×

বিনোদন

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছন্দা সিনেমা হল, গড়ে উঠবে মাদরাসা

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০১ পিএম

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছন্দা সিনেমা হল, গড়ে উঠবে মাদরাসা

ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ, রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, মান্না, চিত্রনায়িকা শাবনুর, পপি, মৌসুমি, শাহনাজ, শাবানা, ববিতা, কবরি— এমন কারো সিনেমা নেই, যা নরসিংদীর ছন্দা সিনেমা হলে প্রকাশিত হয়নি। মানুষ লাইন ধরে টিকিট সংগ্রহ করে হুমড়ি খেয়ে পড়ত এই সিনেমা হলে।

কিন্তু কালের বিবর্তনে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার ছন্দা সিনেমা হলে ব্যবসায় ধস নামে। এখন সিনেমা হলটি বিক্রি হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ। এটি ভেঙে তৈরি হবে দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদরাসা।

একাধিক সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জানা যায়, হলটিতে আর সিনেমা প্রদর্শন করা হবে না। হলটি ভেঙে প্রতিষ্ঠা করা হবে ‘ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদরাসা’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ ও ওই মাদরাসার জিম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন। সিনেমা হলের জমিটি কিনতে ২০ লাখ টাকা বায়নাও করা হয়েছে।

সিনেমা হলের সামনে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিবৃন্দ নামে একটি ব্যানার সাঁটানো রয়েছে। ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ছন্দা সিনেমা হলটি মাদরাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা। সদকায়ে জারিয়ার এ মহৎ কাজে আপনাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। মাদরাসার রশিদ ছাড়া কোনোপ্রকার লেনদেন করবেন না।’

মালিকপক্ষ বলছে, করোনার পর থেকে নানা কারণে সিনেমা হলে দর্শকের উপস্থিতি কমেছে। ব্যবসায় নেমেছে ধস।

ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আগে হলটি ভালোই চলতো। পাঁচ-সাত বছর ধরে নানা কারণে আগের মতো আর চলে না। মাদরাসা-এতিমখানা ঘেঁষে সিনেমা হল। এখানে নাচগানের আওয়াজ আসে। মাদরাসার জায়গাও কম। তাই হয়ত হলটি কিনে নিয়েছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

‘ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদরাসা’র জিম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, জমির বায়না করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য বিত্তবানসহ সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্যও চাওয়া হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই জমির নির্ধারিত মূল্যের বাকি টাকা পরিশোধ করে মাদরাসা সম্প্রসারণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। দলিল করাসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হবে।

এদিকে নরসিংদীর প্রবীণ চলচ্চিত্র প্রযোজক শামসুর রহমান পিন্টু বলেন, দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শিল্প ক্রান্তিকাল পার করছে। ক্রমশঃ নিভে যাচ্ছে দেশের হলগুলোর রূপালী পর্দার আলো। নরসিংদীতে গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ। সর্বশেষ হাসনাবাদের ৯০ দশকের ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ছন্দা হলে সিনেমা দেখার জন্য মানুষ কী পরিমাণ পাগল ছিল, সেটা নিজ চোখে দেখেছি। কিন্তু আজকে সেই সিনেমা হলটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কী যে কষ্ট হচ্ছে, বলে প্রকাশ করতে পারব না।

ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, ঢিমেতালে নরসিংদীতে টিকে আছে দু-একটি সিনেমা হল। এরমধ্যে নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে একটিতে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবার হাতে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট থাকায় এখন সিনেমা, নাটকসহ পুরো চিত্তবিনোদন হাতের মুঠোয়, তাই এখন আর সিনেমা হলে যেতে হয় না। মোবাইল ফোনে সব মিলে যায়। সিনেমা হল ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে মাল্টিকমপ্লেক্স, গুদাম, গ্যারেজ, শপিংমল, কারখানা বা বেসরকারি ক্লিনিক।

নরসিংদীর এক হল মালিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, এখন নতুন সিনেমা হলে দু-একদিন চলে। কিন্তু ১০-১৫ বছর আগে ভালো মানের সিনেমা হলে তিন থেকে চার সপ্তাহ চলত। দর্শক কমত না। নরসিংদীতে ১৯টি সিনেমা হল ছিল। এখন দু-একটি ব্যতিত সব হল বন্ধ হয়ে গেছে। ছন্দ সিনেমা হলটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সিনেমা হলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি মোহাম্মদ ইমন খান, আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ রবিন জানান, বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তাদের অবস্থা শোচনীয়। মালিকপক্ষ ঠিকমত বেতন দিতে পারে না। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে। কেউ বেকার হয়ে যাচ্ছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ছন্দা সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুবেল আহমেদ বলেন, দীর্ঘ দিন লোকসান গুনে হলটি চলছিল। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে। লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে দু-একটি সিনেমা রিলিজ হতো, এখন মাসেও একটি হয় না। পুরাতন সিনেমা দিয়ে হল চলে না। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে তা দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারনেটে বা অন্যান্য মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই হলে তেমন কেউ সিনেমা দেখতে আসে না। নিরুপায় হয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App