×

বিনোদন

ভাষার আগ্রাসন নিয়ে ‘নিখোঁজ সংবাদ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০২:০০ পিএম

ভাষার আগ্রাসন নিয়ে ‘নিখোঁজ সংবাদ’
‘আমিও অমলের মতো খাঁচায় বন্দি। আমার খাঁচাটাকে ডাকা হয় গ্লোবালাইজেশন নামে।’ নিখোঁজ সংবাদ নাটকের শেষের দিকে এই সংলাপের মধ্য দিয়ে যে ম্যাসেজটি দিতে চাওয়া হয় সেটিই এই নাটকের মূল প্রেক্ষাপট। হারানো শব্দের খোঁজে ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এবার মঞ্চে এসেছে নতুন নাটক ‘নিখোঁজ সংবাদ’। বসন্তের বাতাস গায়ে মেখে, রাজধানীর যানজট পেরিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় হাজির শতাধিক নাট্যদর্শক। নাট্যশালার প্রবেশদ্বারে ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের ব্যানারে লিখা রয়েছে কোকাকোলা নিবেদিত ‘নিখোঁজ সংবাদ’। এতে বোঝা গেল নাটকটি প্রযোজনা করছে কোকাকোলা। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক কোম্পানির প্রযোজনায় নাটকের প্রদর্শনী এটিই সম্ভবত প্রথম। তবে বিভিন্ন ইভেন্টে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে কিছু প্রমোশানাল নাটক হয়েছে। ‘নিখোঁজ সংবাদ’ বেশ আলোচনা তৈরি করেছে। মিলনায়তনের নাটক শুরুর আগে মঞ্চে এলেন বরেণ্য নাট্যজন তারিক আনাম খান। তিনি এই নাটকের প্রযোজনা উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তার কাছ থেকেই জানা গেলো ‘নিখোঁজ সংবাদ’ প্রযোজনা করছে কথা ও কাহিনী নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি স্পন্সর করছে কোকাকোলা। তবে নাট্যদলের নাম প্রচারণায় সেভাবে নেই কেন? সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলেননি। তারিক আনাম খান বলেন, ‘কথা ও কাহিনী নতুন একটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের থিয়েটারকে পেশাদারিত্বের জায়গায় নেয়ার জন্য এটা আমাদের ছোট্ট প্রয়াস।’ দীর্ঘদিন ধরেই থিয়েটারকর্মীদের দাবি পেশাদার নাট্যচর্চা। রেপার্টরি নাট্যদল বা নানাভাবে থিয়েটারে পেশাদারিত্ব তৈরির চেষ্টা ইতোপূর্বে হয়েছে। এবার সরাসরি কোনো কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় এল মঞ্চনাটক। বিষয়টিকে কেউ কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ তুমুল সমালোচনা করছেন। এবার আসা যাক ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটক প্রসঙ্গে। নাটকের শুরুতেই নাচের কোরিওগ্রাফি আর সঙ্গীতের মূর্ছনায় দর্শকের মনোজগতকে যেন অন্যলোকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। পুরো নাটকের মূল প্রেক্ষাপট বাংলা ভাষা থেকে হারিয়ে যাওয়া শব্দগুলোকে ফিরিয়ে আনা। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শব্দরাজ্যে প্রবেশ করার পর অভিমানের মুখোমুখি হয় রাজর্ষি। প্রত্যুৎপন্নমতি, মনোহরিণীসহ হারিয়ে যাওয়া অনেক শব্দ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সেখানে। বিদেশি ভাষার আগ্রাসনে বাংলা ভাষার অনেক শব্দ অভিমান করে শব্দরাজ্যে পড়ে আছে। রাজর্ষি চাই, সেই শব্দগুলো ফিরিয়ে আনতে। রাজর্ষি বুঝতে পারে বিশ্বায়নের আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ও আত্মপরিচয়। রাজর্ষি বলে, ‘মাতৃভাষা আমাদের আত্মপরিচয়। ভাষা যদি হারিয়ে ফেলি তবে তো আমাদের কিছুই থাকে না।’ ‘আমিও অমলের মতোই খাঁচায় বন্দি। আমাকে খাঁচায় বন্দি করে তার নাম দেয়া হয়েছে গ্লোবালাইজেশন।’ অভিমানের সঙ্গে রাজর্ষির সংলাপ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক ‘নিখোঁজ সংবাদ’। ভাষা-সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটি রাজর্ষির একার নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক। পুরো নাটক দেখার পর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কোকাকোলার মতো একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এর মতো একটা শেকড় সন্ধানী নাটক কেন? এ যেন সাম্রাজ্যবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নাটক। পুঁজিপতিদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কি করা যায়? নাটকের প্রদর্শনী শেষে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পুরো নাটকটি দেখেছি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য সবগুলো সংলাপ ভালোভাবে শুনতে পারিনি। কিন্তু নাটকের মূল বক্তব্যটা বুঝতে পেরেছি। আমরা আসলেই নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছি। জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে ভাষা-সংস্কৃতি আমাদের আত্মপরিচয়। বিশ্বায়নের আগ্রাসন থেকে নিজেদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করা একজনের কাজ নয়। সবাই মিলে যেন আমরা নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি।’ ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকটি লিখেছেন গাউসুল আলম শাওন, রেজা আরিফ ও আদনান আবিদ খান। নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ। উপদেষ্টা নির্দেশনা তারিক আনাম খান। নাটকটিতে কয়েকটি নাট্যদল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিনয় করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App