×

বিনোদন

বেঁচে থাকবেন সৃষ্টির মধ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২২ এএম

বেঁচে থাকবেন সৃষ্টির মধ্যে

ছবি: ভোরের কাগজ

কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুর খবর শুনে অনেকেই ছুটে গেছেন হাসপাতালে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিণত হয়েছে শোকবইয়ে। এই কিংবদন্তিকে ঘিরে তারকা শিল্পীদের স্মৃতিচারণ-

আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক গান তার লেখা : সাবিনা ইয়াসমিন

গাজী মাজহারুল আনোয়ার সম্ভবত ২০ হাজারের মতো গান লিখেছেন। যার মধ্যে অন্তত ৫-৬ হাজার গান আমিই গেয়েছি। তিনি ছিলেন ‘এক ও অদ্বিতীয়’। তার মতো কেউ ছিলেন না। আর এরকম মেধাবী মানুষ কেউ আসবেন কিনা জানি না। ভীষণ গুণী গীতিকার-গীতিকবি ছিলেন। অসংখ্য স্মৃতি তার সঙ্গে আমার। ৫০ বছর আগে মনে হয় তার সঙ্গে গান করা শুরু। তখনো তিনি তরুণ। আমিও তখন ছোট ছিলাম। সবশেষ কোন গানটা করেছিলাম, সেটাও ভুলে গেছি। তার সঙ্গে অসংখ্য কাজ করেছি।

এটুকু বলব, আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক গান তিনি লিখেছেন। তিনি সিনেমায় কাজ করেছেন। আমাকে দিয়ে সিনেমায় অভিনয়ও করিয়েছিলেন।

সব বাতিঘর একে একে নিভে যাচ্ছে: কনকচাঁপা

সকাল থেকে মুছি আর লিখি, মুছি আর লিখি, কিন্তু কিছুই লেখা হয়ে ওঠে না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে কিছু লেখা হাতে উঠছে না। আল্লাহ ওনাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ সুন্দর স্থানের স্থায়ী বাসিন্দা করে নেয়ার অনুগ্রহ করুন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবার যেন এতো বড় শোক বহন করার শক্তি অর্জন করে এই দোয়া রইলো। আমাদের সব বাতিঘর একে একে নিভে যাচ্ছে। তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের মহীরুহ। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

তার মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি: রফিকুল আলম

গাজী ভাইয়ের তো অনেক পরিচয়। কিন্তু তিনি আমাদেরই মানুষ, গানের মানুষ। তার অবদান সম্পর্কে অনেক দীর্ঘ কথা বলতে হবে, সেটা এখন বলতে চাই না। বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ববঙ্গে কবিতা ও আধুনিক গীতিকবিতা লেখার মানুষ খুব কম ছিলেন। তিনি এক জীবনে যত গান লিখেছেন, তার একটিও বিফলে যায়নি। এটা খুব বিরল। বাংলা সাহিত্য ও গানে কোথাও এত বড় গীতিকবি নেই, যার প্রতিটি গান মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। তার লেখা ও সুরে আমি অনেক গান গেয়েছি। ফলে তার চলে যাওয়ার ব্যথা নিয়েই পথ চলতে হবে, কাজ করতে হবে।

অনেক বড় অভিভাবককে হারালাম আমরা: আবিদা সুলতানা

যারা তাদের দোয়া ও আশীর্বাদে আমাদের রাখতেন, এক এক করে তারা সবাই চলে যাচ্ছেন। অনেক বড় অভিভাবককে হারালাম আমরা। গাজী ভাই প্রচণ্ড সফল একজন মানুষ ছিলেন।

যেদিকে তিনি হাত দিয়েছেন, সেদিকে সোনা ফলেছে। আসলে গাজী ভাই চলে যাওয়াতে মনে হচ্ছে, মাথার ওপরে আর কেউ নেই! খালি খালি লাগছে! গাজী ভাই আদর করতেন, ভালোবাসতেন। তাকে ভাই বলতাম, কিন্তু বাবার মতো ভালোবাসতেন। কাছে ডেকে বসাতেন, কথা বলতেন। আর কিছু বলতে পারছি না।

