×

অর্থনীতি

ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য চায় এবিবি বাফেদা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৭ পিএম

ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য চায় এবিবি বাফেদা

ছবি: ভোরের কাগজ

ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ (এবিবি) প্রায়ই বৈঠক করে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু তাদের নির্দেশনা পালন করছে না অনেক ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজ। ডলার সংক্রান্ত নির্দেশনা ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে সংগঠন দুটি। এতে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে বাফেদা ও এবিবির নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২১ টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নির্বাহী পরিচালকেরা।

বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এবিবি-র চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী কোন ব্যাংক চাইলে ১১৬ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্স কিনতে পারবে। কিন্তু ১১১ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেনা। তারপরেও যারা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন তাদের সাথেও কথা হয়েছে। আমরা একত্রে বাজারটাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসব। আমদানিকারকেরা নির্ধারিত দামের ডলার পাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোন আমদানিকারকের এরকম অভিযোগ থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তাছাড়া সকল বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া যায় না বলেও মনে করেন এই ব্যাংকার।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, সংগঠন দুটির মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত ঠিকমতো বাস্তবায়নের জন্য সাহায্য চাইতে এসেছিলেন তারা। আমরাও জানিয়েছি সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। নির্দেশনার বাইরে কোন ব্যাংক অথবা এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি আগের চেয়ে শক্তভাবে তদারকি করা হবে এখন। তাই প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু এর বেশি নয়। যদি কেউ বেশি দামে ডলার কিনেও থাকে তাহলে ১১১ টাকাতেই বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে খোলা বাজারে খোজ নিয়ে যানা গেছে, একদিনেই সাড়ে ৪ টাকা বেড়ে আজ বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সায়। গতকাল বুধবারও যা ছিল ১২২ থেকে ১২৩ টাকা। এর আগে কখনো ডলারের দর এতো উঠেনি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১২২ টাকার বেশি দরে ডলার কেনার বিষয়টি জানাজানির পর খোলাবাজারেও নগদ ডলারের দর দ্রুত বাড়ছে। গত সপ্তাহেও প্রতি ডলার ১১৮ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।

ডলার সঙ্কটের এ সময়ে দর নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার মাধ্যমে দর ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দর রয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর বিক্রির দর নির্ধারিত আছে ১১১ টাকা।

প্রসঙ্গত, নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও ডলার সংকট কমছে না, বরং বাড়ছে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় নির্ধারণ করে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে প্রণোদনা দিতে পারবে বলে জানানো হয়। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক এ দরে ডলার পাচ্ছে না। এখন ১২২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছে অনেক ব্যাংক।

করোনার পর অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থপাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে করে ডলারের দর হুহু করে বেড়ে গত বছরের মাঝামাঝি ১১৪ টাকায় ওঠে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্ততায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুরুতে ডলারের দর রেমিট্যান্সে ১০৮ এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে উভয় ক্ষেত্রে ডলার কেনার দর অভিন্ন করা হয়।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডলারের দর ঠিক করার পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছর এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছর ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App