ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা। ছবি: সংগৃহীত
দেশের অধিকাংশ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানেরা এখন থেকে কোনো ব্যাংক ডলার কেনাবেচায় ১২০ টাকার বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ঢাকায় এক বৈঠকে সরকারি–বেসরকারি ৪৭টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানেরা এ সিদ্ধান্ত নেন। একাধিক ব্যাংকের কোষাগারপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
রেমিট্যান্স ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ডলারের দাম সম্প্রতি বৃদ্ধির কারণে তারা এ সীমা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়াই এ দুই খাতের ডলারের দাম চড়া ছিল।
বৈঠকে ট্রেজারি প্রধানেরা আলোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা ঘোষণা করেছেন, ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা উদ্ধৃত করবে এবং এ হার আন্তঃব্যাংক ও আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। রপ্তানি আয় নগদায়নের জন্য ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুসরণ করবে। এছাড়া এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করতে ও বাজারের অবস্থার ওপর মতামত শেয়ার করতে ট্রেজারি প্রধানেরা সপ্তাহে এক বা দুবার বৈঠক করবেন।
আরো পড়ুন: দেশে বেকারের সংখ্যা কত, যা জানা গেলো
একাধিক ব্যাংকের কোষাগারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশি বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো। এত দিন ধরে একেক ব্যাংক একেক দামে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনে আসছিল এসব প্রতিষ্ঠান থেকে। এর ফলে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে একধরনের মনোপলি বা একচেটিয়া বাজার গড়ে তোলে। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক এসব এক্সচেঞ্জ হাউসের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। কারণ, বেশি দাম পেতে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা প্রবাসী আয় ধরে রাখত বেশি লাভের আশায়। কোনো কোনো ব্যাংক বেশি প্রবাসী আয় আনতে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে ডলারও সংগ্রহ করছিল। তাতে কোনো কোনো ব্যাংক বেশি প্রবাসী আয় পাচ্ছিল আর কেউ কেউ কম। এমন পরিস্থিতিতে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর এই একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধে উদ্যোগী হন কোষাগারপ্রধানেরা।
আরো বলেন, বাজারে ডলারে দামের গতিবিধি নিরীক্ষণ করতে এবং একটি কার্যকর বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের বিকাশের জন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে পরে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ফের সিন্ডিকেটের ধান্দা!
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছে যে ডলার বিক্রি করে, তার দামও নির্ধারিত হয়েছে ১২০ টাকা। ২৮ আগস্ট আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় হাতবদল হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়। এখন ব্যাংকের কোষাগারপ্রধানদের নেয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রবাসী আয় ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের দাম একই হবে।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আহসান এইচ মনসুর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার–সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী ডলার লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারে ১২০ টাকা পর্যন্ত চার্জ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২৮ দিনে অর্থাৎ ১ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ২০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। যা ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের একই সময়ে এসেছিল ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে, গত বছরের আগস্টের চেয়ে চলতি বছরের আগস্টের প্রথম ২৮ দিনে ৬৪ কোটি ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।