গাজী ভাই বাংলার অহংকার হয়েই থাকবেন: অঞ্জনা

ঘুম থেকে উঠেই শুনি গাজী মাজহারুল আনোয়ার ভাই নেই। আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এত কষ্ট লাগছে কোনোভাবেই মনকে বোঝাতে পারছি না, চোখের পানি আটকাতে পারছি না। কত স্মৃতি, কত স্নেহ- এ মানুষটির কাছ থেকে পেয়েছি, তা মুখে বলে এবং লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ মহান মানুষটির সম্পর্কে কোথা থেকে শুরু করব তা আমি জানি না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ভাই পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র বাম্পারহিট ‘নান্টু ঘটক’ চলচ্চিত্রে তিনি আমাকে প্রধান নায়িকা হিসেবে সিলেক্ট করেন। ছবিটি সে সময় অনেক ব্যবসাসফল হয়। এর আগে গাজী ভাইয়ের প্রযোজনায় নির্মিত আরো দুটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জিঞ্জির’ ও ‘আনারকলি’তে তিনি আমাকে নায়িকা হিসেবে সিলেক্ট করেন। এরপর গাজী ভাই পরিচালিত আরেকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘বিচারপতি’তেও তিনি আমাকে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করেন। এ মানুষটির প্রযোজনায় নির্মিত চারটি চলচ্চিত্রে তিনি আমাকে নিয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে আমাদের সব সময় একটা সুসম্পর্ক ছিল। আমার বাংলা চলচ্চিত্রে পদার্পণের সূচনালগ্ন থেকে গাজী ভাইয়ের অনেক স্নেহ পেয়েছি। তিনি ছিলেন বাংলার অহংকার।

তাকে বাবা বলে ডাকতাম: ওমর সানী

আমার বাবা আর শ্বশুর মারা যাওয়ার পর আমি এই একজনকেই বাবা বলে ডাকতাম, শ্বশুর বলে ডাকতাম; বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র, একজন বাংলাদেশ, গাজী মাজহারুল আনোয়ার; তিনি চলে গেলেন। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমি মনে করি, কিংবদন্তির কখনো মৃত্যু হয় না।

এত বড় শোক নেয়া ভীষণ কষ্টকর: কুমার বিশ্বজিৎ

আকস্মিকভাবে দুঃসংবাদটি পেলাম। এত বড় শোক নেয়া ভীষণ কষ্টকর। অনেক বেশি ভারি মনে হচ্ছে। তার এই আকস্মিক চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। সংগীতাঙ্গনকে যথেষ্ট সমৃদ্ধি দিয়ে গেছেন। বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আত্মার শান্তি কামনা করছি।

ভালোবাসা ও শাসন থেকে বঞ্চিত হলাম: মনির খান

বিশ্ব জানে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা। আমি তার সন্তানতুল্য। তিনি বলতেন আমার দুটি ছেলে। একজন উপল, আরেকজন মনির। আজ থেকে তার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও শাসন থেকে বঞ্চিত হলাম। প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে আমার কথা হতো। কোনো কারণে আমি ফোন করতে না পারলে তিনিই ফোন দিতেন। পহেলা আগস্ট আমার জন্মদিনে একটি গান পাঠিয়ে তিনি বললেন, বাবা এর থেকে মূল্যবান সম্পদ আমার কাছে আর কিছু নাই। একটি গান পাঠালাম এটি যত্ন করে রেখ। আর আমার জন্য দোয়া করো।

আমার আফসোসটা রয়েই গেল : শাকিব খান

বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন যে মানুষগুলোর নাম উচ্চারিত হবে তার মধ্যে একজন গাজী মাজহারুল আনোয়ার চাচা। মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম বা চলচ্চিত্র- সব ঘরানার গান তিনি রচনা করেছেন। কোন অঙ্গনে তার পদচারণা নেই, কোন অঙ্গনে সফলতা পাননি তিনি? আমার খুব শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষ ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার চাচা। ব্যক্তিজীবনে খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। তাকে সব সময় পাশে পেয়েছি। তার বিদায়ে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা অপূরণীয়। গাজী মাজহারুল আনোয়ার এমন একজন ব্যক্তিত্ব, কিংবদন্তি- যার সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাওয়া সত্যি খুব আনন্দের। কিন্তু আমি আর সেই সুযোগ পেলাম না। এই আফসোসটা আমার রয়েই গেল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App