×

বিনোদন

মুখোমুখি দেশি ছবি ও যৌথ প্রযোজনার ছবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম

মুখোমুখি দেশি ছবি ও যৌথ প্রযোজনার ছবি
কোনটা বেছে নেবেন দর্শকরা? লড়াইয়ের ময়দান প্রস্তুত। হল দখলের চেষ্টা প্রকাশ্য। আয়-রোজগারে কে দেখাবেন চমক? এমন ঘটনা ঘটেছে আগেও। ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশি ছবিই। ফিরে দেখলেন স্বাক্ষর শওকত
২০১৩ সাল থেকে যৌথ প্রযোজনার ছবির নির্মাণ পুনরায় শুরু হয়। মাঝখানে অনেকদিন এই ধারার ছবি নির্মিত হতে দেখা যায়নি। অশোক পাতি পরিচালিত ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ থেকে নতুন করে যৌথ প্রযোজনার পথচলা শুরু হয়। অঙ্কুশ ও শুভশ্রী অভিনীত ছবিটি বাংলাদেশে খুব ভালো ব্যবসা করে। এই সফলতার পথ ধরে একের পর এক যৌথ প্রযোজনার ছবি তৈরি হতে থাকে। গত তিন বছরে রেকর্ডসংখ্যক যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মিত হয়েছে। ছবিগুলোর সবকটি বাণিজ্য সফলতা পেয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। তবে কিছু ছবি চলার মতোই চলেছে। বলতে গেলে দর্শকদের ঢল নেমেছে সেসব ছবি দেখার জন্য। সাফল্য-ব্যর্থতায় মেশানো এই যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোর অধিকাংশই এককভাবে মুক্তি পেয়েছে। যে সপ্তাহে দেশি ছবি ছিল না সে সপ্তাহে নির্বিঘেœ মুক্তি পেয়েছে যৌথ প্রযোজনার ছবি। ব্যতিক্রম কেবল ঈদে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছরের ঈদেই যৌথ প্রযোজনার ছবি মুক্তি পেয়েছে। সাধারণ শুক্রবারে শুধু একবারই দেশি ছবির সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি। সেটা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সে দিন মুক্তি পেয়েছিল তিনটি ছবি। সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী টু’ এবং জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘অনেক দামে কেনা’র সঙ্গে একটি যৌথ প্রযোজনার ছবিও এসেছিল। গৌতম ঘোষ পরিচালিত তৃতীয় যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শঙ্খচিল’ মুক্তি পেয়েছিল ১২ এপ্রিল। দুই দেশি বাণিজ্যিক ছবির মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাই ছিল আলোচিত। অফট্র্যাক ঘরানার ‘শঙ্খচিল’ প্রসেনজিতের অভিনয়ের গুণে কিছুটা আলোচিত হলেও সিনেমা হলে কোনো আলোড়ন তুলতে পারেনি। ফলে যৌথ প্রযোজনার ছবির কারণে দেশি ছবির ব্যবসার লোকসান হয়েছে তেমন কথা বলা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো যৌথ প্রযোজনার ছবির সঙ্গে টক্কর বাঁধছে দেশি ছবির। উত্তম আকাশ পরিচালিত ‘আমি নেতা হবো’ মুক্তি পেয়েছে গতকাল শুক্রবার। একই দিনে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নূরজাহান’ও মুক্তি পেয়েছে। অভিমন্যু নামে কলকাতার এক তরুণ নির্মাতা ‘নূরজাহান’-এর নির্দেশক। দুুটি ছবির মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে কিছু মজার ব্যাপার জড়িয়ে রয়েছে। ‘নূরজাহান’ জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি। দেশের প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থার ছবি এটি। তাই