×

বিনোদন

ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৪:২২ পিএম

ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল

তুর্কী সিরিজ- দিরিলিস এরতুগ্রুল

ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল
ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল

অধ্যাপক ড. শাহীদ মিও

ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল

অনেকেই সন্তানের নাম রাখছেন আর্তুগ্রুল

ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল

অধ্যাপক ড. ইকরামুল হক

ভারতে যেভাবে জনপ্রিয়তা পেল দিরিলিস আরতুগ্রুল
গত দু-তিন বছরে কাশ্মীরের সোপোর, পুলওয়ামা বা বারামুলা-তে জন্ম নেয়া অনেক শিশুর নাম রাখা হয়েছে আরতুগ্রুল। অথচ এর আগে কখনও এমনটা দেখা যায়নি। এমনকি শীতকালে দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরের শিশু ও তরুণদের মাথায় এরতুগ্রুল স্টাইলে'র টুপিও। গাঢ় ওয়াইন-রঙা এই ধরনের মাথা ও কান-ঢাকা ফার বা পশমী টুপি তুরস্কে খুব জনপ্রিয় হলেও কাশ্মীরে তা কিন্তু কখনওই পরার কোন চল ছিল না। আর এই সব পরিবর্তনের পেছনেই আছে একটি অসম্ভব জনপ্রিয় তুর্কী টেলি-ড্রামা, যার নাম 'দিরিলিস আরতুগ্রুল'। সিরিজটি এত জনিপ্রিয়তা কীভাবে পেল তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। মুসলিম বিশ্বের নানা দেশে দারুণ জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর এই এপিক তুর্কী ড্রামাটি এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলমানদের মধ্যেও ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাঁচটি সিজনে পরিব্যাপ্ত ৪৪৮টি এপিসোড বা পর্বের এই বিশাল উপাখ্যান অনেকে মাত্র এক-দেড় মাসের মধ্যেও পুরোটা দেখে ফেলেছেন। ভারতে এরতুগ্রুলের প্রভাব নিয়ে গবেষণা আরতুগ্রুল কীভাবে ভারতে এতটা জনপ্রিয়তা পেল, তা নিয়ে বিশদে সমীক্ষা করেছেন হায়দ্রাবাদের মৌলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন অধ্যাপক - সমাজতত্ত্ব বিভাগের শাহীদ মিও এবং ইতিহাস বিভাগের ইকরামুল হক। অধ্যাপক শাহীদ মিও বলেন, "কাশ্মীরে ইন্টারনেটের কী হাল সবাই জানেন। আমি যখন কাশ্মীরি ছাত্রদের আজকাল অনলাইনে ক্লাস নিই, ব্যান্ডউইথের সমস্যায় তারা আমাকে ঠিকমতো শুনতেই পান না। অথচ সেই একই ছাত্ররা আমাকে বলেন, আরতুগ্রুলের একটা এপিসোডও ছাড়া যাবে না। দুর্বল নেট নিয়েই, বাফারিং সহ্য করেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন মোবাইল ফোনে এই তুর্কী নাটক দেখার জন্য!" [caption id="attachment_245866" align="alignnone" width="990"] অনেকেই সন্তানের নাম রাখছেন আর্তুগ্রুল[/caption] বস্তুত ২০১৭ সালের অক্টোবরে নেটফ্লিক্স তুরস্কের এই ঐতিহাসিক ড্রামাটি অনলাইনে 'স্ট্রিম' করতে শুরু করার পরই ভারতে তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল সাড়া ফেলে। অধ্যাপক ইকরামুল হকের কথায়, "আজকের ভারতবর্ষে মুসলিমরা যে আত্মপরিচয়ের সঙ্কট বা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছেন, সেই শূন্যতার জায়গা থেকেই হয়তো তারা ভিনদেশি এই ঐতিহাসিক উপাখ্যানের সঙ্গে