×

অর্থনীতি

জনতা ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৯, ০২:৪৬ পিএম

জনতা ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
বড় দুটি গ্রুপ ঋণখেলাপি হওয়ায় ২০১৮ সালে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তা সত্তে¡ও সরকারের নির্দেশনানুযায়ী ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা এবং নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কঠোর অনুশাসনে জনতা ব্যাংক অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও ব্যবসায়িক সূচকে ইতিবাচক সাফল্য অর্জন করেছে। আর এ সাফল্যকে আরো বেগবান করতে ২০১৯ সালকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করেছে জনতা ব্যাংক। গতকাল বুধবার জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ব্যাংকটির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ব্যাংকের বোর্ড রুমে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক এবং ব্যাংকের পরিচালক খন্দকার সাবেরা ইসলাম, মসিহ্ মালিক চৌধুরী এফসিএ, এ কে ফজলুল আহাদ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, অজিত কুমার পাল এফসিএ, মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, এ কে এম শামছুল আলম ব্যাংকের ডিএমডি মো. ইসমাইল হোসেন, মো. ফজলুল হক, মো. জিকরুল হক এবং মো. তাজুল ইসলাম ও কোম্পানি সচিব হোসেন ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, সিএফও এ কে এম শরীয়ত উল্যাহ এফসিএএসিসিএ-সহ মহাব্যবস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন। মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের যথাযথ নীতি নির্ধারণ, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তদারকি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সব স্তরে নির্বাহী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান-২০১৯ এর কার্যকর বাস্তবায়নসহ ইতিবাচক মানসিকতা ও যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে জনতা ব্যাংক ২০১৯ সালে প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা বিশ্বব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জিডিপি অর্জনকারী পাঁচ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হতে পারে। ২০১৮ সালে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার ছিল যা চলতি বছরে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আর তাই ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াটা এখন আর শুধু স্বপ্ন নয়, একটি সম্ভাবনা। দেশের এমন অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার হিসেবে জনতা ব্যাংককেও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। জনতা ব্যাংক কোনো প্রকার ফি/চার্জ না নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ নানা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা। এ সব দায়িত্ব পালন সত্ত্বেও জনতা ব্যাংক ২০১৮ সালে ৯৭৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। লুনা সামসুদ্দোহা বলেন, ব্যাংকের সব শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু, নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা প্রদানে জনতা ব্যাংকে কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠনের পরিকল্পনা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা উন্নীতকরণসহ সমসাময়িক প্রযুক্তি যেমন- ব্লক চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (এ আই), ইন্টারন্টে অব থিংস ইত্যাদি ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য প্রযুক্তিসহ ব্যাংকিং কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত গাইডলাইন, সার্কুলার ও বিধিবিধান পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে গ্যাপ এনালাইসিস এর ওপরও বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ জানান, ২০১৮ সালে ব্যাংকের মোট সম্পদ ৮৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সাল থেকে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৬ হাজার ৬৯ কোটি টাকা বেশি। একই বছরে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ৪ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়ে ৬৭ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে- যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ৭৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে- যা ২০১৭ সালে ছিল ৭১ শতাংশ, ২০১৮ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪১ কোটি টাকা, রপ্তানির পরিমাণ ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা এবং ফরেন রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৮ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ হতে ৪৮৪ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে ৩৪ কোটি টাকা নগদ আদায় করা সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে অর্থনৈতিক কর্মকা ণ্ড নারীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ, মহিলা উদ্যোক্তা বৃদ্ধি ও মহিলাদের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি মাসের ৩য় সপ্তাহে ‘মহিলা গ্রাহক সেবাসপ্তাহ’ পালন করছে জনতা ব্যাংক, কোর ব্যাংকিং সলিউশন (সিবিএস)-এর আওতায় ইতোমধ্যে ব্যাংকের সব শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে; ব্যাংকের ৭১৮টি শাখায় রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) চালুর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংক করপোরেট আয়কর বাবদ ১৪৮ দশমিক ৮৪ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন উৎসে কর, ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক হিসেবে সরকারি কোষাগারে মোট ৮১৪ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App