×

অর্থনীতি

পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২৯ পিএম

পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ

ছবি: ভোরের কাগজ

ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দাম) বেধে দেয়ায় গত দেড় বছরে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপক হারে কমে গেছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারে উভয় সংগঠনের নব-নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় ডিবিএ’র পক্ষে প্রেসিডেন্ট ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইমিন্টে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমর হায়দার খানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সভায় সিএমজেএফ’র পক্ষে প্রেসিডেন্ট এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া, জেনারেল সেক্রেটারি আবু আলী, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট বাবুল বর্মণ, জয়েন্ট সেক্রেটারি ইব্রাহিম হোসেন রেজওয়ান, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মাহফুজুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) বেঁধে দেয়ায় গত দেড় বছরে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপক হারে কমে গেছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। বিগত দেড় বছরে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখানে কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না, প্রায় ২০ মাস হতে চললো। ব্রোকারেজ হাউস ২৫০ এবং আরও ৭০টির মতো ট্রেকহোল্ডার আছে। সব মিলিয়ে ৩২০টির মতো কোম্পানি এখানে রান করছে। ৮০ শতাংশের মতো কোম্পানি তার পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না, আজকে প্রায় দেড় বছর। মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে। আমাদের ডিমিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জ মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ) হয়েছে ২০১৩ সালে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়েছে, তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে ১০ বছর হয়ে গেছে। এই ১০ বছর পর আমরা যেটা বিশ্বাস করি, এটা (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) এখন রিভিউ করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে যদি তুলনা করি পুরো ইকোনমি এগিয়ে যাচ্ছে একভাবে, আর আমরা অন্যভাবে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে যে আইপিও এসেছে আমি মনে করি তা রিভিউ করার সময় এসেছে।

ডিবিএ’র সাবেক সভাপতি ও গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, আমাদের যে তিনটি ব্রোকারেজ হাউজের কথা বলা হয়েছে, এই তিনটি হাউজের এই অবস্থার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ডিএসই’র দায় আছে। আমরা দেখতে পেরেছি শুরুতে হাউজগুলোর সমস্যা কিছু খুবই কম। ধীরে ধীরে সমস্যা বড় হয়েছে। অসহযোগিতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফ্লোর প্রাইসের মতো জঘন্য ঘটনা আবার বিপদে ফেলেছে। স্বল্প সময়ের জন্য এটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু এতো দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা গ্রহণযোগ্য না।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজারের আইন-কানুনগুলো মার্কেট ফ্রেন্ডলি হতে হবে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও মহাব্যবস্থাপক মাজেদা খাতুন বলেন, আমি বিএমবিএ’র নতুন সভাপতি হয়েছি। আশাকরি নতুন বছরে আর্থিক খাতে ভালো হবে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমরা চাচ্ছি একটা ভালো শেয়ার মার্কেট। শেয়ার মার্কেট ভালো হলে শিল্পায়নের সহযোগি হবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। পুঁজিবাজারে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেখতে পারি ব্যাপক মানুষ শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণ করছে। আমরা চাই আমাদের শেয়ারবাজারেও ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ হোক।

ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ কর্মী চলে গেছে। বড় হাউজগুলো কোনো রকমে টিকে আছে। ছোট হাউজগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের তিনটি হাউস সমস্যায় পড়ে যাওয়ার তথ্য আপনারা পেয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা করেন আমরা আপনাদের একটি ভালো বাজার উপহার দিতে পারবো।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বাজারের উন্নতি সম্ভব না। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ এটা খুবই কম। কর হার বাড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সব সময় এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সুতরাং ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করি। সবাই মিলে দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে একসাথে কাজ করবো। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসলে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি।

এদিকে সভায় সিএমজেএফ’র সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভুঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে গেছে সেভাবে পুঁজিবাজার উন্নতি হয়নি। যখন দেশের অর্থনীতি ভালো ছিল তখন যেমন পুঁজিবাজার খারাপ ছিল বর্তমানে অর্থনীতি কিছুটা মন্দা, এখনও শেয়ারবাজার খারাপই রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস একটা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। সঠিক সময়ে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারায় অনেকের পুঁজি আটকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বিনিয়োগকারীরা পরিত্রাণ চায়। সবার প্রত্যাশা বাজারের লেনদেন স্বাভাবিক গতিতে চলুক। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ডিএসই ও সিএমজেএফ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে।

সিএমজেএফ’র সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা যদি পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে দেখতে চাই তাহলে বাজারে সকল স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে যদি একটি ইকো সিস্টেম তৈরি করা যায় তবে বাজারে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবে। ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে আপনাদের যে উদ্বেগ তা আমরা লিখা-লিখির মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। সরাসরিও আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি। এর ফলে যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে তা যদি মানুষের মাঝে থেকে যায় তাহলে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা আর বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।

সিএমজেএফ’র সেক্রেটারি আবু আলী বলেন, সিএমজিএফ পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। এছাড়া আমরা বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি যা বাজারের উন্নয়নে কাজে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার উন্নতি করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App