×

শিক্ষা

জাবিতে ৩০০ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগে কোন্দল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৪৮ এএম

জাবিতে ৩০০ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগে কোন্দল

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ ও তিনটি একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অধিকতর প্রকল্প অফিসে টেন্ডার উন্মুক্ত করা হবে। তবে টেন্ডারসহ সাম্প্রতিক সাংগঠনিক বেশকিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে দ্বিধা-বিভক্তি ও কোন্দল। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে আজকে ই-জিপি সিস্টেমে এ টেন্ডার অবমুক্ত করা হবে। এর আগে, গত মাসের ২৪ সেপ্টেম্বর অনলাইনে ই-জিপি পোর্টালে টেন্ডার আহ্বান করে চলতি মাসের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত টেন্ডার বিক্রির সময়সীমা দেয়া হয়। টেন্ডারে তৃতীয় ধাপের এবারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন স্থানে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দশতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট কলা ও মানবিকী অনুষদের অনুভূমিক সম্প্রসারণ, প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলা বিশিষ্ট জীববিজ্ঞান অনুষদের অনুভূমিক সম্প্রসারণ ও প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলা বিশিষ্ট গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের অনুভূমিক সম্প্রসারণ। প্রতিটি স্থাপনাতেই ভবনের অন্তর্গত পানি, স্যানিটেশন, ইলেকট্রনিক, লিফট, সোলার প্যানেল ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘিরে শাখা ছাত্রলীগের হলভিত্তিক কয়েকটি উপদলে বিভক্তি এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। চলতি বছরের ০৩ জানুয়ারি আকতারুজ্জামান সোহেল এবং হাবিবুর রহমান লিটনের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তীতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি হলগুলোতে সম্মেলন করেও হল কমিটি ঘোষণা না করা এবং দলীয় বিশৃঙ্খলা সহ নানা কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, সাংগঠনিক প্রোগ্রামগুলোতে পদদারী সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতি, পৃথকভাবে লেগুনা ও বিভিন্ন পরিবহনের বাস আটকে চাঁদা আদায়ের মত ঘটনায় বন্টনে আসমতায় ক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতাদের একটি বড় আংশ। তবে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের আগমনে আসন্ন টেন্ডারে ছাত্রলীগের টাকা নেয়ার গুঞ্জন আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। এদিকে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে ছাত্রলীগের একাংশের তালা দেয়ার পর থেকে শাখা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামনে আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের চারটি হলে পৃথকভাবে ছাত্রলীগের একাংশ আলাদাভাবে নিজেদের প্রভাব জানান দিচ্ছে। এমনকি কেন্দ্রীয় সভাপতি আসার প্রটোকলেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। চলমান টেন্ডার ও উন্নয়ন কার্যক্রম ঘিরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এ মেরুকরণ নতুন দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করেন ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা একাধিক সিনিয়র নেতা। তাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সহ-সভাপতি পদমর্যাদার এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘উন্নয়ন থেকে টাকা নিবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা দুই শতাংশ হতে পারে বা কমও হতে পারে-আমরা নিশ্চিত না। তবে আমাদের কথা হচ্ছে সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। কয়েকটা হল বেশি পাবে, অন্য হলগুলো কম পাবে এটা হবে না। কোনপ্রকার বৈষম্য হলে ঝামেলা লাগিয়ে দিব। একদম কাজ বন্ধ করে দিব।’ এদিকে টেন্ডার অবমুক্ত হলেও পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে অর্থছাড় ও কাজ শুরু হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, ‘টেন্ডার উন্মুক্ত করার পর ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম) ইভালুয়েশন কমিটি সেটা মূল্যায়ন করবে। সেটা হার্ডকপি আকারে প্রকাশ করে ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এটা যেহেতু একশ কোটি টাকার বেশি তাহলে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের জন্য যাবে। সেখান থেকে চিঠি দিলে, ই-জিপি সিস্টেমে ফেরত আসলে আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারবো। তারপর মূল কাজ শুরু হবে। এখানে ব্যয়বৃদ্ধির একটা ব্যাপার আছে। সেটা পরিকল্পনা কমিশনে আছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে মন্ত্রণালয়ে ক্রয়প্রস্তাব পাঠাতে পারবো। এখানে সময় লাগবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বর লেগে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা কাজ শুরুর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’ উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নভেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি(একনেক)। তিন ধাপে ২০২৩ সালের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে প্রায় ১৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। সেসময় নির্মাণকাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তৎকালীন উপাচার্যের মধ্যস্থতায় ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে সেদিন রাতেই ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App