×

বিনোদন

বুবলীকে নিয়ে গুজব

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম

বুবলীকে নিয়ে গুজব

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস এবং শবনম বুবলীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। আর তাদের দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান।

২০০৮ সালে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাসের সঙ্গে অভিনেতা শাকিব খানের বিয়ে হয়। কিন্তু দুজনে খবরটি গোপন রাখেন। ছয় মাস বয়সী সন্তান আব্রাহামকে নিয়ে অপু বিশ্বাস টেলিভিশন লাইভে এলে তখন জানা যায়, তারা সন্তানের মা–বাবা। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। অপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শাকিবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় বুবলীর। 

২০২২ সালের অক্টোবরে শাকিব-বুবলী দুজনে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান, শেহজাদ খান বীর নামে তাদের একটি পুত্রসন্তান আছে। এরপর বুবলী আরেক পোস্টে জানান, ২০১৮ সালের ২০ জুলাই বিয়ে করেন তারা। ২০২০ সালের ২১ মার্চ তাদের সন্তান শেহজাদ খান বীরের জন্ম হয়। শাকিব ও বুবলীর বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে গণমাধ্যমে তাদের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য পাওয়া যায়। শাকিব দাবি করেন তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। অপরদিকে বুবলী একাধিকবার জানিয়েছেন তাদের মধ্যে কোনো বিচ্ছেদ ঘটেনি। তারা সময় নিচ্ছে। 

গেলো বছর থেকে এই দুই অভিনেত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি জবাব দিয়েছেন তারা। এমনকি দেয়া হয়েছে মামলার হুমকিও।

সম্প্রতি শাকিব খানের পারিবারিক পর্যায়ে আবারো বিয়ের খবর প্রচারিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শাকিব খানের পরিবার অপু বিশ্বাস ও বুবলীকে শাকিবের বাসায় ঢুকতে নিষেধ করেছেন। এই খবর প্রকাশের পর, ইন্টারনেটে দুই নায়িকার ভক্তদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য ও তর্ক-বিতর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী সম্পর্কে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশেষ করে ‘দেবদাস’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই চিত্রনায়িকাকে টার্গেট করে বিভিন্ন অপপ্রচার করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন: জানা গেল অপুর প্রথম বয়ফ্রেন্ডের নাম!

গত ২৮ এপ্রিল ‘পরকীয়ার কারণে বুবলীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে কন্যা সন্তানসহ ডিভোর্স হয়’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এমন ফটোকার্ড আরটিভির ফেসবুক পেজে না পেয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে একাধিক নেটিজেন রিউমর স্ক্যানারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরবর্তীতে এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, আরটিভি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি, বরং আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিন্ন এক ফটোকার্ড বিকৃতি করে উক্ত ফটোকার্ড তৈরি করা হয়েছে। আর এই ফটোকার্ড প্রথম প্রচার হয়েছে ‘দেবদাস’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে। গত ৩০ এপ্রিল এই বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

পরবর্তীতে দেবদাস নামের ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিজেকে অপু বিশ্বাসের সমর্থক দাবি করে এই পেজের মালিক। উক্ত ফেসবুক পেজটি থেকে আবারো এমন গুজব ছড়াতে পারে এমন ধারণা থেকে পেজটি নজরে রাখে রিউমর স্ক্যানার টিম। একদিন পরেই এই ধারণা বাস্তবেও রূপ নেয়।

গত ২৯ এপ্রিল একই পেজ থেকে অপু বিশ্বাসকে নিয়ে আবারো অপপ্রচার চালানো হয়। এবারো ব্যবহার করা হয় আরটিভির ফটোকার্ড। এডিটের মাধ্যমে আরটিভির ফটোকার্ডের শিরোনাম বদলে আমার সঙ্গে পরিচয় হবার আগেই বুবলি কন্যা সন্তানের মা – শাকিব খান’ শীর্ষক শিরোনাম দিয়ে চালানো হয় এই অপপ্রচার। গত ২ মে এই নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

গত ৩০ এপ্রিল আবারো আরটিভির ফটোকার্ড নকল করে দেবদাস নামের পেজ থেকে বুবলী সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো হয়। এবারো আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের শিরোনাম বদলে ‘বুবলি সিনেমায় থাকার জন্য তাকে অনেকের বেড রুমেও দেখা যায়’ শিরোনাম দেয়া হয়। গত ৪ মে এই বিষয়ে ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

