×

অর্থনীতি

বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি কমানোর আশ্বাস বিডার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০২ পিএম

বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি কমানোর আশ্বাস বিডার
বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি কমানোর আশ্বাস বিডার
বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি কমানোর আশ্বাস বিডার

আজ থেকে ১৩ বছর আগে আকিজ সিএনজি প্ল্যান্ট স্থাপন করে। সে জন্য গ্যাস সংযোগ পেতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে আবেদন করেছিলো আকিজ গ্রুপ। তখন তিতাস কর্মকর্তাদের কথায় দুই বার ব্যাংক গ্যারান্টি এক্সটেন্ট করেছে এবং চার বার সিকিউরিটি মানি রিভাইজ করেছে আকিজ গ্রুপ। সংযোগ পেতে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দরজায় ঘুরে এখনও সংযোগ পায়নি আকিজ গ্রুপ।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) আয়োজিত স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন উইথ চাইনিজ ইনভেস্টরস: চ্যালেঞ্জেস, 0 এন্ড প্রসপেক্টস’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ও বিডার কর্মকর্তাদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন আকিজ গ্রুপের পরিচালক শেখ আমিন উদ্দিন মিলন।

এছাড়া বাংলাদেশে আসা বিনিয়োগকারীদের অনেক সময় ভিসা জটিলতায় পড়তে হয়। একইসঙ্গে ওয়ার্কপারমিট পেতেও নানা সমস্যা হয়। এসব ভোগান্তি কমাতে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। পাশাপাশি কারখানা স্থাপন বা পণ্য উৎপাদনে গ্যাস, এলসি, এনবিআর বা অন্য কোনো সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজন পড়লে তাও নিরসনে কাজ করবে বিডা। গতকাল শনিবার বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) আয়োজিত স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন উইথ চাইনিজ ইনভেস্টরস: চ্যালেঞ্জেস, এক্সপেকটেশনস এন্ড প্রসপেক্টাস’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিডার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব অভিজিৎ চৌধুরী।

এর আগে গতকাল শুক্রবার তিন দিনব্যাপী দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন-২০২৩ এর উদ্বোধন করা হয়। এ প্রদর্শনী কাল রবিবার শেষ হচ্ছে। প্রদর্শনী চলাকালে বিসিসিসিআই ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) যৌথভাবে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিক সেমিনার, দুই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির মেলা ও ব্যবসায়ী সভার আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীতে ৬০টির বেশি স্টলে বিভিন্ন চীনা ও দেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, আমরা চাই না বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ুক। এটা যেকোনো দেশ বা দেশীয় উদ্যোক্তারা হতে পারেন। সবার জন্য আমাদের সহযোগিতা থাকবে। আজ আমরা জানতে পেরেছি, আকিজ গ্রুপের এক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘসময় ধরে কারখানায় গ্যাস পাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটিকে আগামীকালের মধ্যে বিডা অফিসে আবেদন করতে বলেছি। আমরা কাল থেকেই তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করব। যেকোনো বিনিয়োগকারীর সমস্যাই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি।

চীনা এক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, ভিসা ও ওয়ার্কপারমিট পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ বিষয়ে বিডার নির্বাহী সদস্য বলেন, এখন সব কিছু অনলাইনের মাধ্যমে আপনি করতে পারবেন। কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে আপনার ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের কাজ করাবেন না। এতে সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনারা নিজেই অনলাইনে সব করতে পারবেন। এরপরও কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য আমাদের বলা হলে সব সময় আপনাদের সঙ্গে আছি।

চায়না এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের সভাপতি কে চ্যাং লিয়াং বলেন, গত কয়েক দশক ধরে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ দেশের স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে। ৬৭০টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রায় ১৫টি চীনা কোম্পানির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক হেডকোয়াটার্স এখানে রয়েছে। এসব কোম্পানি সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। তারা বাংলাদেশ ও চীনের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। বিনিয়োগের দারুণ পরিবেশ রয়েছে। আপনারা এখানে (বাংলাদেশে) বিনিয়োগ করুন। আমাদের জমি আছে, জমির সমস্যা নেই, আপনার বিনিয়োগ করতে আসুন, সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন।

বিসিসিসিআই’র সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, করোনাকালে প্রায় তিন বছর চীনের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে, বিনিয়োগ ব্যাহত হয়। চলতি বছর থেকে আবারও চীনের বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। আমাদের রিজার্ভ সংকটকালে চীনের বিনিয়োগ ভালো সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। দেশের মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি স্পেশাল চীনা ইকোনমিক জোন হচ্ছে। চীনের বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের ফলে আমরা টেকনোলজির বিষয়েও অভিজ্ঞতা লাভ করছি। আগামীতে চীনে আমাদের বাণিজ্য নিয়ে সেমিনার করার ইচ্ছা আছে।

সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডার ডিরেক্টর জেনারেল শাহ মোহাম্মদ মাহবুব। তিনি বলেন, কোন একটি দেশে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক ও পলিটিক্যাল স্থিতিশীলতা, ট্যাক্স অব্যাহতি সুবিধা ও অন্যান্য ইস্যু, যার সবকিছু বাংলাদেশে রয়েছে। ২০৪০ সালে উন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের অবকাঠামো-খাতে ৬০৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগের ৭০ দশমিক ৪২% রিইনভেস্টমেন্ট। অর্থাৎ, এখানে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তারা ব্যবসা করছেন, তারা মুনাফা করায় আবার পুনঃবিনিয়োগ করছেন। জেট্রো’র স্টাডির কথা তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এবছর প্রফিটিবিলিটি ফোরকাস্ট, বিজনেস কনফিডেন্স ফোরকাস্ট বেড়েছে এবং লস মেকিং ফোরকাস্ট কমেছে। অনুষ্ঠানে আকিজ গ্রুপের পরিচালক শেখ আমিন উদ্দিন মিলন অভিযোগ করে বলেন, টাঙ্গাইলে আকিজ সিএনজি প্ল্যান্টে এক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন তারা। প্ল্যান্টের মেশিনারি আমদানি করে সেট-আপ করা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় তা চালু করা যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চীনা দূতাবাসের কাউন্সিলর সং ইয়ং, এনবিআরের প্রথম সচিব (শুল্ক মূল্যায়ন ও পুরস্কার) খন্দকার নাজমুল হক, এনবিআর প্রথম সচিব (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) মনিরুজ্জামান, বিডার ডিরেক্টর জেনারেল শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বেপজার নির্বাহী পরিচালক তানভির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App