×

অর্থনীতি

ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি হচ্ছেন সৈয়দ আব্দুল বারী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৭:৫৭ পিএম

ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি হচ্ছেন সৈয়দ আব্দুল বারী

শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারী

শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে জরুরি বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ভার্চুয়াল বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার। এ সময় অন্যান্য পরিচালকরাও যুক্ত ছিলেন। সভায় এমডি নিয়োগের নির্ধারিত এজেন্ডা অনুযায়ী আলোচনা শুরু হলে সবার সম্মতিতে বর্তমানে ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পরে অনুমোদনের জন্য আজই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়।

শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারী ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজকল্যাণ বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের মাধ্যমে তার ব্যাংকিং পেশা শুরু করেন। এরপর আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনের ১২ বছর শাখা ব্যাংকিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে তিনি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হন।

জানা গেছে, প্রায় তিন মাস ধরে এমডি ছাড়াই চলছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। সম্প্রতি অনুমোদন ছাড়া ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়মের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে ব্যাংকটি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবারের মধ্যে একজন স্থায়ী এমডি নিয়োগ দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকটির এমডি হিসেবে চৌধুরী মোসতাক আহমেদের মেয়াদ গত ২৮ জানুয়ারি শেষ হয়। এরপর অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুলকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার সময়েই ব্যাংকটিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। আবার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের সব ধরনের নথিপত্রে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীকালে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এ এস এম বুলবুলের মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নির্দেশের পর এ এস এম বুলবুলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আবদুল বারীকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয় ব্যাংকটির পর্ষদ। এরপর থেকে এ এস এম বুলবুল আর ব্যাংকে আসছেন না। বুধবার ব্যাংকটির স্থায়ী এমডি পদ শূন্য থাকার তিন মাস পূর্ণ হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকটি নতুন করে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ১১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণের ওপর প্রথম প্রান্তিকে সুদ যুক্ত হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। সব মিলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। তবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে মাত্র ৫২১ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির ৪০টি শাখা লোকসানে রয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে আমানত ছিল ৪৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার দীর্ঘ দিন ধরে ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী তাদের স্থায়ী এমডি নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘদিন এ পদ খালি রাখা যাবে না। এ ধরনের একটি নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনেও এটি বলা আছে। আইন অনুযায়ী তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন যদি তারা পরিপালন করে তাহলে সমস্যা নেই। আর যদি না করে তাহলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫-ক ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের এমডি পদ একাধারে তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে এমডি পদ পূরণ না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে, যিনি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। আইন অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংকটিতে প্রশাসক দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App