×

বিনোদন

২১ ফেব্রুয়ারি ও জহির রায়হান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৩:০৮ পিএম

২১ ফেব্রুয়ারি ও জহির রায়হান
১৯৬৫ সালে জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনের পটভ‚মিতে ‘একুশে ফেব্রæয়ারি’ শিরোনামের চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন। একুশে ফেব্রæয়ারির পটভ‚মিতে ‘আরেক ফাল্গুন’ নামের তার একটি উপন্যাসও রয়েছে। জহির রায়হানের কাহিনী অবলম্বনে চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর ‘২১শে ফেব্রæয়ারি’ ছবিটির চিত্রনাট্যও তৈরি করেন। কিন্তু নির্মাণের অনুমতি দেয়নি পাকিস্তান সরকার। এমনকি এফডিসিতে জমা দেয়া চিত্রনাট্যও ফেরত দেয়া হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন, এখনো এফডিসির পুরনো কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করলে পাওয়া যেতে পারে সেই চিত্রনাট্য। ২১ ফেব্রæয়ারি নিয়ে পূর্ণদের্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে না পারলেও ১৯৭০ সালে ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন জহির রায়হান। এ চলচ্চিত্রটি নানা কারণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের মাত্র কয়েক মাস আগে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ছিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বড় প্রেরণা। জহির রায়হান এ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন একুশের কালজয়ী গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরে, আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরী রচিত গানটি পরে একুশের গান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই গানটিকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার পেছনে ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে। এ ছাড়া চলচ্চিত্রটিতে ব্যবহৃত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার রেডিও-টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করে। তার মাত্র কয়েক বছর পর জহির রায়হান গানটি ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এ ছাড়া ছবিটিতে ব্যবহার করা কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এবং খান আতাউর রহমানের বিখ্যাত গান ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ দারুণ আলোচিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দেড় মাস পরে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে মিরপুর থেকে নিখোঁজ হন জহির রায়হান। থেমে যায় এক লড়াকু যোদ্ধার লড়াই। জহির রায়হান চলে যাওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশ পেরিয়েছে ৪৫ বছর। পাকিস্তান সরকারের সময় একজন জহির রায়হান ২১ ফেব্রæয়ারি নিয়ে সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতা ভাষা আন্দোলনের মতো মহাকাব্যিক ইতিহাসকে নিয়ে কোনো সিনেমা নির্মাণ করতে পারেননি। যদিও দেশের একাধিক নির্মাতা বিভিন্ন সময় ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে নাসির উদ্দিন ইউসুফ, চাষী নজরুল ইসলাম, রোকেয়া প্রাচী অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১জন’ নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম, ‘গেরিলা’ নির্মাণ করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। রোকেয়া প্রাচী নির্মাণ করেন প্রামাণ্যচিত্র ‘বায়ান্নর মিছিলে’। অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ক্ষেত্রে প্রযোজকরা আগ্রহী হন না। কারণ ব্যবসায়িকভাবে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমি একটা চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। চিত্রনাট্যও তৈরি করা আছে। কিন্তু অর্থ সংকটের জন্য শুরু করতে পারছি না। একই রকম কথা বললেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তি উদ্যোগেও হতে পারে। তবে আমি মনে করি ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসা উচিত। ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলতি মাসেই ছবি নির্মাণের কথা ঘোষণা দিতে পারেন নন্দিত নির্মাতা ও অভিনেতা তৌকীর আহমেদ। এ প্রজন্মের অনেক নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও আগ্রহী ভাষা আন্দোলন নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে। তবে এই ছবিটি নির্মাণ করতে গেলে যে পরিমাণ আয়োজন সাজাতে হবে তার জন্য সরকারি সহযোগিতা খুবই জরুরি। অনেকেই মনে করেন সরকারি অনুদানে ভাষা আন্দোলন নিয়ে ছবি নির্মিত হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App