×

বিনোদন

কেমন ছিল তারকাদের ছোটবেলার ঈদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম

কেমন ছিল তারকাদের ছোটবেলার ঈদ

ছবি: সংগৃহীত

বছর ঘুরে আবারো এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আর এই ঈদের আনন্দ ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মাঝেই ছড়িয়ে যায়।  সবার স্মৃতিতে ছোটবেলার ঈদ উজ্জ্বল হয়ে থাকে। ছোটবেলার এই স্মৃতি সহজে ভুলা যায় না। ব্যতিক্রম নেই তারকাদের ক্ষেত্রেও। কেমন ছিল তারকাদের ছোটবেলার ঈদ। তারকাদের ঈদের স্মৃতি তুলে ধরা হলো- 

মিশা সওদাগর

আমার বেড়ে উঠা পুরান ঢাকায়। আমি পুরোপুরি ঢাকার মানুষ। ঢাকাইয়া বলতে যা বোঝায় তাই। সেজন্য আমার ছোটবেলার ঈদের সব স্মৃতি ঢাকাকে কেন্দ্র করে। এই স্মৃতি আমার ভেতরে বেঁচে আছে, আজীবন থাকবে। ঈদের দিন কতরকম আনন্দই না করেছি ছোটবেলায়। ঈদের সালামি পেতাম বেশ। সালামি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে কত কি কিনে খেতাম! সালামির টাকা ফুরিয়ে গেলে বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করতাম কার বাসায় গেলে সালামি পাব, কার বাসায় গেলে খাবার খেতে পারব। ঈদের নামাজ পরে বন্ধুরা বাড়ির বাইরে সময় কাটাতাম। আইসক্রিম, ফুচকাসহ নানারকম খাবার খেতাম। ফেলে আসা দিনগুলো সত্যিই রঙিন ছিল।

তাহসান খান

কৈশোর-তারুণ্যে অভিনেতা গায়ক তাহসান খান ঈদের আগে খুঁজে খুঁজে কিনতেন পছন্দের গানের ক্যাসেট ও সিডি। প্রযুক্তির দাপটে ক্যাসেট-সিডি বিদায় নেয়ায় সেদিনগুলো দারুণ মিস করেন তাহসান। আর এখন তাহসানের ঈদের সকাল কাটে মেয়ে আইরা তেহরীম খানের সঙ্গে।

তাহসান বলেন, মেয়ের সঙ্গে থাকছি ঈদের সকালে, বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে। তাছাড়া আর কিছু করা হয় না। পুরনো সময়ের ঈদ স্মৃতি নিয়ে তিনি বলেন, “অনেক পার্থক্য খুঁজে পাই। তখন আমাদের ঈদ মানে ছিল নিউ মার্কেটে বা এলিফ্যান্ট রোডে ক্যাসেট এবং সিডি কিনতে যাওয়া। ঈদের দুই দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতাম। তখন অনেক অ্যালবাম রিলিজ হত। একদম ছোট ছিলাম যখন তখন ক্যাসেট বের হত। তারপর সিডি। ক্যাসেট এবং সিডি কেনাটাই ছিল আমার জন্য আয়োজন। ঈদের চাঁদরাতে, ঈদের সারাদিন ডিস্কে গান বাজত, এটাই ছিল আমার ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।

তানভীন সুইটি

শ্বশুর বাড়ি ও বাবার বাড়ি ঘুরে ঈদের ছুটি কাটিয়ে দেন নব্বই দশকের মডেল ও অভিনেত্রী তানভীন সুইটি। সুইটির ভাষ্য, ছোটবেলায় ঈদের জামাকাপড় লুকিয়ে রাখার ওইদিন তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন উপহার পাওয়ার চেয়ে দিতেই বেশি আনন্দ পান এই অভিনেত্রী।

ঈদের দিনটি সাদাসিধেভাবেই কাটে। স্বামী নামাজ থেকে আসার পর টেবিলে খাবার দেয়া হয়। ছুটি পেলে শ্বশুর বাড়ি, বাবার বাড়ি ঘুরতে যাওয়া হয়। সন্ধ্যার পর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। সব মিলিয়ে ঈদের দিন শুধু নয় পরের তিনচার দিনও ঈদের আমেজ থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈদ নিসয়ে চিন্তাভাবনাও কিছুটা পাল্টেছে জানিয়ে সুইটি বলেন, “এখন চিন্তা করি আমার আশপাশের মানুষের কথা। আমি আমার জায়গা থেকে যতদূর সম্ভব হয় তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। চারপাশের মানুষ যেন ভালো ঈদ করতে পারে সেই চিন্তা করি। ছোটবেলায় কিন্তু এসব চিন্তা আসত না। এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েই ঈদের আনন্দ বেশি পান

