×

ফিচার

সৌদি আরবের ‘সাম্মাম’ ফল ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৫:২১ পিএম

সৌদি আরবের ‘সাম্মাম’ ফল ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ

খুলনার ডুমুরিয়ায় সৌদি আরবের মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। ছবি: শেখ মাহাতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা)

সৌদি আরবের ‘সাম্মাম’ ফল ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ

খুলনার ডুমুরিয়ায় সৌদি আরবের মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। একই সঙ্গে করা হয়েছে বাংলা লিংক জাতের তরমুজ চাষও। এরইমধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন সাম্মাম ফল ও তরমুজ চাষ প্রকল্প দেখতে এবং নতুন ফল সম্পর্কে জানতে অনেকেই ভিড় করছেন ক্ষেতে। নতুন ফল দেখতে এসে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন উন্নত মানের বীজ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচর্যার কারণেই সাম্মাম ফল ও তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডার পাড়া ইউনিয়নের ঘোনা বান্দা গ্রামে বুদ্ধিশ্বর রায় দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ১ বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও বাংলা লিংক নামে তরমুজ চাষ করেন একই ইউনিয়নের মিন্টু ও চাষের প্রথম বছরই ওই দুই কৃষক ব্যাপক সফলতা পান। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি থেকে যাবতীয় খরচ বাদে ৪ লাখ টাকার উপর তাদের আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্মাম সৌদি আরবের একটি পুষ্টিকর ও মিষ্টি জাতের ফল। এরইমধ্যে সাম্মাম ফলটি স্থানীয় মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ফলের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরের অংশ লাল। বীজ বপনের দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সাম্মাম গাছে ফল আসে। তিন মাসের মধ্যে এ ফল পরিপক্ক হয়। এ ফলটি জমির মাটির মধ্যে ও মাচা তৈরি করে চাষ করা যায়।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সিও আছে এই ফলে। আরো আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি।

উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে রাজেন্দ্র মল্লিক সাম্মাম ফল, তরমুজসহ নানা প্রকার সবজি আবাদ করতে ১ বিঘা জমি বার্ষিক চুক্তিতে তারা ইজারা নেন। সেখানে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প নামে একটি খামার গড়ে তুলেন। ওই কৃষি প্রকল্পের মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে আড়াই বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও ৪-৫ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। বাকি জমিতে তারা নানা প্রকারের সবজি চাষ করেন।

ডুমুরিয়া বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সাম্মাম ফল আর তরমুজের খেত। যে দিকে দৃষ্টি যায় সাম্মাম আর তরমুজ চোখে পড়ছে। সড়কের পাশে কৃষি প্রকল্প হওয়ায় আগত ছোট-বড় সবার নজর কাড়ছে। এরই মধ্যে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। একদিকে গাছের পরিচর্যা অন্যদিকে তরমুজ ও সাম্মাম ফল কাটা শুরু হওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে বিক্রিতে এই দুটি ফলে লাভ বেশি হওয়ায় এরইমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতে শুরু করছেন। এখান থেকে তারা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। তবে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় বেজায় খুশি কৃষক।

সৌদি আরবের ‘সাম্মাম’ ফল ডুমুরিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ

কৃষক বুদ্ধিশ্বর রায় আমাদের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি শেখ মাহতাব হোসেন কে জানান, সাম্মাম ফলটি মূলত সৌদি আরবের হলেও তারা ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় পদ্ধতিতে চারা করে আবাদ করেন। ১ বিঘা জমির মধ্যে সাম্মাম ফল ও ৪-৫ বিঘা জমিতে বাংলা লিংক জাতের তরমুজের প্রায় ১ হাজার চারা রোপণ করা হয়।

সাম্মাম ফল প্রতি ১০ গ্রাম বীজ দিয়ে ১৫ শতক জমি করা যায়। একইভাবে তরমুজও। প্রায় ৪-৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ চাষ করতে সেচ, বীজ, চারা রোপণ, জমি ইজারা, পরিচর্যা, সারসহ অন্যান্য খরচ হয় তাদের প্রায় ২-৩ লাখ টাকা। এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকার সাম্মাম ফল বিক্রি করা হয়েছে। আর ৫০-৬০ হাজার টাকার উপর বিক্রি হয়েছে তরমুজ। তিনি আশা করছেন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জমির বেশিভাগ সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি হবে। সব মিলিয়ে সাম্মাম ফল বিক্রি হবে ৩ লাখ টাকার উপর। আর তরমুজ বিক্রি হবে ৩ লাখ টাকার ও বেশি। খরচ বাদে এই দুই ফল থেকে ৪ লাখ টাকার উপর আয় হবে বলে তারা আশা করছেন।

কৃষক মিন্টু বলেন, সাম্মাম ফলের তেমন একটা রোগ বালাই নেই, গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়। আর এ ফল গাছের সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব।

তিনি আরও জানান, একেকটি সাম্মাম ফল দেড় থেকে দুই কেজির উপরে হয়। প্রতি কেজি সম্মাম ফল পাইকারি দেড় শ এবং খুচরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। পাশাপাশি তরমুজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।

মিন্টু আরও বলেন, এই মাটিতে সাম্মাম ফল ও তরমুজ চাষ নিয়ে শুরুতে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক পরামর্শে ও নিজেদের সঠিক ভাবে পরিচর্যায় উৎপাদনে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। বীজ বপন থেকে শুরু করে পরিচর্যার ওপর সার্বিকভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া সময়মতো জৈব সার দেয়া হয়েছে। প্রায় তিন মাস যেতে না যেতেই সাম্মাম ও তরমুজ পরিপক্ব ফলে রূপ নেয়। স্থানীয় পর্যায়ে এই ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। নতুন জাতের এই ফল চাষ করলে সবাই লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, মূলত সাম্মাম ফলটি সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে। আমাদের মাটি এ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষক মিন্টু সাম্মামের পাশাপাশি তরমুজ ও দেশীয় পদ্ধতি চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ফলন ভালো করতে সার্বিকভাবে তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করছি শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ ফল বিক্রি করে তারা অনেক লাভবান হবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App