×

অর্থনীতি

নজরদারীর বাইরে ১৪ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি দোকানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৩:২১ পিএম

নজরদারীর বাইরে ১৪ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি দোকানি

দেশের পণ্যবাজারের সাম্প্রতিক ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় বাজার তদারকির উদ্যোগ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে মূলত বেসরকারি খাতের দখলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার। যার কারণে সরকার চাইলে সহসা কোনো পদক্ষেপ নিলে বাস্তবায়ন খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সারাদেশে সরাসরি বিপণনের সঙ্গে জড়িত ১৭ লাখ দোকানির মধ্যে ৩ লাখ দোকানে সরকারের নজরদারি থাকলেও বাইরে ১৪ লাখ দোকানি। বিশেজ্ঞরা বলছেন, নিত্যপণ্যের বিপণন-বিতরণসহ মজুদদারদের সব তথ্য রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা উচিত। এক্ষেত্রে এসব পণ্য বিপণনকারীদের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসা উচিত। এতে সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক থাকবে অন্যদিকে ভোক্তা অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে।

ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে চাল, চিনি, তেলসহ অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চালের বাজার পুরোটাই বেসরকারি খাত অর্থাৎ মিল মালিকদের হাতে। সরকার শুধু পণ্যমূল্য ঠিক রাখা ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বছরে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল কিনে। আরেকটি নিত্যপণ্য চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিনিকল করপোরেশন উৎপাদন করে ৬০-৭০ হাজার মেট্রিক টন। বাকি প্রায় ৯৫ শতাংশ চিনি বাজারে সরবরাহ করে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো।

বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। বিদেশ থেকে আমদানি হয় প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নষ্ট হয় প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। তাই ভোজ্যতেলের বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। যার কারণে বিদেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়ে। একইভাবে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যে বাজার ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বেশি। এক্ষেত্রে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরজুড়ে কঠোর তদারকির বিকল্প নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ১৭টি ভোগ্যপণ্য নিয়ে কাজ করছি। এর বাইরে সরকার চাইলে সহযোগিতা করে থাকি। তবে আমরা পণ্য বাজার স্বাভাবিক রাখতে রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছি। ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। যেমন সারাদেশে খুচরা ও মাঝারি পর্যায়ে প্রায় ১৭ লাখ দোকান সরকার মনিটরিং করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নৈতিকতা বজায় রেখে ব্যবসা করবেন এটাই আশা রাখি।

তিনি বলেন, সারাবিশে^ রমজান মাসে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দেন। মুনাফা কম করে থাকেন। আর আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য রমজান মাসকে বেছে নেন। এ কারণে বাজার তদারকি আরো বেশি শক্তিশালী করার পাশাপাশি গতিশীল করতে হবে। বাজার অনুসন্ধানে জানা গেছে, চেইন শপের বাইরে সরকারের নজরদারি তেমন একটা নেই। কারণ অনেক খুচরা ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীর তথ্যও তাদের কাছে নেই। এই কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত দামের তুলনায় দাম বেশি নিয়ে থাকেন।

সেক্ষেত্রে ভোক্তার কিছু করার থাকে না। আর ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তর জেল-জরিমানা করার পর ফের আগের জায়গায় ফিরে যান তারা। যার কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়। আর ভোক্তা অধিকারের বেশিরভাগ অভিযান শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে ঠকে যাওয়া ভোক্তার আর কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে দেশের অন্যতম গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বাজার মনিটরিং নিশ্চিত করতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি সব ধরনের ব্যবসায়ীদের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া সব ব্যবসায়ীকে সরকারি সংস্থার আওতায় রেজিস্টার্ড হতে হবে। আর সবাইকে বিপণন, বিতরণ, সরবরাহ, মজুদসহ সব তথ্য সরকারকে দিতে হবে। আর এই পদ্ধতি পুরোটাই করতে হবে অনলাইনের মাধ্যমে। সরকারের পক্ষ থেকে তা তদারকি এবং রিপোর্ট আকারে জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। এতে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসবে সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। আর সাধারণ ভোক্তা ও আতঙ্কিত হবেন না। আর চাইলেই কেউ ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করতে পারবে না।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে জানান, বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে বছরজুড়ে তদারকির বিকল্প নেই। আর যারা বাজারকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ট্যারিফ কমিশনের ক্ষমতা রয়েছে দাম বাড়ানো ও কমানোর। কিন্তু কী কারণে তেলের দাম বাড়ানো হলো তা জনসম্মুখে ব্যাখ্যা করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App