তৌসিফ মাহবুব

ঈদে আসছে তরুণ অভিনেতা তৌসিফ মাহবুবের পাঁচটি নাটক। মানের দিক বিবেচনা করে আগের তুলনায় নাটক কমিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা। তৌসিফের ভাষ্য, কাজগুলো দর্শকরা কিভাবে নিচ্ছেন সেই চিন্তায় ঈদ কাটবে তার। এবারের ঈদের দিন কাটাব অনেক চিন্তা নিয়ে, কারণ এবার অনেক কষ্ট করে অনেকগুলো কাজ করেছি৷ যেখানে আশা থাকে সেখানে হতাশ হওয়ার চিন্তাও থাকে। আমাদের ঈদ একেকটা কাজ, একেকটা নাটককে ঘিরে হয়। সেটা থেকে কেমন ফিডব্যাক পাব, সেটার ভয়ও থাকে। এখনকার ঈদ অনেক ‘ম্যাচিউর’ জানিয়ে তৌসিফ বলেন, ছোটবেলায় ঈদে ভাবতাম আমি কী পাব। এখন ভাবি কাকে কী উপহার দিতে হবে। ছোটবেলা আর বড়বেলার ঈদের পার্থক্য এটাই।”

মোশাররফ করিম

নাটক-সিনেমা-সিরিজের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা মোশাররফ করিমের ঈদের দিনের একবেলা ঘুমিয়ে কাটে। তিনি বলেন, “আরেকবেলা বাসা থেকে বের হই ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে, তখন ভালো লাগে, ঘুরে বেড়াই। বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের আগের রাতের আড্ডা, ঈদের দিনের আড্ডা এই বিষয়গুলোতো থাকেই৷ছোট-বড়বেলার ঈদের পার্থক্য নিয়ে মোশাররফের উত্তর হল, “বিস্তর ফারাক। ঈদটা ছেলেবেলারই৷ যেহেতু ছেলেবেলার সকল কিছুই সুন্দর, মাথায় কোনো চাপ থাকে না, দায়িত্ব থাকে না। ছেলেবেলার ঈদের সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার যেটা ছিল, সেটা হল বন্দিজীবন থেকে একটা ছাড় দেয়া হত, যেখানে খুশি সেখানে যাও। সেই ছাড় দেয়াটা অসাধারণ লাগত। এখন তো সেই ছাড় দেয়ার ব্য়সে আছি কিন্তু ছুটির স্বাদটা আর পাই না।

তানিয়া বৃষ্টি

অভিনেত্রী তানিয়া বৃষ্টির বাবা থাকেন দেশের বাইরে। ঈদের সময় বাবা আসবেন দেশে, এই আনন্দ থাকেন তিনি। আব্বু দুই এক বছর পরপর ঈদের মধ্যে আসে। এবারের ঈদে আব্বু দেশে আছে। আব্বু থাকলে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া হয়। সবাই একসঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার পরে হয়তো বাবাকে নিয়ে সাজেক, বান্দরবান কোথাও ঘুরতে যাব। আরো অনেকের মত ছোটবেলার ঈদের আনন্দটা এই সময়ে এসে খুঁজে বেড়ান বলে জানান বৃষ্টি।

আজমেরী হক বাঁধন

ঈদে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের সিনেমা মুক্তির কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। সিনেমা মুক্তি পেলে হয়ত ঈদের দিনটি অন্যরকম কাটত তার। ঈদের দিন মেয়েকে নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘোরাঘুরির প্ল্যান আছে। এবার ঈদের পরে হয়ত চট্টগ্রাম যেতে পারি। ছোটবেলার ঈদ অনেক আনন্দের ছিল। এখন এতো আনন্দ লাগে না। মেয়ের আনন্দ দেখলে ভালো লাগে। মেয়ে খুব এনজয় করে।”

সাবিলা নূর

শ্বশুর বাড়ি ও বাবার বাড়িতে ভাগাভাগি করে ঈদ দিনটি কাটিয়ে দেন সাবিলা নূর। তবে এবার সেটি হচ্ছে না। আমার শ্বশুর বাড়ি ও বাবার বাড়ি যেহেতু পাশাপাশি, দেখা যায় দুপুরের সময়টা শ্বশুর বাড়িতে থাকা হলে রাতে থাকা হয় নিজের বাড়িতে। এবার ঈদ পুরোটাই শ্বশুরবাড়িতে। কারণ এই ঈদে আমার আম্মু-আব্বু দুজনের কেউই দেশে থাকবেন না। তাই ঈদে নেহালের (স্বামী নেহাল তাহের) পরিবার ও তার কাজিনদের সঙ্গে সময় কাটছে। ছেলেবেলার মত করে ঈদের আনন্দ সাবিলাও খুঁজে পাননা জানিয়ে সাবিলা বলেন, “সবাইকে নিয়ে হয়ত সিনেমাও দেখা হবে।”

