×

শিক্ষা

বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৪৪ এএম

বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস
বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস
বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। প্রতিবাদ হয়েছে ক্যাম্পাসের বাইরেও। ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। সোচ্চার সচেতন মহল। সবার এক দাবি, ‘বিচার চাই, এমন পাশবিকতার অবসান চাই’। রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় রবিবার রাতে ঢাবির এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হওয়ায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া এ প্রতিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে ক্রমেই। দিনভর বিক্ষোভ-অবরোধের মাধ্যমে অবিলম্বে ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি ওঠে সব মহল থেকে। ঢাবি ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকার কুর্মিটোলা এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। এই উত্তাপের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। ফেনী, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল সোমবার বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে, সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে অনেক বড় বড় ঘটনা তদন্ত করে বের করেছে। এ ঘটনায়ও দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। অন্যদিকে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ঢাবিতে ক্রিয়াশীল ১২টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত নতুন জোট ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’। এতে স্থবির হয়ে পড়ে গোটা শাহবাগ এলাকা। আশপাশের রাস্তা দিয়ে বাধাগ্রস্ত হয় গাড়ি চলাচল। এর আগে সকাল ১১টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ধর্ষণবিরোধী স্লোগান দেয়। সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মিছিলে কেঁপে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এর আগে কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘ধর্ষণ কিংবা নারীর ওপর যে কোনো নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ, সব নারীর ওপর পুরুষতান্ত্রিক নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধেরই অংশ। আজকের ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেগে থাকবে এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’ সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। ফেসবুকের একটি ইভেন্টের মাধ্যমে তিনি এ ডাক দেন। ইমির ডাকা এ প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। এর আগে রবিবার রাত পৌনে ৪টার দিকে সংগঠনের সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মিছিল বের করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। সেখানে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। আখতার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় যাদের অবহেলা আছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যে বর্বরতম ঘটনা ঘটেছে, তা বাংলাদেশের বিচারহীনতার কারণেই ঘটেছে। ধর্ষকদের বারবার ছাড় দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারি না। সে জন্য আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গতকাল অবস্থান নেয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। সেখান থেকে তারা এই ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানায়। এ ছাড়াও, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরাও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে এ ঘটনার বিচারের দাবি জানায়। ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে তিন দাবি নিয়ে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। গতকাল সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সিফাতুল ইসলাম নামে দর্শন বিভাগের এই শিক্ষার্থী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসেন। তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আরো দুজন শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। অনশনে বসার ব্যাপারে সিফাতুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছোট বোন আহত হওয়ায় আমি বড় ভাই হিসেবে তাৎক্ষণিক এই অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, এই অনশনের পেছনে ৩টি দাবি রয়েছে অনতিবিলম্বে ধর্ষককে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সঙ্গে অভিভাবকসুলভ আচরণ করবে এবং তার সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে। বিক্ষুব্ধ কুর্মিটোলা : ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাস্থলের পাশে কুর্মিটোলা এলাকাও গতকাল ছিল উত্তাল। স্থানীয়রা কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনের রাস্তায় সকাল থেকে বিক্ষোভ করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি সেখানে বাড়তে থাকে। দুপুরের পর তারা গোটা এলাকা নিরাপত্তাহীন উল্লেখ করে ধর্ষণের বিচার দাবি করেন। এতে ওই এলাকায় সৃষ্ট দীর্ঘ যানজটের কারণে দুর্ভোগ দেখা দেয়

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App