নিজেদের অনেকটা 'রিলেট' করতে পারছেন - আর সে কারণেই আরতুগ্রুল এদেশেও এতটা জনপ্রিয় হয়েছে।" কিন্তু ভারত ও তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন অত্যন্ত খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন তুরস্কেরই একটি টেলি-ড্রামা ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে এতটা সাড়া ফেলার আর কী কোনো রহস্য রয়েছে? [caption id="attachment_245864" align="alignnone" width="1000"] অধ্যাপক ড. শাহীদ মিও[/caption] গবেষণা রিপোর্টটির অন্যতম লেখক ড. হক বলেন, "একটা ফ্যাক্টর তো এটার টানটান গল্প, নাটকীয়তায় ভরা প্লট, দারুণ অভিনয় আর দুর্ধর্ষ স্পেশাল এফেক্টস। আরতুগ্রুল একবার দেখতে বসলে সেটা ছেড়ে ওঠাই মুশকিল। ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণে ভারতীয় মুসলিমরাও হয়তো এই তুর্কী গল্পটা ভালবেসে ফেলছেন, একাত্ম বোধ করছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি এর মাধ্যমে তাদের কোনও মুগ্ধতা তৈরি হচ্ছে। আসলে এটা শেষ পর্যন্ত ড্রামা-ই, কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা কূটনীতির সঙ্গে এর তেমন সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না। https://twitter.com/Riy/status/1261050007509184520?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1261050007509184520%7Ctwgr%5Eshare_3&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.bbc.com%2Fbengali%2Fnews-54371970 ভারতে যেভাবে সিরিজটি জনপ্রিয়তা পেল গত মে মাসের মাঝামাঝি আরতুগ্রুলের প্রযোজক সংস্থা টিআরটি-র একজন সিনিয়র কর্মকর্তা, রিয়াদ মিন্টি একটি খুব ইন্টারেস্টিং টুইট করেন। গুগল ট্রেন্ডস থেকে নেওয়া একটি গ্রাফ শেয়ার করে তিনি লেখেন, "ভারতীয়রা এখন ইউটিউবে শাহরুখ খানের চেয়েও অনেক বেশি সার্চ করছে আরতুগ্রুলের ভিডিও!" [caption id="attachment_245868" align="alignnone" width="1011"] অধ্যাপক ড. ইকরামুল হক[/caption] ড. শাহীদ মিও কিন্তু এই পরিসংখ্যানে এতটুকুও বিস্মিত নন। তিনি বলেন, "এই সিরিজের বহু দর্শকের সঙ্গে কথা বলে আমরা যে ধারণাটা পেয়েছি, তাহলো এই মুহুর্তে মুসলিমরা ভারতে যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায়তায় ভুগছেন, সেই সঙ্কট থেকে তাদের একটা উত্তরণের স্বপ্ন দেখাচ্ছে এই সিরিজ।" ভারতের হিন্দুরা কীভাবে দেখছে এরতুগ্রুলকে? হায়দ্রাবাদের দু'জন গবেষকই জানাচ্ছেন যে ভারতে হিন্দুদের মধ্যেও কিন্তু এই তুর্কী সিরিজটি কম জনপ্রিয় নয়। শাহীদ মিও আর ইকরামুল হক দু'জনের অভিজ্ঞতাই বলছে, তাদের হিন্দু বন্ধুবান্ধব-সহকর্মী বা পরিচিতজনদের মধ্যেও অনেকেই 'দিরিলিস: আরতুগ্রুল' এর মধ্যেই আদ্যোপান্ত দেখে ফেলেছেন। তারা প্রায় প্রত্যেকেই বলছেন, তুর্কী ইতিহাসের গল্পটা এখানে খুব বড় কথা নয় - আরতুগ্রুলের নাটকীয়তা, প্লট বা মেকিংয়ের জন্যই তারা এই সিরিজ মাঝপথে ছাড়তে পারেননি। তবে আরতুগ্রুলকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের ধর্মীয় লড়াইও কিন্তু থেমে নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App