মীর সাব্বি

অভিনেতা মীর সাব্বিরে কাছে ঈদ হচ্ছে দুই সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া। ঈদের দিন নানা বাসায় আসা আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়ন করেও সময় যায় সাব্বিরের। বাবা যখন ছিলেন বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া হত, সব ভাই একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়ার একটা রীতি ছিল। এখন বাবা নেই, ছেলেদের নিয়ে নামাজ পড়তে যাই৷ ঈদের পরদিন শ্বশুর বাড়িতে যাই, এভাবেই চলে যাচ্ছে। ছোটবেলায় ছেলে ছিলাম এখন আমি ব্যাটা হয়ে গেছি, এটাই পার্থক্য- দুই বয়সের ঈদের পার্থক্য এমনভাবেই প্রকাশ করেন সাব্বির।

কাজী নওশাবা আহমেদ

ব্যস্ততার কারণে যেসব সিনেমা দেখা হয়নি সেসব দেখে ফেলব ঈদের এই ছুটিতে। ঘোরাঘুরি তেমন নেই, সাজগোজও নেই”- এবারের ঈদের দিনের পরিকল্পনা জানালেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। কেমন কাটত ছেলেবেলার ঈদ প্রশ্নে নওশাবা বলেন, ঈদের আগের দিন ভাইবোনরা মিলে বাসা গোছাতাম, মাকে সাহায্য করতাম। বাবা এই নিয়মটা করেছিলেন। এক বছর আগেও বাবা ছিলেন, এখন নেই। পুরনো সবকিছু মিস করছি।

 অমিতাভ রেজা চৌধুরী

নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী ঈদের দিনটি কাটে বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যা পড়ে। গত পাঁচ সাত বছর ধরে ঈদের দিনটি এভাবেই কেটেছে। যত ঈদ সংখ্যা বের হয় সব কিনি এবং সারাদিন এটার গল্প, ওইটার প্রবন্ধ পড়েই কেটে যায়। তবে যেহেতু আমি একা থাকি মায়ের সঙ্গে একবার দেখা করতে যাই বাড়িতে। ঈদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পান এই নির্মাতা। তিনি বলেন, আমার গাড়ির ড্রাইভার, বাসায় সিকিউরিটি, বাসার হেল্প হ্যান্ড, তারা ঈদটা সুন্দর করতে পারছে কিনা, ছুটি দেয়া থেকে শুরু করে ঈদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলোর যোগান দিতে পারছি কিনা, এটা ভেবেই ঈদ কাটে।”

নোবেল

ছোটবেলার ঈদের আকর্ষণ ছিল দুটি। একটি হচ্ছে নতুন পোশাক, আরেকটি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া। ছোটবেলার ঈদে জীবনের অন্যতম মধুর সময় পার করে এসেছি। আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। অনেকগুলো বছর কেটেছে সেখানে। ঈদের স্মৃতি মানেই চট্টগ্রামের ঈদ। নতুন পোশাক তো পেতামই। সেটা একটি আনন্দের বিষয় ছিল। এছাড়া চট্টগ্রামে আমার অনেক বন্ধু বান্ধব। বন্ধুরা মিলে ঈদের আগের দিন প্ল্যান করতাম দিনটি কীভাবে কাটাব। তারপর ঈদের নামাজ পরে সারাদিন আড্ডা দিতাম। আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে যেত। নির্মল ও সুন্দর আড্ডা ছিল সেটা যা আজও মনে পড়ে।

আফসানা মিমি

ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল আনন্দ আর আনন্দ। সেই আনন্দ আর ফিরে পাব না কোনোদিনো। জীবন বহমান, জীবন এগিয়ে যায়। একজীবনে কত স্মৃতি জমা হয়, কিন্তু ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে দারুণভাবে। আর ছোটবেলার ঈদ মানে তো কথাই নেই! এতটাই আনন্দময় ছিল সেইসব দিনগুলো। ঈদে নতুন পোশাক পেতাম। এটার আনন্দ ছিল সবচেয়ে বেশি। মজার মজার খাবার তো থাকতই। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত নতুন পোশাক। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময় পড়ালেখার ব্যস্ততা থাকত, কিন্তু ঈদের দিনটি ছিল পূর্ণ স্বাধীনতার। কোনো বাধা নেই, অবাধ স্বাধীনতা। আর সালামির বিষয়টি তো ছিলই। সালামি পেয়েও ভালো লাগত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App