×

অর্থনীতি

মালয়েশিয়ায় পণ্য রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৫১ পিএম

মালয়েশিয়ায় পণ্য রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ
শুল্ক বৈষম্যের কারণে মালয়েশিয়ায় পণ্য রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। দেশটিতে আশিয়ানভুক্ত থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো ফ্রুট, ড্রিংক ও বেভারেজ পণ্য রপ্তানি করছে বিনা শুল্কে, অথচ বাংলাদেশের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই পণ্য রপ্তানিতে গুনতে হচ্ছে ৩০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক। অতিরিক্ত এ শুল্ক দিতে গিয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ২০টি ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রহিমআফরোজ। কয়েক বছর ধরে গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত অটোমেটিভ ব্যাটারি মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মালয়েশিয়ার বাজারে ব্যাটারি রপ্তানি ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক ও সেলস এন্ড সার্ভিস ট্যাক্স (এসএসটি) হিসেবে আরো ১০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়ে। যেখানে চীন ও ভারত থেকে আসা ব্যাটারি মালয়েশিয়ার বাজারে ঢুকছে শূন্য শতাংশ শুল্কে। জানা যায়, ২৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধের পরও গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেছে রহিমআফরোজ। যেখানে চীন ও ভারত থেকে যাওয়া ব্যাটারির জন্য কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে না। শুল্ক বাধার পাশাপাশি গত অর্থবছরে হঠাৎ করেই ১০ শতাংশ এসএসটি আরোপ করে মালয়েশিয়া সরকার। এর প্রভাবে ব্যাটারির দাম বেড়ে যায় এবং ব্যবসা হারায় রহিমআফরোজ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মাত্র ৫২ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এ ভোক্তাশ্রেণিকে লক্ষ্য করে ২০১০ সাল থেকে দেশটিতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য, চিংড়ি, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, মসলা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, আলু, শাক-সবজি, সিরামিক টেবিলওয়্যার, হিমায়িত মাছ, তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও হালাল খাদ্যপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারণে প্রাণ ও স্কয়ার গ্রুপের ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো ও দুই দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশকে এফটিএর জন্য ২০১২ সালে প্রস্তাব দিয়েছিল মালয়েশিয়া। দীর্ঘ এ সময়েও দেশটির সঙ্গে এফটিএতে লাভ-ক্ষতির হিসাব চ‚ড়ান্ত হয়নি। এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের সময়েও দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এফটিএ স্বাক্ষরের আহবান জানান। সে সময় এফটিএর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী দাতো মুস্তফা মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফরের সময়ও এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে প্রস্তাব দেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি ৩৩০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এটা কোনো কাজে আসছে না। কারণ এর অধিকাংশ পণ্যই আমরা উৎপাদন করি না। বাংলাদেশ থেকে সিরামিক পণ্য রপ্তানি হয়। যেটির ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। পোশাক পণ্যের মধ্যে বেশি যাচ্ছে টি-শার্ট ও শার্ট। এটিও শুল্কমুক্ত নয়। একইভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে প্রাণ ও স্কয়ার। যারা আবার আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ওইসব দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার এফটিএ রয়েছে। সে কারণে ওইসব দেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। মালয়েশিয়া এফটিএর জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এফটিএ করলে লাভ না লোকসান সে বিষয়ে এত বছরেও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App