×

শিক্ষা

সনদ বাণিজ্য : ওএসডি হলেন কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম

সনদ বাণিজ্য : ওএসডি হলেন কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান

স্ত্রী গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সনদ বাণিজ্যের ঘটনায় সন্দেহের তালিকায় থাকা কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে ওএসডি করে অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হয়েছে। 

শিক্ষাবোর্ডেরই আরেক কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. মামুন উল হককে কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। সোমবার এ বিষয়ে আদেশ জারি হতে পারে। রবিবার রাতে (২১ এপ্রিল) শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভোরের কাগজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাধারণত চেয়ারম্যান ওএসডি হলে বা অন্য কোনো ঘটনা ঘটলে বোর্ডের সচিবকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কারিগরি বোর্ডের সচিব মে. মিজানুর রহমানও সনদ বাণিজ্যের সন্দেহে নজরদারিতে আছেন। এ কারণে তাকে কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। 

এর আগে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ রবিবার দুপুরে সনদ বাণিজ্যের ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন। শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে (৫৪) গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ডিবিপ্রধান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এখন পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেইনি। সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে যত বড় রাঘববোয়াল জড়িত থাকুক তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের তথ্য-উপাত্তে যদি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তাবে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। যে কোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকব।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সনদ তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একে এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারি ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্যমতে বিপুল পরিমাণ জাল সনদ, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শত শত সনদ ও মার্কশিট তৈরির মত বিশেষ কাগজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার মূল সনদ এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, শতাধিক সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি উদ্ধার করা হয়। 

গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এ তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে (৪৮) গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে (৪০) গত ১৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সর্বশেষ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তার এ কে এম শাসমুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি সনদ ও মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হস্তান্তর করেছে। একইসঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশে বসে এ ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুগলে সার্চ করলে তা সঠিক পাওয়া যায়। 

তিনি আরো বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। কোনোক্রমে ই-সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা নন। সিস্টেম অ্যানালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এ কাজগুলো করার কথা। 

কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালরা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন পরিবর্ধন, নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছে কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের সঙ্গে। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App