ছবিটি আলোচিত। শিশুশিল্পী পূজা চেরি ‘নূরজাহান’-এর পূর্ণ নায়িকা হয়েছেন। কলকাতার এক তরুণ অদৃত ছবির নায়ক। ‘নূরজাহান’ নির্বিঘ্নে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। হুট করে এখানে ঢুকে পড়েছেন ‘আমি নেতা হবো’। সেলিম খান নামে এক নবীন প্রযোজক পুঁজি ঢালছেন ‘আমি নেতা হবো’ ছবিতে। যার সঙ্গে জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চলচ্চিত্র ফোরামের দুই নেতা আব্দুল আজিজ ও সেলিম খানের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল আগে থেকেই। একই দিনে নিজেদের ছবি মুক্তি দিয়ে তারা প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রশ্ন আসতে পারে পাল্লা কোন দিকে ভারী? নিঃসন্দেহে ‘আমি নেতা হবো’র সম্ভাবনাই উজ্জ্বল। কারণ শাকিব খান আছেন ‘আমি নেতা হবো’র নাম ভ‚মিকায়। যিনি জাজের দুটি ঈদের ছবিতে সুপারহিট সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন। সেই জাজকেই এবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন শাকিব খান। তার পাশে আছেন বিদ্যা সিনহা মিম। যার সঙ্গে শাকিব জুটি বাঁধলেন প্রায় নয় বছর পর। দর্শকদের এই জুটির প্রতি আগ্রহ থাকবে পুরো ষোলআনা। ‘আমি নেতা হবো’র পরিচালক উত্তম আকাশ। তিনি আগেও শাকিব খানকে নিয়ে একাধিক ছবি তৈরি করেছেন। যার মধ্যে হিট-ফ্লপ দুধরনের ছবিই রয়েছে। দেখার বিষয় এবার এই পরিচালক কতখানি সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেন। কেননা আড়াই দশকের ক্যারিয়ার যার সেই নির্মাতার কাছে বাংলা ছবির বাজার একখানা হিট ছবির আশা করতেই পারে! দুই ছবির লড়াইয়ের বাইরে ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচনা আছে দেশি ছবির সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার ছবির মুক্তিতে লাভ-ক্ষতি নিয়ে। একুশে ফেব্রæয়ারির মতো ছুটির দিনের সুবিধা নিয়ে দেশি ছবির একক মুক্তিতে লাভবান হতে পারবেন শাকিব খানের প্রযোজক। কিন্তু যৌথ প্রযোজনার ছবি আগে থেকেই বিশেষ দিনে বসে থাকায় এই লাভের মুখ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না উত্তম আকাশ। বরং বলা চলে ভারতীয় শিল্পী আধিক্যে নির্মিত ‘নূরজাহান’ দেশি ছবির ব্যবসায় বাগড়া দিল। এর আগেও এমনটা ঘটেছে। এককভাবে মুক্তি না দিয়ে ‘শিকারী’, ‘বাদশা’, ‘রক্ত’, ‘নবাব’ মুক্তি পেয়েছিল দেশি ছবির সঙ্গে। সেসব ছবি সাফল্যের মুখ দেখলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘রাজনীতি’ ‘সম্রাট’, ‘মেন্টাল’-এর মতো ছবি। যৌথ প্রযোজনার ছবির সঙ্গে দেশি ছবির এই বিরোধ কখনোই ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টদের কাম্য নয়। কিন্তু ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, ঈদ ইত্যাদি উৎসবে দর্শক ধরার জন্য কোনো প্রযোজক ছাড় দিতে রাজি নন। তাই মুক্তির তারিখ নিয়ে বাধে গোলমাল। দর্শকরা হয়ে পড়ে বিভক্ত কোন ছবিটি দেখবেন দেশি পুঁজির ছবি নাকি দুই দেশের সম্মিলিত পুঁজির ছবি। এই দোলাচল দর্শকদের মধ্যে দেখা যাবে চলতি সপ্তাহেও। ‘আমি নেতা হবো’ নাকি ‘নূরজাহান’ কে হাসবে শেষ হাসি?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App