×

শিক্ষা

পূর্ণ শিক্ষাক্রমে ফেরার প্রভাব এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১০:৫০ এএম

পূর্ণ শিক্ষাক্রমে ফেরার প্রভাব এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে

পূর্ণ শিক্ষাক্রমে ফেরার প্রভাব এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে। ছবি: সংগৃহীত

সব অর্থেই কমেছে পাসের হার। এমনকি করোনাকাল বাদ দিলে এসএসসি ও সমমানে পাসের হারে যে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছিল এবার তা-ও নেই। করোনার আগে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শেষ এসএসসি পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৯ সালে এবং সেবার পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। করোনার বিদায়ের পর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাক্রমে এবং প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় চলতি বছরে পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯। অর্থাৎ ২০১৯ এর চেয়ে এবার পাসের হার ১ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।

আবার গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে করোনার বিদায় পর্বে সহানুভূতির হাওয়ায় শিক্ষাক্রম কাটছাঁট করে নেয়া এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেই তুলনায় এবার পাসের হার ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ কম। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮৬ হাজার ২৪ জন। প্রশ্ন উঠেছে, করোনাপরবর্তীকালে পড়াশোনার মানের ক্রমাবনতিই কি পাসের হার কমার অন্যতম কারণ। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফলাফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর গত ৩০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আগের বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে সময় কমিয়ে দুই ঘণ্টায় পরীক্ষা নেয়া হলেও এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা নেয়া হয়।

প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, এ বছর বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ পাসের হার ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ, সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, যশোরে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ও কারিগরিতে ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে ছাত্রসংখ্যা ১০ লাখ নয় হাজার ৮০৩ জন। ছাত্রীসংখ্যা ১০ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ জন। অতীতে কখনো ছুটির দিনে (শুক্রবার) পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। এবারই প্রথম ছুটির দিনে ফল প্রকাশ করা হলো।

বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর সহানুভূতির সঙ্গে উত্তরপত্র দেখতে বলা হয়েছিল এবং পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল কিছুটা কম শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে। কিন্তু এবার তা হয়নি। পুরো শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই পরীক্ষা হয়েছে। তবে ২০১৯ এর ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৩-এ এসেও পড়াশোনার মানে বিশেষ পার্থক্য চোখে পড়েনি। অর্থাৎ পড়াশোনার গড় ফলাফল যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়েছে, খুব একটা হেরফের হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও তা কাটেনি। যে কারণে এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের প্রধান দুই সূচকেই পতন ঘটেছে। এর ধাক্কা সব সূচকে পড়েছে। এতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি- দুটোর রেখাচিত্রই নিম্নমুখী। পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের হেরফের হওয়া স্বাভাবিক এবং সেটা ঘটে থাকে প্রায় প্রতি বছরই। কিন্তু এবারের এসএসসির ফলাফল এতটা নিম্নমুখী কেন? ভালো শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কেন কমল? তবে এটা ঠিক, যারা ভালো ফলাফল করেছে তাদের বেশির ভাগই টিউশননির্ভর।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে প্রস্তুতির অভাব থাকতে পারে। গত বছর শিক্ষাক্রম অনেকটা কাটছাঁট করা হয়েছিল। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা কিছু সুবিধাও পেয়েছিলেন। এবার পরীক্ষা হয়েছে পূর্ণ শিক্ষাক্রমে এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে। করোনাকালের মতো কোনো বিশেষ পরিস্থিতির আনুকূল্য মেলেনি। এতে পরীক্ষার ফলও স্বাভাবিক হয়েছে। সবমিলিয়ে আমরা পরীক্ষার ফলের পর্যালোচনা করে অবশ্যই মূল কারণ বের করার চেষ্টা করব।

প্রায় একই কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল বলেন, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরের ওপর করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ায় এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। তিনি বলেন, গত বছর পূর্ণ নম্বরের ওপর পরীক্ষা হয়নি। অল্প কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। সময় অল্প ছিল, প্রশ্নপত্র কম ছিল। কিন্তু এবার তো পূর্ণ নম্বরের এবং সব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয়েছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার ফলে তার একটা প্রভাব পড়েছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ কিছুটা কমেছে।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যান্যবারের মতো এবার বিষয়ভিত্তিক ফলাফলের মধ্যে সারাদেশেই শিক্ষার্থীরা অন্যতম কঠিন বিষয় ইংরেজিতে ভালো করেছে। তবে আরেক কঠিন বিষয় গণিতে ভালো ফল করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। ফলাফলে দেখা গেছে, প্রায় সব বোর্ডেই শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। অপরদিকে গণিতে শুধু ঢাকা বোর্ডেই শিক্ষার্থীরা ৮০ নম্বর করে পেয়েছে। চট্টগ্রামে ৮৬, দিনাজপুরে ৮৫ এবং মাদ্রাসা বোর্ডে ৮৩ নম্বর পাওয়ায় সার্বিক ফলাফলে ধাক্কা লেগেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে ঢাকা বোর্ডেই। এই বোর্ডে গণিতের ভরাডুবির কারণে গত বছরের চেয়ে এবার ঢাকা বোর্ডে ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী কম পাস করেছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের মতে, আদিকাল থেকে এ দেশের শিক্ষার্থীরা গণিত-ইংরেজিতে দুর্বল। নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও এই দুই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি থেকেই যায়। তবে পাস-ফেলের হার দিয়ে শিক্ষার মানের তুলনা করা উচিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সার্বিক ফলাফল খারাপ হওয়ার নানা কারণ থাকে। অবিলম্বে সেই কারণগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, গণিতের বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার কম।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গতকাল শুক্রবার চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর আগে সকাল ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের সামনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

