×

শিক্ষা

জাবিতে ধর্ষণকান্ড

ইউজিসির নির্দেশনায় যা জানালো জাবি প্রশাসন

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪২ পিএম

ইউজিসির নির্দেশনায় যা জানালো জাবি প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা-সংকট নিরসনে এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৮টি সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি জাবি প্রশাসন। 

সোমবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক এই ইস্যুগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পাঠানো এক প্রতিবেদনে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে হলের আসন সংখ্যার সমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশের যে তিনটি রাস্তা রয়েছে তা বন্ধ করে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে প্রতিটি স্থান নজরদারীর আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। এছাড়া নিয়মিতভাবে শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের হলের সিট বাতিল করে হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করা এবং নিয়মিত শিক্ষার্থী ব্যতীত বহিরাগতদের হলের কক্ষে প্রবেশ এবং হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়। 

আরো পড়ুন: জাবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির

সংবাদ সম্মেলনে আবাসিক হলগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ও হল থেকে অছাত্রদের বের করার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হলেও যারা হল ছেড়ে যাবে না, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো ছাত্র বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী বা অনুসারী যেই হউক না কেনো, অনিয়মিত বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তাকে আবাসিক হল ছেড়ে যেতেই হবে। 

হল থেকে অছাত্রদের বের করতে নেয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘হলগুলোতে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য হলের শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে সংখ্যা নিরূপণ এবং তাদের নামে বরাদ্দকৃত হলে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের রিপিটার শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বের করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া, অনিয়মিত এবং মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ১৭ এপ্রিলের মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তাদের শিক্ষা সনদ বাতিল এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা হবে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘মাদকের বিস্তাররোধে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।’ এছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার এবং তাদের শিক্ষা সনদ বাতিল করা হয়েছে।’

আরো পড়ুন: চবির উপাচার্য হচ্ছেন অধ্যাপক আবু তাহের

বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশের তিনটি রাস্তা বন্ধ করার এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল ফিল্ডসহ অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় সার্চলাইট লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে গেইট বন্ধ করে নতুন করে প্রবেশপথ নিমার্ণ করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এজন্যে আমরা ইউজিসির কাছে অর্থের জন্য চিঠি দিয়েছি। সিসিটিভি স্থাপনের প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। 

এর আগে, ধর্ষণকান্ডের পর পাঁচ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত এক মাসেরও বেশী সময় ধরে চলা লাগাতার আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় এবার টনক নড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা, মাদক নিমূর্ল, ধর্ষণকান্ডে অভিযুক্তদের বিচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার মতো পদক্ষেপ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিরত থাকার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টার আহ্বান জানান।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিনসহ আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App