য’ খ্যাত মধ্যনগর উপজেলাসহ সমগ্র হাওরাঞ্চলের মানুষ চরম আমিষ সংকটে পড়বেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মাছের রাজ্যে মাছের আকাল

উপজেলার হাওরগুলো বর্ষায় ছয় মাস থাকে অথৈ জলে। এই হাওরের মাঝে কালি বাউশ, পাবদা, চিংড়ি,আইড়, বাচা, বোয়াল, মাগুর, চাপিলা মাছ স্বাদের জন্য বিখ্যাত।

দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির কারণ জানতে চাইলে অনেকেই জানান, জমিতে অতিরিক্ত সারের ব্যবহার, কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরা, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এবং এবার মাছের প্রজননের সময় হাওরে পানি এ জন্য দায়ী। এতে তাদের কপালে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

মূলত ছয় মাস হাওরাঞ্চালে পানি থাকে। সেখানে প্রচলিত কথা হলো, ‌‘বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও।’ পুরো ছয় মাস হাওরাঞ্চালের মানুষের একমাত্র আয় মৎস্য আহরণ থেকে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাওরে মাছ না থাকায় উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের প্রায় ১০থেকে ১৫ হাজার জেলে পরিবার বেকায়দার পড়েছেন। মাছ না পাওয়ায় কর্মহীন হয়ে জীবন জীবিকার সংকটে পড়েছেন তারা।

সানুয়া গ্রামের জয়চরন বর্মন জানালেন, দেশী মাছ বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। অনেকে পোনা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে, তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কেউ কেউ চায়না দুয়ারী মশারীর মত জাল দিয়ে মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সুদ ছাড়া ঋণ দেয়, তাহলে আমরা দাদন এনে নৌকা জাল তৈরি করতে হতো না। তখন নিজের জাল দিয়া মাছ মারতাম। অন্যদের মতো সব মাছ ধরতাম না।’

মাছের রাজ্যে মাছের আকাল

রংচী গ্রামের আর্শাদ মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর নৌকায় জাল দিয়ে মাছ মারলে প্রতি রাতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মাছ পাইতাম। নৌকা ভাড়া ও জালের ভাড়া দিয়ে প্রতিজনে সাত থেকে ৮শ’ করে টাকা পাইতাম। কিন্তু এবার সারারাত মাছ মাইরা এক হাজার টাকার মাছও পাই না। নৌকা ও জাল ভাড়া দিয়ে আমাদের আর কিছুই থাকে না। মাছ মারা বাদ দিয়া দিছি, ভাবছি শহরে কোথাও গিয়ে দিনমজুরির কাজ করবো। আমার মত হাজার হাজার জেলের একই দশা।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত দে বলেন, এবছর প্রজননের সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাছের বংশবৃদ্ধি হয়নি। এছাড়া নদী খাল ও বিলে বিভিন্ন বর্জ্য দ্বারা ভরাট হয়ে মাছের আবাসস্থল নষ্ট করছে। সেই সাথে আমাদের জেলেদের অনেকেই মশারী জাল, চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করে পোনাসহ মাছের বংশ নির্বংশ করে দিচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আর হাওরে মাছ না থাকায় এমনিতেই জেলেরা হাওরে কম যাচ্ছে। তবে পোনা মাছ ধরা বন্ধ ও জমিতে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে কৃষকদের সচেতন হতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App