আরো পড়ুন: চমকে দিলেন বাঁধন-লামিয়া

এরপর অবশ্য দেবদাস পেজটি থেকে এই সংক্রান্ত পোস্টটি ডিলিট করে দেয়া হলেও ততক্ষণে ভুয়া এই ফটোকার্ডটি ব্যাপকভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

একই পেজ থেকে পরপর তিনটি গুজব শনাক্তের পর গুজব ছড়ানোর কৌশল পরিবর্তন করে দেবদাস পেজ। গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল বুবলীকে নিয়ে ছড়ানো গুজবের দুইটি ফেসবুক পোস্ট এডিট করে ফটোকার্ড বদলানো হয়। তথ্য একই রেখে ফটোকার্ডগুলো থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির লোগো সরিয়ে দেয়া হয়। 

এরপর থেকে নতুন কৌশলে গুজব ছড়াতে থাকে পেজটি থেকে। উল্লেখিত তিনটি ছাড়াও বুবলী সম্পর্কে আরো অনেক ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয় এই পেজে। গত ২৮ এপ্রিল ১টি, ২ মে ১টি, ৩ মে ১টি, ৪ মে ২টি (১,২), ৫ মে ৩টি (১,২,৩), ৬ মে ২টি (১,২) এবং ৭ মে (প্রতিবেদনটি লেখার সময় অবধি) ১টি ভুয়া ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়। সবগুলো ফটোকার্ডই বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির ফটোকার্ডের আদলে তৈরি করা হয়েছে। তবে, সুকৌশলে ফটোকার্ডগুলো থেকে আরটিভির লোগো বাদ দেয়া হয়েছে। আরটিভির লোগোর বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘Dtv news 24’ নামের একটি লোগো, যার কোনো বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই। 

দেবদাস নামের আলোচ্য ফেসবুক পেজ থেকে চিত্রনায়িকা বুবলীকে নিয়ে সর্বাধিক সংখ্যক ১৪টি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়। তবে শুধু বুবলী নয় ক্রিকেটার লিটন দাস ও অভিনেতা মিশা সওদাগরকে নিয়েও একটি ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার করা হয় এই পেজ থেকে। গত ৪ মে দেবদাস পেজ থেকে প্রচারিত একটি পোস্ট দাবি করা হয় লিটন দাস সম্পর্কে মিশা সওদাগর “দীর্ঘ এক বছর আমরা লিটন দাসের খেলা দেখছি. তার থেকে দেশের মহিলা ক্রিকেট টিমরাও ভালো খেলে।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। উক্ত পোস্টে আরটিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ড যুক্ত করা হয়। তবে এই ফটোকার্ডে আরটিভির লোগো মুছে দিয়ে “বি’ডি নিউজ” নামের একটি লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়া শুধু ফটোকার্ড নয় ভিডিও বিকৃতি করেও বুবলীর নামে ছড়ানো হয়েছে গুজব। গত ৫ মে দেবদাস পেজে প্রচারিত এক পোস্টে দাবি করা হয়, এক বৃদ্ধ লোকের সঙ্গে পরকীয়া করতে গিয়ে বুবলী ধরা খেয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিন্ন এক নারীর মুখমণ্ডলে বুবলীর ছবি বসিয়ে এই ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।

দেবদাস পেজের নেপথ্যে কে?

আলোচ্য ফেসবুক পেজটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পেজের অ্যাবাউট সেকশনে একটি ব্রডকাস্ট চ্যানেলের উল্লেখ আছে, যার নাম ‘এস.এ.আকাশ’। পেজের ইউআরএলেও (Saakash111) একই নাম দেখা যায়। আরো তথ্য পেতে পেজের ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, পেজটির নাম কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে, যার মধ্যে একটি নাম ছিলো ‘Loveless Akash’ এবং পেজটি বাহারাইন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। পেজে এবং ব্রডকাস্ট চ্যানেলে একই ব্যক্তির মুখের ছবি একবার পাওয়া যায়।

এই পর্যবেক্ষণ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, বাহারাইনে বসবাসকারী আকাশ নামধারী একজন ব্যক্তি ‘দেবদাস’ নামের আলোচ্য পেজের পেছনে রয়েছেন। তিনিই পেজটি পরিচালনা করছেন। তবে আমাদের অনুসন্ধানে আকাশ নামের ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

আরো পড়ুন:

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App