শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে যে দাবি জানালেন সমন্বয়ক হাসনাত ও সারজিস
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী-জনতা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘শেখ হাসিনার বিচার ও ক্যাম্পাসে দখলদারির ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এই দাবি জানান।
সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কথা বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খুনি হাসিনাকে প্রধান আসামি এবং যারা সহযোগী ছিল তাদের নামেও মামলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি। খুনি হাসিনাকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনারা উপদেষ্টা হয়েছেন। তাই আপনারা বক্তব্য দেয়ার আগে ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্র মনে রাখবেন। খুনিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, আমরা যেভাবে স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছি, ঠিক একইভাবে স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের চেষ্টাকারীদেরও নামাতে সময় লাগবে না। সুতরাং খুনিদের পুনর্বাসন করার কোনো ধরনের চিন্তা আপনারা করবেন না।
আরো পড়ুন: আবারো উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস
গণমাধ্যমকে হুঁশিয়ারি ও আহ্বান জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকে সর্বজনীন করার জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বৈরাচারকে উৎখাত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি কিছু কিছু গণমাধ্যম খুনিদের পুনর্বাসনের যড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। আমরা আপনাদের হুঁশিয়ার করতে চাই, আহ্বান করতে চাই, আপনারা জনতার কাতারে চলে আসুন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই, রক্তের গন্ধ এখনো যায় নাই, মেডিক্যালে আহতরা কাতরাচ্ছে। সুতরাং আপনাদের স্পর্ধা হয় কিভাবে জনতাকে অস্বীকার করে খুনিদের পুনর্বাসন করবেন? সর্বশেষ যারা শিক্ষার্থী এখানে রয়েছেন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চলে আসা দখলদারির যে রাজনীতি, হল দখলের যে রাজনীতি, গেস্টরুমের যে রাজনীতি, স্বৈরাচারদের সহযোগী হিসেবে থাকার যে রাজনীতি, সে রাজনীতি ক্যাম্পাসে আর কোনো দিন পুনর্বাসন হবে না।’
ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের রাজনীতির বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল। সেই দখলদারিত্বের রাজনীতির পুনর্বাসন করতে দেয়া হবে না। ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: জবির ছাত্রকল্যাণ ও পরিবহন পরিচালকসহ আরো দপ্তর প্রধানের পদত্যাগ
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা আজকে আপনাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক করতে এসেছি। আমরা ৫ আগস্ট দেশ থেকে স্বৈরাচার তাড়ানোর পর থেকে কিছু কুচক্রী মহল ক্যু করার চেষ্টা করছিল। আমরা ছাত্র-জানতা তা দমন করেছি।
যারা ক্যু করার চিন্তা করছে তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা দেখছি আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের হায়েনা এবং শকুনেরা ক্যু করার চিন্তা করছে। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যখন এক হয়েছে তখন আপনাদের এসব ক্যু কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে পালাবে।'
সমাবেশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও আরেক সমন্বয়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, কিন্তু দেশে এখনো স্বৈরাচার রয়ে গেছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যে অপকর্ম চালাচ্ছে আমরা ছাত্রসমাজ সব অপকর্ম শক্ত হাতে দমন করব। আমাদের দেশে যারা অমুসলিম আছে তাদের ওপর হামলা হতে পারে। আমরা ছাত্রসমাজ তাদের নিরাপত্তায় আমাদের বুক পেতে দেব। আর সামনে ১৫ আগস্ট নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে আমরা তাদের ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেব না। আমরা মাসের পর মাস রাজপথে থাকব, তবু আমাদের বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না।’
সমাবেশ শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ হয়ে মধুর ক্যান্টিন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রদক্ষিণ করেন।