এসএসসিতে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমল : এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড়ে পাস করেছে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার (২০২২ সালে) পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।

ফলাফল কমে যাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, গত তিন বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে। অর্থাৎ ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে এসে পাসের হার কমে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, আগের তিন বছর কোভিড মহামারির জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছিল। তিন বছর পর এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৯ ও ২০২৩ সালের ফলাফলে পাসের হার প্রায় একই। এছাড়া এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালের জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কোভিডের কারণে সেবার আমরা জেএসসি পরীক্ষা না নিয়ে সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। জেএসসি না দিয়ে সরাসরি এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেকে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল বলে আমরা মনে করি।

নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, সাধারণ গণিতে সার্বিকভাবে পরীক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে তেমন খারাপ করেনি, তবে আরো ভালো হলে পাসের হার বাড়ত। অন্যান্য বিষয়েও পরীক্ষার্থীরা ভালো করেছে। গণিত ও ইংরেজির ক্ষেত্রে আমাদের মূল্যায়ন হচ্ছে- স্কুলে পর্যাপ্তসংখ্যক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করে মানসম্মত পাঠদানের বিকল্প নেই।

৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৫০টি।

শূন্যপাস করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আগের বারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দেখা গেছে শূন্যপাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশেই হয়তো পরীক্ষা দিয়েছে দুজন বা তিনজন। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই আবার নন-এমপিওভুক্ত।

গত ছয় বছর ধরে এগিয়ে মেয়েরা : অন্যান্য বছরের মতো এবারো এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এমনকি মাদ্রাসা বোর্ডেও এগিয়ে মেয়েরা। পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে এ বছরও এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। চলতি বছর ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পূর্ণাঙ্গ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে বড় ব্যবধানে। জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন ছাত্র; আর ৯৮ হাজার ৬১৪ জন ছাত্রী। সেই হিসাবে ১৩ হাজার ৬৫০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। গত ছয় বছর ধরেই এসএসসিতে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ছাত্রী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।

গতবার জিপিএ-৫ পাওয়া ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২১ জন ১৫৬ জন ছিল ছাত্র; আর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছিল ছাত্রী। এ বছর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ জন, পাস করেছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন। অন্যদিকে ১০ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। চলতি বছর ৯টি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ৯৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছাত্র ও ৯৪ দশমিক ৭২ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। মানবিকে ৬৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছাত্র ও ৭৪ দশমিক ৭২ শতাংশ ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছাত্র ও ৮৫ দশমিক ৩২ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বোচ্চ পাসের হার বিজ্ঞান বিভাগে, সর্বনিম্ন মানবিকে : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গ্রুপভিত্তিক সর্বোচ্চ পাস বিজ্ঞান বিভাগে এবং নিম্নমুখী মানবিক বিভাগে।

প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ২ লাখ ৭৯ হাজার ২১৯ জন ছাত্র অংশ নেয়। এদের মধ্যে কৃতকার্য হয় ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৬ জন। এছাড়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্রী অংশ নিলেও এদের মধ্যে পাস করে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯২৯ জন। গ্রুপভিত্তিক বিজ্ঞান বিভাগে মোট পাসের হার ৯৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। অপরদিকে মানবিক বিভাগে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৯২৮ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪১০ জন। এছাড়া ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৩৬ জন ছাত্রী অংশ নিলেও এদের মধ্যে পাস করে ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৭ জন। মানবিকে মোট ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭২ জন ছাত্র অংশ নেয়। এদের মধ্যে পাস করে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৫ জন। এছাড়া ১ লাখ ২২ হাজার ৩৯১ জন ছাত্রী অংশ নিলেও পাস করে ১ লাখ ৪ হাজার ২৯ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় মোট পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ।

দুদিক দিয়েই এবার সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিলেট বোর্ড : এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে এবার সবচেয়ে বেশি, ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে, ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালে যশোর বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আর সবচেয়ে কম পাশের হার ছিল সিলেট বোর্ডে, ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। প্রতিবারের মতো এবারো জিপিএ-৫ এ সবার উপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, এ শিক্ষা বোর্ডের ৪৬ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে। ২০০১ সালে এসএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর থেকেই এই স্থানটি ধরে রেখেছে ঢাকার শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এই বোর্ডের ৫ হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মাউশির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ফলাফলের দিক দিয়ে সিলেট কেন বারবার পিছিয়ে পড়ছে তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়ছে। শিক্ষায় সমতা আনতে ওই এলাকার হাওড়-বাঁওড় ও চা বাগানগুলোতে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বরিশাল বোর্ডের বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন বলেন, বরিশালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।

এবার জিপিএ-৫ ও পাসের হার কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান জানান, গণিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। মানবিকে অন্যান্য বছরও ফেলের হার বেশি থাকে, এবারো ব্যতিক্রম হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App