×

বিনোদন

সংবাদ সম্মেলনে শর্মিলা ঠাকুর

ভেদাভেদ ভুলে সবাই আমাদের ছবি গ্রহণ করেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম

ভেদাভেদ ভুলে সবাই আমাদের ছবি গ্রহণ করেছে

চোখের পলক পড়ার আগেই দুপুরের সূর্য নিজেকে আড়াল করে নিলো। সেই সঙ্গে অনেকটা গম্ভীর হয়ে উঠলো মাঘের নরম বিকেলটি। আর সন্ধ্যা গড়াতেই জমজমাট হয়ে উঠলো অর্ধশতাধিক ক্যামেরা-বুমে। এর মধ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলেন তিনি। অবয়বজুড়ে ছিল অন্যরকম গাম্ভির্য। ঠোটের কোনে টোলপরা হাসির রেখা। পরনে কালো গাউন। গলায় সাদাকালো মাফলার। মাথার কাঁচাপাকা চুল বয়েসীবেলার সৌন্দর্যকে যেন বাড়িয়ে দিল। তিনি আর কেউ নন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে শুরু হওয়া ২২তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এলে যেন পিনপতন নীরবতা নেমে এল। সঙ্গে ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। এসময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বর্ষিয়ান এই অভিনেত্রী।

প্রথম ছবি পথের পাচালি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নিজের অভিনয় জীবনের জার্নি, চলচ্চিত্র উৎসবসহ নানা প্রশ্নের জবাবে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, যে কোনো কাজই কাজ। যে কোনো শিল্পই শিল্প। তা বাংলা ছবিতে কিংবা হিন্দি ছবিতেই হোক। কাজ করতে গিয়ে মন দিয়ে করেছি। নাচতে গিয়েও আমি মন দিয়ে করেছি। দুটো ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা ছবির পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও সমান তালে কাজ করেছি। আমাদের দেশ আসাম ত্রিপুরা কাশ্মিরসহ অনেক ভাষার দেশ। সেখানে আমরা হিন্দি ছবি করছি। কোনো ভেদাভেদ নেই। যখন আরাধরা ছবি রিলিজ হলো তখন আসামে হিন্দি বয়কটের আন্দোলন চলছিল। তখনও তারা আমাদের ছবি গ্রহণ করেছে। সব দেশকে আমাদের ছবি একত্রিত করেছে। ভেদাভেদ ভুলে তারা সবাই আমাদের ছবি গ্রহণ করেছে। 

সত্যজিৎ রায় এবং অন্য পরিচালক প্রসঙ্গে তুলনা কেমন এমন এক প্রশ্নের জবাবে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, সবাই তো সত্যজিৎ রায় হতে পারেন না। সবাই একইরকম কেন হবেন? সবাই যে যার মতো করেই কাজ করেছেন। কারো সঙ্গে কারো তুলনা করতে চাই না। 

দীর্ঘ বিরতির পর সিনেমায় ফেরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বললেন, আমি ফেরা কথাটা একেবারেই বিশ্বাস করি না। আমি তো কোথাও যাইনি যে আমি ফিরে আসবো। আমার যখন কোন চরিত্র ভালো লাগে আমি তখন সেই চরিত্রটা করতে চাই। ছবির পরিচালক আমার কাছে এসে স্ক্রিপ্ট শোনানোর পর গল্পটি আমার আমার ভালো লেগেছে। এটার সঙ্গে আমার বয়সেরও একটা মিল আছে। তাই অভিনয়ে যুক্ত হয়েছি। এখানে ফেরার কিছু নেই। সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার দিয়ে সিনেমায় শর্মিলা ঠাকুর পথচলা শুরু। বলা চলে তখন তিনি ছিলেন কিশোরী। এরপর দাপিয়ে কাজ করেছেন বাংলা ও বলিউডে। 

লম্বা এই জার্নির বিষয়ে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, মানিক দার ছবির পর যখন হিন্দি ছবিতে সাইন করলাম, তখন সব বাঙালি ক্ষেপে গেলো। তারা বলেছিল, সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে কাজের পর তুমি বাণিজ্যিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করবে? শামি কাপুরের সঙ্গে নাচগান কবে এটা কী করে হয়! একাট রিজনাল সিনেমা  থেকে বাণিজ্যিক সিনেমায় যাওয়া একটা ন্যাচারাল প্রসেস। সেটাই আমি করেছিলাম। আমার কথা ছিলো- যেকোনো কাজই কাজ। যেকোনো শিল্পই শিল্প। সেটা বাংলা বা হিন্দি হোক। কাজটা আমি মন দিয়ে করেছি। নাচতে হয়েছে সেটা আমি মন দিয়ে নেচেছি।

ঠাকুর পরিবারে বেড়ে ওঠায় শর্মিলার জীবনে কি প্রভাব পড়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমি যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছি। যেখানে আমার কাকা-কাকিমা, পিসি, ঠাকুর্দাও ছিলেন। এর একটা দারুণ প্রভাব আমার জীবনে আছে। কালি পূজা, দুর্গা পূজা সবই হতো আমাদের বাড়িতে। আমার জীবনে ঠাকুরমা আমাকে প্রভাবিত করেছেন বেশি। অন্যরা ইংরেজিতে কথা বললেও তিনি কখনোই ইংরেজী কথা বলতেন না, বাংলায় বলতেন। বাঙালি শাড়ি পরতেন। খুব ভালো রান্না করতেন, গল্প শোনাতেন। সিনেমায় অভিনয় করার ব্যাপারেও তিনি আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন।

ষাট দশক পেরিয়ে নারী চরিত্রের বিবর্তন কেমন ঘটেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন ধীরে ধীরে সবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখন অনেক তফাৎ এসেছে। ভালো ভালো ছবি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিয়ের আগে অনেক উপদেশ পেয়েছি, এখন বিয়ে করার সময় নয়, পরেও অনেক উপদেশ পেয়েছি। এখন সিনেমা করার সময় নয় ইত্যাদি। আমি অন্য মানুষের কথা শুনিনি। আমি মনে করেছি, ঠিক সময়ে বিয়ে করা উচিৎ, করেছি, সন্তান জন্ম দেয়া উচিৎ আমি তাই করেছি। আমি সুখি। এমনকি অনেকে বলেছে, কি করে একজন নবাবকে বিয়ে করছো, দুই বছরের মাথায় বিয়ে ভেঙে যাবে। 

সিনেমার স্ট্রাগল কেমন ছিল এমন এক প্রশ্নে শর্মিলা বলেন, ছবি করার ক্ষেত্রে কখনোই স্ট্রাগল করতে হয়নি।  

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন এমন এক প্রশ্নের জবাবে শর্মিলা ঠাকুর বললেন, নতুন মন্ত্রী সভা নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জরুরি মিটিং ছিল তার। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকলেন, সময় দিলেন। অনেক আন্তরিক। খুব সিম্পল, চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বললেন। তার সঙ্গে ছবি তুললাম। অনেক সহজ মানুষ তিনি। খুব সাধারণ একটা শাড়ি পরেছিলেন। তাকে দেখে মনেই হয়নি যে আমরা অনেক বড় পার্সোনালিটির সামনে বসে আছি। খুব অমায়িক মানুষ। ভালো লাগল।  বরং তিনি আমাকে মনে করিয়ে দিলেন, আমার সঙ্গে তার কখন দেখা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, এই সুন্দর শহর ঢাকায় এসে খুবই আনন্দিত। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আমি যখনই যা চেয়েছি পেয়েছি। মাছের ঝোল থেকে এই চাই সেই সবই পেয়েছি। আবার ডাকলে আবারো আসব ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App