ব্রেকিং |
সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স দখলের ষড়যন্ত্র চলছে, অচলাবস্থায় ব্যবসা কমেছে ৫০ শতাংশ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সকে ব্যর্থ কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি কোম্পানিটি দখলের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কোম্পানির ১৭ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। উচ্চ আদালত ওই বরখাস্ত আদেশ বাতিল করেছে। বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকের স্বেচ্ছাচারিতায় অচলাবস্থার কারণে ইতোমধ্যে কোম্পানির ৫০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। প্রশাসককে অপসারণসহ ৮দফা দাবি না মানলে কর্মবিরতি পালনসহ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বুধবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, ইনস্যুরেন্স বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় বর্তমান প্রশাসক এসএম ফেরদৌসের নেতৃত্বে দেশের একমাত্র লাভজনক বিমা কোম্পানি এখন উল্টো পথে হাঁটছে। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে এই প্রথম গ্রাহকের বিমা দাবির ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও তা পূরণ করতে পারেনি কোম্পানি। নানান অজুহাতে কোম্পানির সব প্রকার সেবা প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করছে। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ২৮ হাজার পরিবার ও তাদের উপর নির্ভরশীল ৭০ হাজার বীমা পরিবারের সদস্য এবং ৮ লক্ষাধিক গ্রাহক সংকটের চরম মুখে পড়েছে।
মালিকানা বদলের মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স ধ্বংসের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ।
তিনি বলেন, আগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিল বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতির তদন্ত না করে কোম্পানির স্বার্থ-বিরোধী একের এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শীর্ষ নির্বাহীদের বরখাস্ত করেন। যা পরে উচ্চ আদালত রহিত করে। নিয়ম- বহির্ভূতভাবে নিজস্ব লোকজন নিয়োগ দিয়েছেন। সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ ও কর্ম পরিবেশ নষ্ট করে কর্মীদের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য করেছেন।
বিমা খাতে অভিজ্ঞতা শূন্য বর্তমান প্রশাসককে সরিয়ে সেখানে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগসহ ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন, কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক সাহিল।
তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগার কর্ম বিরতি চলবে। কোনভাবেই কর্মীরা কোম্পানিটি ধ্বংসের আয়োজন মেনে নেবে না। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, সোনালী লাইফের সব কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। নিরপেক্ষ অডিট কোম্পানি দিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করে রিপোর্ট প্রকাশ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বেতন নীতিমালা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিধান যথাযথ প্রতিপালন করতে হবে। এজেন্টদের অ্যালাউন্স ও বোনাস দ্রুত দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধান কার্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার মাঝে ভয় ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সারাদেশের প্রায় ২৭ হাজার বীমা কর্মীর কমিশনের টাকা আটকে রাখার থেকে শুরু করে আইটিসহ বিভিন্ন বিভাগের নিবেদিত কর্মীদের নামে সহকর্মীদের দিয়ে জোর করে মামলা করানোর হুমকি দেওয়া, কথায় কথায় কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ, অতীতের সব রেওয়াজ ভেঙে নিজের বেতন ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ, সাথে বোনাস বাবদ আরও ৩ লাখ টাকা, ১৭ জন শীর্ষ নির্বাহী ও ৩৩ জন ড্রাইভারের জুন মাসের বেতন আটকে রাখা, ডিএমডি পদমর্যাদায় নিযুক্ত তার সাবেক ৪ সহকর্মীকে গড়ে ২ লাখ টাকা বেতনে সোনালী লাইফে নিয়োগের এক মাসের মধ্যেই নিয়মের বাইরে গিয়ে উৎসব ভাতা প্রদান এবং কম বেতনের কর্মীদের জন্য ভর্তুকিমূল্যে খাবার সরবরাহের ক্যান্টিন ভেঙে সশস্ত্র আনসারদের আবাসনের ব্যবস্থাসহ কোম্পানি স্বার্থ-বিরোধী নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।