×

অর্থনীতি

ভোক্তা অধিকার বিতর্কের চ্যাম্পিয়ন পাবে ২ লাখ টাকা, রানার্সআপ ১ লাখ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৪ পিএম

ভোক্তা অধিকার বিতর্কের চ্যাম্পিয়ন পাবে ২ লাখ টাকা, রানার্সআপ ১ লাখ

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া ভোক্তা অধিকার সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য দুই লাখ টাকা ও রানার্সআপ দলের জন্য এক লাখ টাকা প্রাইজমানির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সোমবার (২ অক্টোবর) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ভোক্তা-অধিকার সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানানো হয়। কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ঢাকায় এই প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, অধিদপ্তরের প্রচারণামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, কম জনবল নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই এমন একটি বাজার ব্যবস্থা যেখানে ব্যবসায়ী জানবে যে ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজ করা যাবে না। তারুণ্যের উপর নির্ভর করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমি আশা করি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাঁদের লেখনি দ্বারা ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে তাঁদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।

আলোচনায় বিশেষ অতিথি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ ও জেল-জরিমানা বা শাস্তি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এতে ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। ঈদ, পূজা-পার্বণ বা কোন উৎসব আসলেই সুযোগ বুঝে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যাবে না। যোগান থাকা সত্বেও হঠাৎ করে চাহিদা বাড়লে মূল্য বৃদ্ধি করা উচিত নয়। তবে দেশে এখনো অনেক মানবিক ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট কোম্পানি রয়েছে যারা জনগণকে স্বস্তি দিয়ে দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করে। যশোরের মাংস ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম স্ব-উদ্যোগে যেভাবে মাইকিং করে গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা কমিয়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছে, তা সিন্ডিকেট, মজুদদার ও অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য বড় একটা উদাহরণ। তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন লাভ রেখেও ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা যায়।

তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান সময়ে অধিদপ্তরের নিকট মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। এখন কোন সমস্যা হলেই সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকে ভোক্তা অধিকার কেন আসে না? কিছু হলেই ভোক্তা সাধারণ এখন জানতে চান ভোক্তা অধিকার কি করছে? এটাই এই অধিদপ্তরের জন্য অর্জন।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আলু, পেঁয়াজ, ডিম, ডাব, কাঁচা মরিচ, স্যালাইন ইত্যাদি যে কোন পণ্যের মূল্য আকস্মিক বৃদ্ধি পেলে অধিদপ্তর সে সকল পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এই অধিদপ্তরের জনবল ও সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। অধিদপ্তর যত শক্তিশালী হবে প্রান্তিক পর্যায়ে ভোক্তারা তত সুফল পাবে। আলোচনা শুরুতে মহাপরিচালক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিকে এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ভোক্তা-সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে অধিদপ্তর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালিত করছে। প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমকে বেগবান করার লক্ষ্যে অধিদপ্তর এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ উদ্যোগে দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রথম পর্যায় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিজয়ী ৪টি দলের অংশগ্রহণে সেমিফাইনাল এবং পরবর্তীতে সেমিফাইনালে বিজয়ী দুই দল নিয়ে গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS(Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। তরুণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভোক্তা-সাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মহাপরিচালক আলোচনায় আরও বলেন, গত ০৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখ মাস্টার্স অব প্রফেশনাল মার্কেটিং (MPM) প্রোগ্রাম চালুকরণ ও বর্ণিত প্রোগ্রামসহ মার্কেটিং বিভাগের কারিকুলামে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর হয় । এর ফলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে আইনটি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা খাতে ভোক্তা-অধিকার বিষয়ে প্রচারে এক নব দিগন্তের সূচনা হয়। তাছাড়া যেকোনো তথ্যের জন্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বর ১৬১২১ এ ফোন করে ভোক্তাগণ তথ্য জানতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ডলারের মূল্যে ডিভ্যালুয়েশন, ফ্রেইট কস্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ ইত্যাদি কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সব সময় তাদের অভিযান পরিচালনা করছে। আলু ন্যায্যমূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে উৎপাদক পর্যায় থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত অধিদপ্তর লিংকেজ করে দিচ্ছে। যাতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করা যায়।

তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধু বিক্রেতা নয় ক্রেতাসহ সাধারণ জনগণকেও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই ভোক্তা অধিকার সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিং এর শেষ পর্যায়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালের প্রাইজমানি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, গ্র্যান্ড ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলকে ২ লক্ষ টাকা এবং রার্নাসআপ দলকে ১ লক্ষ টাকা প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App