×

অর্থনীতি

নিবন্ধন ছাড়া বায়িং হাউসের ব্যবসা করা যাবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৫৭ পিএম

নিবন্ধন ছাড়া বায়িং হাউসের ব্যবসা করা যাবে না
দেশে পোশাক খাতের বায়িং হাউসগুলোর আওতায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৬ শতাধিক। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্রেতা ব্র্যান্ডের লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। সুনির্দিষ্ট পোষক প্রতিষ্ঠান না থাকায় এতদিন বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এখন থেকে ব্যবসা পরিচালনায় বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সর্বশেষ প্রকাশ হওয়া ‘বস্ত্র আইন-২০১৮’-তে এ বিধান রাখা হয়েছে। নতুন এ আইন অনুযায়ী বস্ত্র শিল্পের পোষক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বস্ত্র অধিদপ্তর। এ পোষক কর্তৃপক্ষ বস্ত্র শিল্পকে সহায়তা ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যে কোনো কার্যাবলি সম্পাদন করবে। আর পোষক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়া কোনো বস্ত্র শিল্প পরিচালনা করা যাবে না, যার মধ্যে বায়িং হাউসও রয়েছে। বস্ত্র শিল্পের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে এ আইনে। এতে বলা হয়েছে, বস্ত্র শিল্প বলতে তুলা, সুতা, ফেব্রিকস, বস্ত্র বা তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি, কম্পোজিট কার্যক্রম, অ্যালাইড টেক্সটাইল ও প্যাকেজিং উৎপাদন, বস্ত্র পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাত, আমদানি-রপ্তানি, বিক্রয় ও বাজারজাত, বায়িং হাউসসহ সব কার্যক্রম এবং এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। আইনটি প্রণয়নের ফলে এখন থেকে এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানকেই পোষক কর্তৃপক্ষ তথা বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবেন। বস্ত্র শিল্পের এসব কার্যক্রমকে আইনের আওতায় আনায় উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস এসোসিয়েশন (বিজিবিএ)। সংগঠনটির সভাপতি কেআই হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে কোনো অভিভাবক ছাড়াই বস্ত্র ও পোশাক শিল্প বড় হয়েছে। এখন একটি পোষক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিল্পটি অভিভাবক পেয়েছে। এর আওতায় আছে এ খাতের বায়িং হাউজগুলোও। সার্বিক বিবেচনায় বিষয়টি আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে বলেই মনে করছি। এদিকে বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে ব্র্যান্ড ক্রেতাদের লিয়াজোঁ দপ্তর হিসেবে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১০০। যদিও বিজিবিএর তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা দেড় শতাধিক। এ খাতের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এইচএন্ডএম, সিএন্ডএ, লিএন্ডফাং, মার্কস এন্ড স্পেনসার, ইন্ডিটেক্স, গ্যাপ, জেসিপেনিসহ আরো বহু বিশ^খ্যাত ব্র্যান্ড। সুনির্দিষ্ট কোনো পোষক কর্তৃপক্ষ না থাকায় বিনিয়োগ বোর্ডে ৫০ হাজার ডলার জমা দিয়ে লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে অনুমোদন নিতে হতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নতুন আইনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রজ্ঞাপন জারি করে বস্ত্র অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর লিয়াজোঁ কার্যালয়গুলোকে। বস্ত্র আইনের ধারা ১৪-তে পৃথকভাবে বায়িং হাউজের নিবন্ধনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, বায়িং হাউজের নিবন্ধন আবেদনের পদ্ধতি, নিবন্ধন সনদ প্রদান, নিবন্ধন স্থগিত ও নবায়ন, ফি নির্ধারণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারণ করতে পারবে। পোশাক খাতের সংযোগ শিল্প হিসেবে আশির দশকে দেশে গড়ে উঠতে থাকে রপ্তানিমুখী বস্ত্র কারখানা। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে হোম টেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পও। সরকারি কোনো আইন ছাড়াই গত ৩০ বছরে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেছে। শিল্প নিয়ন্ত্রণে এতদিন পর্যন্ত কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও তৈরি হয়নি। তবে বস্ত্র আইন প্রণীত হওয়ায় এখন নিবন্ধনের মাধ্যমে পোষক কর্তৃপক্ষের আওতায় আসছে এ শিল্পের ৯ হাজারের বেশি কারখানা। জানা গেছে, বস্ত্র অধিদপ্তরের আওতায় মোট ১০টি অঞ্চলে বস্ত্র শিল্পসংশ্লিষ্ট কারখানা রয়েছে প্রায় ৯ হাজার। কারখানাগুলো মোট সাতটি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল এন্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমএ), বাংলাদেশ লেবেল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিএলএমইএ), বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ), বাংলাদেশ স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলস এন্ড পাওয়ারলুম ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বিএসটিএমপিআইএ)। এ সাতটিসহ পোষক কর্তৃপক্ষের আওতায় বস্ত্র শিল্পসংশ্লিষ্ট সংগঠন রয়েছে মোট ১৬টি। কার্টন প্রস্তুতকারকসহ পোশাকের অনুষঙ্গ বোতাম, লেবেলের সংগঠনগুলোও আইনের আওতায় বস্ত্র শিল্পের অংশ। নতুন এ আইন অনুযায়ী, বস্ত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনও করা হবে পোষক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। পরিদর্শনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বস্ত্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শন করবেন। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষকে। সহযোগিতা না করলে তা হবে অপরাধ। পরিদর্শনের জন্য পোষক কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করবে সরকার। এ ছাড়া বস্ত্র শিল্পে ওয়ান স্টপ সার্ভিসও দেয়া হবে বস্ত্র অধিদপ্তরের মাধ্যমে। অনুমোদিত আইনের ব্যাপারে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নতুন কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিল্পকে সহযোগিতা করা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো ধরনের হয়রানি আমরা চাই না। এমনিতেই আমাদের অনেক কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হয়। ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে পারলেই আইনের সুফল পাওয়া সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App