×

শিক্ষা

শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি

ঢাবির সেই অধ্যাপকের কক্ষে এবার তালা ঝুলালেন শিক্ষার্থীরা

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০১ পিএম

ঢাবির সেই অধ্যাপকের কক্ষে এবার তালা ঝুলালেন শিক্ষার্থীরা
  • সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান 
  • দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন করে এবার সেই শিক্ষকসহ বিভাগটির বাকি শ্রেণিগুলোতে তালা ঝুলিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।  

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বিভাগটির চলমান সব ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে বেলা ১১টায় বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন ১৩ থেকে ১৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুরে অভিযুক্ত ওই অধ্যাপকের রুমসহ বাকি শ্রেণিকক্ষগুলোতেও তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান। 

এসময় শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরমধ্যে, 'নাদির তোমার ভয় নাই, স্ক্রিনশট ছাড়ি নাই', 'শিক্ষা নিপীড়ন, একসাথে চলে না', 'জিরো ফিট দূরত্ব, নাদিরের চরিত্র', দড়ি ধরে মারো টান, নাদির হবে খান খান', 'ও ক্যাপ্টেন মাই ক্যাপ্টেন, শেইম শেইম, শেইম শেইম', 'সানগ্লাসের আড়ালে, শিক্ষকতা হারালে', ইত্যাদি।

এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বিভাগটির ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার প্রাপ্তি বলেন, আমরা দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছি। উনার দ্রুত বিচার চাই আমরা। আমরা ক্লাসে ফিরে উনার টর্চার সহ্য করতে চাই না। উনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। 

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী ১৪ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী আজরা হুমায়রা বলেন, আজকে আমরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। অভিযোগের বিষয়ে ক্লাস বর্জন করে ক্লাসরুমে তালা ঝুলানো ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের দ্রুত তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।  

এসময় বিভাগটির ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিজ খান বলেন, গত দিনের মতো আজকেও ক্লাস বর্জন করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা গণস্বাক্ষর গ্রহণ করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। 

তিনি আরো বলেন, ড. নাদিরের বিরুদ্ধে শাস্তি কামনা করে আমরা গতকাল যে পোস্টারগুলো লাগিয়েছি তা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এখানে একটি কুচক্রী মহল এটাকে 'ডিফেন্ডি' করার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

এর আগে গতকাল রবিবার সকল ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন করে দ্রুত শাস্তির দাবি বিক্ষোভ মিছিল করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দুপুরে মানববন্ধন করেন তারা। 

এ বিষয়ে বিভাগটির চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ বলেন, গত শুক্রবার প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর রবিবার শিক্ষার্থীরা আমাকে একটি স্মারকলিপি দেন। 

পরে বিষয়টি নিয়ে আমি ও বিভাগের দুজন শিক্ষক নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সভা করেছি। প্রক্টর সভায় উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য সেখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদেরও ডেকে নিয়েছেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন যে এ বিষয়ে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, অভিযোগপত্রের সঙ্গে একটি পেনড্রাইভও পেয়েছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ এনে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগটির এক নারী শিক্ষার্থী। পরে রবিবার একই দাবিতে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী। 

এদিকে ড. নাদিরের বিরুদ্ধে মৌখিক যৌন হয়রানী ধামাচাপা দেয়ার অন্য আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বিভাগটির আরেক নারী শিক্ষার্থী। গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

এর আগেও বিভাগটির ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় 'ব্যক্তিগত আক্রোশে' নম্বর কম দেয়ার অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App