×

অর্থনীতি

আইনি দুর্বলতায় বাড়ছে খেলাপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০১:০৮ এএম

আইনি দুর্বলতায় বাড়ছে খেলাপি

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, খেলাপি কমানোর জন্য আইনগতভাবে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যে কারণে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়ে এখন ব্যাংকিং খাতের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, নতুন আইন যেটা হয়েছে; সেখানেও তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আর সুদের হার নিয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে যে পলিসি নেয়া হয়েছে, সেখানেও অস্পষ্টতা রয়েছে। তার মানে বাংলাদেশ ব্যাংক কেস বাই কেস সিদ্ধান্ত নিবে। ফলে এটা তদবিরের একটা দরজা খুলে দিল। সুতরাং হাতে ধরে দুর্নীতি করতে সুযোগ দেয়া হলো। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন আইনে খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ খুঁজে বের করা কঠিন। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১’র সর্বশেষ সংশোধনী ব্যাংকিং খাতের আর্থিক অবস্থাকে আরো দুর্বল করবে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৫-১৬ সাল থেকে খেলাপি ও ঋণগ্রহীতাদের শিথিলভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দিয়ে আসছে।

জাহিদ হোসেন বলছেন, অভ্যাসগত খেলাপিদের বিচারের আওতায় আনতে সরকার আইনে কোনো কঠোর বিধান রাখেনি। নতুন আইন, কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিকে ঋণ নিতে অনুমতি দেবে, এমনকি ওই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলেও। অতীতে এ ধরনের সুবিধা ছিল না বলে জানিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। নতুন আইনে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। এ বিধানটি ব্যাংকের সুশাসন দুর্বল করবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালকরা ভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেন তা কীভাবে আটকানো যাবে এই আইনে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, কিছু পরিচালক আছেন যারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। ইতোমধ্যে ব্যাংক বোর্ডের অনেক সদস্য একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন, যা ব্যাংকের সুশাসন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

নতুন আইনে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি বলতে কি বোঝায় তার একটি বড় সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এসব সংজ্ঞা ব্যাংকাররা কিভাবে প্রয়োগ করবেন সেটা আগামীতে বোঝা যাবে। তবে যেটা আশা করা হয়েছিল- খেলাপি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যে মানদণ্ডগুলো আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত সেগুলো থেকে সরে এসে খেলাপির স্বীকৃতির মানদণ্ড সিথিল করা হলো। সুতরাং এখন যে কেউ খেলাপির তালিকায় ঢুকলে তেমন কিছু এসে যাবে না।

ড. জাহিদ বলেন, নতুন আইনে আরেকটা বিপজ্জনক বিধান রাখা হয়েছে। কেউ যদি অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে গণ্য হয়, তবে তার অন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো ঋণ পেতে পারবে। আগে নিয়ম ছিল, কেউ খেলাপি হলে তার অধীনে থাকা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ পাবে না।

এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারের পদ্ধতি পরিবর্তন করলো, সেটাতে একটি বিষয় অস্পষ্ট। খেলাপি হওয়ার পরে সুদের উপর যে একটি জরিমানা দেয়া হতো (যা প্যানাল্টি নামে পরিচিত), আগে ছিল ২ শতাংশ যোগ করা যাবে। নতুন মুদ্রানীতিতে প্যানাল্টি নিয়ে একটি কনফিউশন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে সেখানে প্যানাল্টি নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। এতে ব্যবসায়ীরা খুশি হচ্ছেন। আবার ব্যাংকাররা বলছেন, প্যানাল্টি না থাকলে খেলাপি রোধ সম্ভব নয়।

সুতরাং খেলাপি কমাতে হলে আগে আইনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এরপর এর কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App