×

শিক্ষা

জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন, ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ গঠন

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম

জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন, ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ গঠন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবিতে) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ক্যাম্পাসে এখনও উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আন্দোলন জারি রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। জাবিতে ঘটে যাওয়া অতীত—বর্তমানের সকল নিপীড়ন—নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়েছে। 

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের নতুন ভবনে এই মঞ্চ গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক—শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এই মঞ্চ গঠন করা হয়েছে বলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান সংগঠকেরা। এসময় বিচার হীনতার সংস্কৃতিই অপরাধের তৈরি করে, এর ফলেই ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে যৌন নিপীড়নের বিচার হয়নি তার বিরুদ্ধেও চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যৌন—নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এবং স্ট্রাকচারাল কমিটির গঠন হওয়ার পরেও কোন শিক্ষক তার স্বপদে বহাল থাকতে পারে না। কিন্তু স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠিত হওয়ার প্রায় ২ বছর পার হওয়ার পরেও বর্তমান উপাচার্যের মদদপুষ্ট হয়ে সে শিক্ষক এখনো তার স্বপদে বহাল রয়েছেন। 

আরো পড়ুন: বইমেলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল উদ্বোধন

আমরা গতকাল এই ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন কালে মাহমুদুর রহমান জনির বিষয়ে বরাবরের মতো শাস্তির বিষয়ে দাবী জানিয়েছি। কিন্তু আমরা জানি না, কোন এক অজ্ঞাত কারণবশত বর্তমান উপাচার্য এই বিচার করেননি। তবে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান উপাচার্যকে নিতে হবে। আমাদের চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সেই যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে থাকবে না এই কথা আপনাদের মনে করার কোন কারণ নেই। তবে আমি আপনাদের বলতে চাই এই পুরো ঘটনার মূল হচ্ছে আড়াই হাজার অবৈধ ছাত্র ক্যাম্পাসের অবস্থান। আমরা জেনেছি গতকাল সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে পাঁচ দিনের মধ্যে সকল অবৈধ ছাত্রকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা প্রতিটি হলে হলে মনিটরিং সেল গঠন করব এবং দেখবো কারা বের হচ্ছে এবং আমরা নিশ্চিত করব প্রত্যেক হল থেকে অবৈধ ছাত্র বের হয়েছে কি না। 

এর আগে, রবিবার বেলা এগারোটায় পোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে নতুন প্রশাসনিক ভবন হয়ে, বটতলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার হয়ে আবার নতুন কলা ভবনের সামনে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় তাসফিয়া তাসনিন সানজানা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধ আমরা মানি না মানবো না, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই এবং জাহাঙ্গীরনগরকে পূর্বের মতো নিরাপদ হিসেবে ফিরে পেতে চাই। 

আরো পড়ুন: জবিতে নতুন পাঁচ সহকারী প্রক্টর নিয়োগ

যৌন নিপীড়ন সেলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা যৌন নিপিড়ন সেল এ পাঠানো হয়নি। কিন্তু এতে কোন বিচার হবে কি না আমরা জানি না। কেননা যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও গত দেড় বছরে তার কোন শাস্তি হয়নি। এবং ক্যাম্পাসে যে যৌন নিপিড়ন সেল রয়েছে আমরা গতকাল জানতে পেরেছি সেই অভিযোগ যৌন নিপীড়ন সেল এ পাঠানো হয়নি। 

আমরা জানির বিরুদ্ধে সকল অপকর্মের তথ্য স্ট্রাকচারাল কমিটিকে দিয়েছি। কমিটি বলেছিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পরেও কেন বিচার করা হয়নি কারণ যৌন নিপীড়ন সেল এর একটি আইন আছে ৮৯ দিনের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে। উপাচার্য যদি সেলে ডকুমেন্টেশনে পাঠাতেন তাহলে এতদিন বিচার হয়ে যেত। কিন্তু উপাচার্য আজও যৌন নিপীড়ন সেলে সেই ডকুমেন্টস গুলো পাঠাননি। 

আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার হয়নি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়, সেখানে একজন বহিরাগত কিভাবে নিরাপদ থাকবে। কারণ শিক্ষকের বিচার না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্রয় পেয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্যই বিশ্ববিদ্যালযয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App