×

শিক্ষা

সিনেট-সিন্ডিকেট অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম

সিনেট-সিন্ডিকেট অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণের ঘটনায় চলমান আন্দোলন জারি রেখেছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। আন্দোলনে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সিন্ডিকেট একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেখানে জাহাঙ্গীরনগরে একটি ছোট ঘটনার বিচার হয় সিন্ডিকেটে সেখানে ১৪৫০ কোটি টাকার যে উন্নয়ন প্রকল্প সে বিষয়টি কিভাবে সিনেট-সিন্ডিকেটকে পাশ কাটিয়ে এফসিকে (অর্থ কমিটি) পাশ কাটিয়ে চলে যায়, তা আমার বোধগম্য নয়।”

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে অনুষ্ঠিত নিপীড়ন বিরোধী সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য আসা শিক্ষার্থীদের এ ধরণের আচরণ আমাদের ব্যাধিত করে। এ থেকে বোঝা যায় রাষ্ট্র কোথায় চলে গেছে। এটা আমাদের সিস্টেমের সমস্যা। সে সিস্টেমকে নস্যাৎ করে দিয়ে রাজনীতি চর্চাকে অবারিত করতে হবে। হলে হলে গণরুম শুধু শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি, বিকৃত মানুষ তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। তিনি আরো যোগ করে বলেন, রাজনীতি ছাড়া দেশ যেমন চলতে পারবে না এটা যেমন সত্য তেমনি রাজনীতির মুক্ত চর্চা করাও প্রয়োজন। গণরুমের বিষয়ে তিনি বলেন, গণরুম শুধু শিক্ষার কাঠামো নষ্ট করেনি বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করেছে।

আরো পড়ুন: আবারো গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন

সমাবেশে সোহাগী সামিহার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ব্যারিস্টার শিহাবউদ্দিন। তিনি বলেন, দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধর্ষকের ঠাঁই নাই এই প্রমাণ যদি আমরা আবার করে দিতে পারি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি আবার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু আমার ভয় হয় এই ব্যর্থ প্রশাসন উদাসীন প্রশাসনের ব্যাপারে। ভূমিকা কোথায় আমি এই ব্যাপারে সন্ধিহান। কারণ আমি দেখতে পাই, যেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটে সেখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না রেখে আমাদের নির্লিপ্ত প্রশাসন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে, টাকা পয়সার ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। 

তিনি আরো বলেন, আমি জানতে পেরেছি এই নির্লিপ্ত প্রশাসন যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদেরকে বের না করে যারা কোন রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না বা যাদের খুঁটির জোড় কম তাদেরকে নানাভাবে হল থেকে বের করা আই ওয়াশ শো শুরু করেছেন। প্রশাসনকে গবেষণার পরিবেশের প্রতি জোড় দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করুন, পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তকদির নিয়ে খেলবেন না, ক্যারিয়ার নিয়ে খেলবেন না। অনেক রথি মহারথীর পতন হয়েছে সেই হিসেবে দেখবেন আপনাদেরও ক্ষণিকের মধ্যে পতন হয়ে গেছে। দেখবেন আকস্মিকতায়, প্রতিবাদের স্রোতে আপনাদের এই সমস্ত আই ওয়াশ ভেসে যাবে।

আরো পড়ুন: সৃজনশীল প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষার মান কি বাড়বে?

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘৭ তারিখে সিন্ডিকেটে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম নিপীড়ক শিক্ষককে শাস্তি দিতে হবে। ভিসি বলেছিলেন স্ট্রাকচারাল কমিটির তদন্ত শেষ হয়নি, পরবর্তী সিন্ডিকেটে করতে হবে। একজন নিপীড়ক শিক্ষককে বাঁচিয়ে রাখবার যে পায়তারা চলছে, আমরা তা রুখে দাঁড়িয়েছি। তাকে বাঁচানো যাবে না। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষাঙ্গনে মাদক এবং ধর্ষণের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ৪২ তম ব্যাচকে বগলদাবা করে ৪৫, ৪৬, ৪৭ ব্যাচকে বের করে দেয়ার এই নাটক কি আমরা বুঝি না? আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, এই ক্যাম্পাসকে আমরা অবৈধ ছাত্রমুক্ত, ধর্ষক মুক্ত ও মাদক মুক্ত করতে চাই।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, এই সাধারণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কখনো তাদের স্বপক্ষে একবারও দাঁড়ায়নি। এ যাবতকালে ধর্ষক মানিক, মোস্তাফিজ পর্যন্ত সব জায়গায় ছাত্রলীগের নাম এসেছে। যতই বলেন মোস্তাফিজ আমাদের দলের কেউ না, তাতে ছাত্রলীগ এই ধর্ষণের দায় এড়াতে পারে না। যারা ছাত্রজীবনে নিপীড়নের সাথে যুক্ত ছিলেন তারাই হলগুলোতে প্রভোস্টের দায়িত্ব পাচ্ছেন। তারা কিভাবে হলের নির্যাতন বন্ধ করবেন? অছাত্রদের হল থেকে বের করার নামে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন। প্রভোস্টদেরকেও এই ঘটনায় জবাবদিহিতায় আনতে হবে। বক্তব্য শেষে তিনি আগামীকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এসময় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক পারভীন জলি, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App