×

শিক্ষা

এবারও ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:১৪ পিএম

# খসড়া পড়ে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে
আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এরফলে এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। ইউজিসি’র ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অংশীজনের সঙ্গে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বুধবার (২৯ নভেম্বর) ইউজিসিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসি’র আইএমসিটি বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূইয়া। সভায় অধ্যাপক আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুসারে ইউজিসি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে একটি ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিল। এ বিষয়ে কমিটি গঠন করে এবং বিস্তারিত আলোচনা শেষে একটি অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করেছিল। কিন্তু অনিবার্যকারণবশত আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত বছরের মতো আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ বছর গুচ্ছভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছে ভর্তিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়ে নজির স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা রাখা নিয়েও প্রশ্ন তোলে বলেন, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজারের বেশি আসন রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা তাদের কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে না। এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিতে পোষ্য কোটা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পোষ্য কোটা থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দেন। প্রসঙ্গত, গত রবিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এখন শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির পরীক্ষাপ্রক্রিয়া। ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমানে দেশে ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এ ছাড়া দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১১৩টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। ইউজিসির মূল্যায়ন হলো, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রমে জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগ, অতিরিক্ত টাকা ব্যয় এবং সময়ক্ষেপণ হয়। এ জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতিও সমন্বিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা চালুর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন নিয়মে তিন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি আলাদা পরীক্ষা নিয়ে একটি ‘স্কোর’ দেয়ার কথা। কোনো শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন চাইলে সেই সুযোগও এর মধ্যে রাখা হবে। এরপর এই স্কোরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মানে হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে না। ইউজিসির পরিকল্পনা হলো ভারতের মতো নতুন নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নিতে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) নামের পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এই কর্তৃপক্ষের অধীন হবে ভর্তির পরীক্ষা। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষে এনটিএ গঠন করে নতুন এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার মতো সময় নেই। তাই ইউজিসির তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। যেহেতু নির্বাচনকালে এখন জাতীয় সংসদের অধিবেশন নেই, তাই ইউজিসি এবার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ গঠন করে নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ অক্টোবর অধ্যাদেশের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই খসড়ায় বলা হয়, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন, সংবিধি, বিধি, প্রবিধি বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোনো দলিলে যা কিছু থাকুক না কেন, এ অধ্যাদেশের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে। এই কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা শুধু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রযোজ্য হবে। খসড়া অনুযায়ী, ইউজিসির চেয়ারম্যান হবে এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন ইউজিসির দুজন সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। এ ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে চারজন উপাচার্য (ইউজিসির চেয়ারম্যান মনোনীত)। আর ইউজিসির একজন পরিচালক পদমর্যাদার নিচে নন, এমন একজন কর্মকর্তা কর্তৃপক্ষের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। খসড়া অনুযায়ী এই কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে নিজস্ব শর্তাবলি অনুযায়ী এই ফলাফলকে মূল ভিত্তি ধরে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমান ও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলকে বিবেচনায় নিয়ে মেধাক্রম করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সীমিত পর্যায়ে শুধু সংগীত, চারুকলা, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, স্থাপত্যবিদ্যা বা এ-জাতীয় অতি বিশেষায়িত বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপটিটিউড টেস্ট’ গ্রহণ করতে পারবে। খসড়া অনুযায়ী এইচএসসির ফল প্রকাশের পর ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা নেয়ার কার্যক্রম শুরু করবে এই কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এইচএসসির ফল প্রকাশের পরও এই অধ্যাদেশ হয়নি এবং কর্তৃপক্ষও গঠন হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ চান আসন্ন শিক্ষাবর্ষে নতুন এ পদ্ধতি চালু না হোক। সব মিলিয়ে বাস্তবতা হলো আসন্ন শিক্ষাবর্ষে নতুন এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। এটি গতকাল ইউজিসির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আলমগীরও স্পষ্ট করলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App