লুব্রিকেন্ট অয়েলের শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণে ডলার পাচারের শঙ্কা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
আমদানিকৃত সব প্রকার লুব্রিকেন্টস অয়েলের আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (ওভার ইনভয়েস) অস্বাভাবিক হারে নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচারের হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই ফিনিশড লুব্রিকেন্টস অয়েলের উপর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য পরিবর্তন দাবি জানান লুব্রিকেন্টস ইম্পোর্টারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জমসের আলী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন, মো. আবু সাঈদ, মো. আবুল কাশেম জামাল, পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আসলাম পারভেজ, মো. জাকির হোসেন, খোরশেদ আলম হাওলাদার, মো. মামুন মুন্সী, মো. মোকছেদুর রহমান ও আনাস মাহমুদ আসলাম প্রমুখ।
লুব্রিকেন্টস আমদানিকারকদের এ বাণিজ্য সংগঠন বলেন, দেশে বছরে প্রায় দুই লাখ সত্তর হাজার টন চাহিদার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ফিনিশড লুব্রিকেন্টস যোগান দিয়ে আসছে এই সংগঠনের আওতাভুক্ত সদস্যরা। এই সেক্টরের আমদানিকারকরা প্রতি বছর রাজস্ব খাতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রাখছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সব প্রকার ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের শুল্কায়ন মূল্য প্রতি মেট্রিকটনে দুই হাজার ডলার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মিনারেল প্রতি টন ২৫০০ ডলার, সেমি সিনথেটিক প্রতি টন ৩২০০ ডলার, সিনথেটিক প্রতি টন ৫০০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ মিনারেল, সেমি সিনথেটিক, সিনথেটিক লুব্রিকেন্টসের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রকৃত মূল্য যথাক্রমে ১৬০০, ১৭০০, ২০০০ ডলার। বাজার মূল্য থেকে শুল্কায়ন মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করার ফলে মিনারেল ১২০০ ডলার, সেমি সিনথেটিক ১৫০০ ডলার, সিনথেটিক ৩০০০ ডলার পাচার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন: শুরু হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’
জমসের আলী বলেন, লুব্রিকেন্টস অয়েলের এনবিআর কতৃর্ক আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (ওভার ইনভয়েস) অস্বাভাবিক হারে নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচারের পথ উন্মুক্ত হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এইচএস কোড সংযোজন করায় এই খাতের ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবে। অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের ফলে পরিবহন, শিল্প কল-কারখানা, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্ট, কৃষি উৎপাদন, গার্মেন্টস শিল্পে খরচ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। লুব্রিকেন্টস মূল্যবৃদ্ধি হলে তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সব নিত্যপণ্য সামগ্রীতে। সরকারের বর্তমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মোবারক হোসেন বলেন, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এই অযৌক্তিক শুল্কায়ন মূল্য কমানোর দাবিতে আলাদা আলাদাভাবে এনবিআরকে চিঠি প্রেরণ করা হয়। আমরাও এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এনবিআর কর্মকর্তাদের এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার চিত্র তুলে ধরে এর সমাধান দাবি করি। কিন্তু ৩০ জুন ২০২৪ বাজেট ঘোষণায় দেখলাম আমাদের সমস্যা গুলো সমাধানের ক্ষেত্রে এনবিআর কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। এনবিআর এই অস্বাভাবিক শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধির ফলে এই সেক্টরে শত শত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে উচ্চমান সম্পূর্ণ ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের সংকট ব্যাপকভাবে দেখা দেয়ার পরিবেশ তৈরি হবে এবং ভেজাল ও নিম্নমানের লোকাল লুব্রিকেন্টস বাজারে ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে।
অর্থপাচার রোধ, বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রক্ষা, পরিবহন, শিল্প কল-কারখানায়, কৃষি, বিদ্যুৎ খাতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ন্যায্যতার জন্য ফিনিশড লুব্রিকেন্টস অয়েলের উপর ২০২৪-২৫ বাজেটে বাজার মূল্যের অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ২০০০ ডলার নির্ধারণ করার দাবি তোলা হয় সংবাদ সম্মেলন। সেইসঙ্গে এ সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংগঠনের সদস্যরা।