×

শিক্ষা

প্রাথমিকেও ইংরেজি ভার্সন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:২২ এএম

প্রাথমিকেও ইংরেজি ভার্সন!

ফাইল ছবি

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশে যেখানে ‘বাংলা ভার্সনে’ই ঠিকঠাক পাঠদান হয় না, সেখানে ‘ইংরেজি ভার্সনে’ পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হবে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের চিত্র এতই করুণ, শিক্ষক-কর্মকর্তারাও তাদের সন্তানকে এসব বিদ্যালয়ে পড়াতে পাঠান না। অথচ সরকারের দেয়া সব সুবিধা ভোগ করেন এরা। এমনকি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলেও পাসের হারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শীর্ষে থাকতে পারে না। সরকারি প্রাথমিকে দুর্বল পাঠদানের কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। আর এই সুযোগে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের ‘শিক্ষা বাণিজ্যে’ ‘পোয়াবারো’। ঠিক এমন ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের সব জেলায় একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন চালু করা হবে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মূলত সবাইকে ‘চমকে’ দিয়েছেন। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গতকাল রবিবার এক অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্য প্রকাশ করার পরই রীতিমতো আলোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, সরকারি প্রাথমিকে যেখানে বাংলা ভার্সনেই ঠিকমতো পাঠদান হয় না, সেখানে ইংরেজি ভার্সনে কীভাবে এবং কারা পাঠদান করাবেন? যে শিক্ষকরা পাঠদান করাবেন, তাদের সন্তানরা কি সেসব বিদ্যালয়ে পড়বে? নাকি শুধু সাফল্যগাথা রচনা করার জন্য সরকারি প্রাথমিকে ইংরেজি ভার্সন শুরু করা হবে? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ১ লাখ ৩০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে খরচ পড়বে ৪৬ কোটি টাকা। আর পুরো প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও তাই জানেন। কিন্তু গতকাল ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন চালু করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু বলছে না। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পন্ডিত এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। যা বলার প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ই বলবেন জানিয়ে পুরো বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ এর সহসভাপতি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, এই মুহূর্তে প্রাথমিকে ইংরেজি ভার্সন কিংবা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কীভাবে বাংলায় মানসম্মত পাঠদান করানো যায় সেটি নিয়ে ভাবা উচিত। এছাড়া প্রাথমিকে অন্তত আগামী কয়েক বছর বাংলা ও অঙ্কে জোর দেয়া প্রয়োজন। ওটাই মৌলিক দক্ষতা। বাংলা ও অঙ্কে উন্নত পাঠদান করানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষাবিদ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে উপযোগী করে অবশ্যই ইংরেজি ভার্সন চালু করা সম্ভব। কিন্তু সেটির জন্য যে পরিকল্পনা কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা দরকার তা এই মুহূর্তে নেই বলে মনে করেন তিনি। এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন চালু করা হবে। এ জন্য স্কুলে দুজন আলাদা ইংরেজি শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি স্কুলে ইংরেজি ভার্সন চালু করতে শিগগিরই পাইলটিং শুরু হবে। প্রথমে রাজধানীতে শুরু করা হবে। সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই আমরা এটা শুরু করতে চাই। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের মান অনেক বেড়েছে। একে কাজে লাগিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে আরো দক্ষ করতে চাচ্ছি। সে জন্য এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের এমন মন্তব্যের পরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন চালু হওয়ার যে কথা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বিষয়টি ঠিক ওইভাবে না এবং এ নিয়ে মন্ত্রণালয়েরও কোনো প্রস্তুতি নেই। মন্ত্রণালয়টির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষককে ইংরেজির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ জেলায় অন্যান্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। আর এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়ানো হবে। যাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা রপ্ত করতে পারে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন একটি প্রকল্প নিয়েছিলেন ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন শিক্ষকদের একটি করে নতুন ইংরেজি শব্দ শিশুদের শেখাতে হতো। প্রকল্পটির চলমান থাকাবস্থায় করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। সচিবও অবসরে যান। ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’ এর বিস্তারিত রূপ ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী কেন যে এসব কথা বললেন, তা তো জানি না। যে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কথা বলেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও বলেছেন, আমাদের ৪ কোটি শিক্ষার্থীদের ১২ বছর বাধ্যতামূলক ইংরেজি বিষয় পড়ানোর পরও তাদের ইংরেজি শিক্ষায় দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের এই শেখার প্রক্রিয়াতে কোনো ঝামেলা রয়েছে কিনা, আমরা সেটিই খুঁজে বের করছি। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে দেয়া এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App