রাজধানীর পূর্ব রায়েরবাজার এলাকার একটি মেস থেকে মাসুদুল মাহমুদ রুহান (২৭) নামের এক চলচ্চিত্র প্রযোজক ও নির্মাতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ‘রেডরাম’ , ‘আমি কি তুমি’ এবং ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’সহ আরো বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন।

বুধবার (৮ মে) দিবাগত রাত ১ টার দিকে হাজারীবাগ থানা পুলিশ পূর্ব রায়েরবাজার হাই স্কুলের ঢালে ১১৬/৩ নম্বর একটি বাড়ির ষষ্ঠ তলার মেস থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

লাশ উদ্ধারকারী হাজারীবাগ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শাওন কুমার বিশ্বাস জানান, গত ১ মাস আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় রুহানের। তবে এর আগে থেকেই গত দু মাস যাবত পূর্ব রায়েরবাজারের ওই মেসে থাকতে শুরু করেন রুহান। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শুটিংয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার আসা যাওয়া বেশি ছিল। যখন ঢাকায় ফিরতেন তখন ওই মেসে গিয়ে থাকতেন। তার রুমমেট বুধবার রাতের দিকে মেসে ফিরে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন, ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন রুহান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আশপাশে লোকজনকে ডেকে আনেন। পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে মধ্যরাতে সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ এবং পারিবারিক বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্থ হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এ প্রযোজক। বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বইছে শোকের ছায়া। তার পরিচিত অনেকেই বলছেন এটা আত্মহত্যা। তবে পুলিশি রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না তার মৃত্যুর কারণ। কিন্তু রুমেল যে মানসিক ভাবে হতাশায় ভুগছিলেন তা বোঝা যায় তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে।

মৃত্যুর আগে তিনি সর্বশেষ শনিবার (৪ মে) একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, আমার চেনা পৃথিবীর বুকে যেমন তুমি নাই, তোমার বুকেও আমি নাই! তাহলে কেন সেদিন বলেছিলে? আমার সঙ্গেই এই জন্ম কাটিয়ে দেবে? ভুল বুঝিও না। আমি দোষ দিচ্ছি না। জাস্ট বললাম আর কি!

রূহানের এই অনুভূতির পোস্টে তাকে অকালে হারিয়ে শোকবার্তা দিচ্ছেন সহকর্মী-বন্ধুরা।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল মর্গে মৃত রুহানের খালাতো ভাই মনজুরুল হাসান অলি জানান, গত দুই থেকে আড়াই বছর আগে বিয়ে করেন রুহান। স্ত্রীকে নিয়ে রায়েরবাজার শেরেবাংলা রোডে থাকতেন। তবে মাসখানেক আগে তাদের ডিভোর্স হয়। এরপর থেকেই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন রোহান।

ডিভোর্সের কিছুদিন আগে থেকেই মেসে থাকা শুরু করে সে। গত রাত ১ টার দিকে রুহানের সহকর্মীদের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পান তারা। রুহান ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেও তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।