×

শিক্ষা

কাগজ সংকটে অনিশ্চিত জানুয়ারির বই উৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২৪ পিএম

কাগজ সংকটে অনিশ্চিত জানুয়ারির বই উৎসব

ছবি: ভোরের কাগজ

কাগজ সংকটে অনিশ্চিত জানুয়ারির বই উৎসব

ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা এবং হঠাৎ করে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে আগে থেকেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এতদিন বিষয়টি পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘অন্দরে’ ঘুরপাক খেলেও শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। এদিন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা বক্তৃতায় স্পষ্ট বলেছেন, বাজারে মারাত্মকভাবে কাগজের দাম বেড়ে গেছে। শুল্ক না কমালে কাগজ আমদানি করা যাবে না। আর কাগজ আমদানি না হলে ১ জানুয়ারির মধ্যে বিনামূল্যের পাঠ্যবই দেয়া সম্ভব হবে না। তবে প্রকাশকদের কথা শুনে শিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বই আমার লাগবে এবং ১ জানুয়ারিই লাগবে।

প্রসঙ্গত, প্রকাশকদের কাছ থেকে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ার বক্তব্য আসায় এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, এবার বিনামূল্যের পাঠ্যবইও সরকার নির্ধারিত সময়ে দিতে পারবে না। চলতি বছর বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীরা পেয়েছে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এবার কাগজ সংকটের কারণে সব পাঠ্যবই হাতে পেতে শিক্ষার্থীদের হয়ত মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সংকটের কারণে গত কয়েকমাস ধরেই সব কিছুর দাম বাড়তি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এগুলো জেনেও সময়োচিত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে সময়মত পাঠ্যবই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থার তৈরি হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ অভিযোগ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি প্রকাশকদের এই অভিযোগ শুনে বলেছেন, কয়েকদিন আগে কাগজ বিক্রেতাদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন ১ জানুয়ারিতে বই দিতে পারবো। এরপরও কথার খেলাপ হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সন্তানদের শিক্ষার সঙ্গে আপসের সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বই আমার লাগবেই এবং ১ তারিখেই লাগবে।

সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কায়সার-ই-আলম, শ্যামল পাল, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন।

[caption id="attachment_379147" align="aligncenter" width="1344"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বইয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারা শিক্ষা পরিবারের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন সুলেখক, সম্পাদক ও পাঠক। তার সময়ে প্রকাশনা শিল্প খারাপ অবস্থায় থাকবে সেটি হতে পারে না। বিশ্ব একটি কষ্টকর সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মুদ্রণ শিল্পের যা যা সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, পহেলা জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। কাগজের সংকট নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন কাগজ সংকট হবে না। বই আমাদের লাগবে পহেলা জানুয়ারিতে, এতে কোনো ছাড় নেই। মিল মালিকরা যদি তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরাও ব্যবস্থা নেবো। বিদেশ থেকে আমদানির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতিও দেন শিক্ষামন্ত্রী। এসময় প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল। বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির পরিচালক এবং ৬৪ জেলা ও উপজেলাগুলোর পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর মূদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিক ও পেপারমিল মালিককের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, দেশীয় পেপার মিল মালিকরা দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে কাগজ সরবরাহ করবেন। দেশীয় পেপার মিল মালিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে এবং চাহিদা অনুযায়ী কাগজ সরবরাহ না করলে মূদ্রণ শিল্প মালিকদের কাগজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। আগামী বছর ১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পেপার মিল মালিক, মুদ্রণ শিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে স্পেসিফিকেশন ঠিক করার সময় ব্রাইটনেস বিষয়ে পেপার মিল মালিকদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রকাশকদের অনুষ্ঠানে সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, দুঃখের কথা বলার জন্য আমরা কারো কাছে যেতে পারি না। আমাদের কিছু পুস্তক প্রকাশনী আছে, যারা ডোনেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে ধ্বংশ করতে চায়। আমরা আপনাদের সহায়তায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চাই। সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তার ৫০ শতাংশ কাগজ শুল্কমূক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। সহ-সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এখনো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় চাইনিজ মেলামাইনের প্লেট উপহার দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এসব প্রতিযোগিতায় বই উপহার দেওয়া হোক। উপদেষ্টা ওসমান গণি বলেন, সমিতির ২৬ হাজার সদস্য শুধু পুস্তক ব্যবসায়ী নন, তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেন। এনসিটিবি কখনই বই ছাপানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে সঠিক কথা বলে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোনো প্রণোদনা পাননি, কোনো সহযোগিতা পাননি। করোনায় তারা অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা সরকারের পক্ষের শক্তি। প্রতিটি স্কুলে পাঠাগার যেন সচল থাকে- সেই আহ্বানও জানান তিনি। পুস্তক বাধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, কারোনা মহামারিতে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। এর আগে আয়োজক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চ চত্বরে বইমেলার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বার্ষিক প্রতিবেদনের মোরগ উন্মোচন করেন তিনি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতৃবৃন্দ, পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, লেখক, বিক্রেতা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App