×

অর্থনীতি

থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৪৫ এএম

থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি

পৃথিবী

থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি

করোনার ধাক্কায় ধসের মুখে বিশ্ব অর্থনীতি। থমকে গেছে উৎপাদন। বেকার হয়ে পড়েছেন কোটি কোটি মানুষ। রাতারাতি তলানিতে নেমে গেছে বড় বড় কোম্পানির শেয়ারমূল্য। এর জেরে গত মাসের শেষ সপ্তাহে পুঁজিবাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম সামগ্রিক উৎপাদন সংকুচিত হচ্ছে বিশ্বে। এটি যে কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশে ঘটছে তা নয়, ঘটছে উদীয়মান অর্থনীতির এশিয়া অঞ্চলেও। দিল্লির রাস্তার হকার থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের শরীরচর্চার প্রশিক্ষক পর্যন্ত, বিভিন্ন স্তরে কাজ হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে তিন সপ্তাহেই বেকার হয়েছেন প্রায় দুই কোটি মানুষ। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি পরিবার আর ব্যবসাগুলো শুধু টিকে থাকার জন্যই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয় সহায়তার ওপর। কিন্তু রাষ্ট্রেরও কর বা অন্যান্য আয় কমে গেছে, ফলে ঋণের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে রাষ্ট্রকেও। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, করোনার কারণে চলতি বছরে বৈশ্বিক বাণিজ্য-বিনিময় ১৩ থেকে ২৩ শতাংশ কমে যাবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মানব-সভ্যতাকেই টার্গেট করেছে করোনা ভাইরাস। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ পরিস্থিতিতে শুধু অনাহারেই বিশ্বে প্রায় তিন কোটি মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।

প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯৩০ সালে বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মন্দা দেখা দেয়। কিন্তু তাকেও ছাড়িয়ে যাবে এবারের মন্দা। এদিকে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ৪০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা-সংক্রমণের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও আগামীতে এই অঞ্চলই হয়ে উঠতে পারে করোনার ‘হটস্পট’। এসব অঞ্চলে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষরাই অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। হঠাৎই কাজ হারিয়ে ফেলেছেন দিনমজুর বা অস্থায়ী কর্মীরা। চলতি আর্থিক বছরে এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির হার কমে ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যদিও করোনা-সংক্রমণের আগে এ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিল তারা।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মালদ্বীপ। পর্যটনশিল্পের ওপরে নির্ভরশীল মালদ্বীপের জিডিপি ১৩ শতাংশ নিচে নেমে যেতে পারে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ ও ২ দশমিক ২ শতাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ১৫ মাসে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রগুলো চাঙ্গা করতে ১৬ হাজার কোটি ডলারের বেশি আর্থিক সাহায্য দিতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। করোনার কারণে আর্থিক মন্দার মধ্যে পড়ে যাওয়া পাকিস্তানকে আরো প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিতে যাচ্ছে আফ্রিকায়। করোনা মহামারি শুরুর অনেক আগে থেকেই নানা দুর্যোগে বিশ্বের প্রায় ১২ কোটি মানুষ খাবারের অভাবে ভুগছিলেন। এর অন্যতম ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়া। অন্যদিকে আফ্রিকার একটি আঞ্চলিক সংগঠনের বিশেষজ্ঞ ইসোফু বাউয়া জানান, এ অঞ্চলে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন। এদিকে করোনার কারণে কঠিনতম পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। দেশটির আয়ের প্রধান খাত পোশাকশিল্পে রপ্তানি কমেছে ৮৩ শতাংশ। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে। লকডাউনে বন্ধ রয়েছে ব্যবসা। অচল হয়ে পড়ছে বিশ্ব বাণিজ্য। এতে একের পর এক বাতিল হচ্ছে পোশাকের ক্রয় আদেশ। নতুন আদেশও আসছে না। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে রপ্তানি হয়েছিল ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পোশাক। গত মার্চেও বড় ধাক্কা খায় পোশাক খাত। এ মাসে ১৯৭ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের মার্চে ২৬৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ খাতের এক হাজার ১৪০টি কারখানার প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকদের বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক এ নিয়ে বলেন, এটা আমাদের একার সমস্যা নয়, বিশ্বব্যাপী সংকট। এখন আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে ক্রেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়।

এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে হাসপাতালগুলোতে এখন পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক। এ খাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে চায় বিজিএমইএ। এজন্য আগামী ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে রপ্তানিযোগ্য বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদন পরিকল্পনা নিয়েছে সংগঠনটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App