×

অর্থনীতি

রেকর্ড আমদানির পরও মসলার বাজার চড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৮:১৭ এএম

রেকর্ড আমদানির পরও মসলার বাজার চড়া
  • দাম বাড়েনি আন্তর্জাতিক বাজারে
  • সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেই
কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের মসলার বাজারে চলছে অস্থিরতা। কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগও উঠেছে সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। ঈদ ঘিরে আদা, রসুন, জিরা, হলুদ, মরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জয়ত্রীসহ সব মসলার চাহিদা বাড়ছে। এ চাহিদাকে পুঁজি করে দামও বাড়ছে। আমদানি করা মসলা গুদামে আটকে রাখারও অভিযোগ রয়েছে শতাধিক আমদানিকারকের বিরুদ্ধে। গত ৬ মাসে ৬১ হাজার টন মসলা আমদানি হলেও নানা অজুহাতে দাম কমছে না। জানা গেছে, কুরবানি সামনে রেখে চলতি মাসের ২০ দিনেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রেকর্ড ৩ হাজার টন দারুচিনি, ৭৬৫ টন এলাচ, ৪৩৭ টন লবঙ্গ এবং ৬৬১ টন জিরা আমদানি হয়েছে। তবে আমদানি বাড়লেও এখনো চড়া আদার বাজার। পেঁয়াজের দামও তুলনামূলক বেশি। সুখবর নেই জিরাসহ অন্যান্য মসলার বাজারেও। মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, জিরা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো মসলা পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে কাজ করা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, আমদানিনির্ভর মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন কিছু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে মসলা বিক্রেতারা বলেন, মসলার বাজার ঈদের আগে একটু বাড়তি থাকে। আর ক্রেতারা মনে করেন, গত কয়েক মাসে যেভাবে মসলার দাম বেড়েছে, তা সীমার বাইরে। খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক মেসার্স অসীম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার অসীম কুমার দাশ জানান, গত বছরও ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪-৮৫ টাকা; এবার একই ডলার কিনতে হয়েছে ১১২-১১৩ টাকায়। এর সঙ্গে ঋণপত্র খুলতে শতভাগ মার্জিন দিতে হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কুরবানির ঈদে মসলার বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনা করে ও দেশের বাজারে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মসলা আমদানি বাড়ানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি বার্মিজ আদা বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকায়, ইন্দোনেশিয়ার আদা বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০, ভিয়েতনামের আদা ২৫০ থেকে ৩০০ ও দেশি আদা ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন আদা আমদানি করা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন, মার্চ মাসে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন, এপ্রিল মাসে আমদানি করা হয়েছিল ২ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন। মে মাসে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৬৩ মেট্রিক টন। চলতি বছরের শুরুর দিকে গড়ে প্রতি কেজি আদার দাম ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। কয়েক মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। কারওয়ান বাজারে মসলা কিনতে আসা মায়মুনা বেগম বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা কিনব বুঝতে পারছি না। সবকিছুই কম কম করে কিনছি। খাচ্ছিও কম। টাকার কোনো মূল্যই নেই। খুচরা মসলা ব্যবসায়ী মেসার্স উপহার স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. চুন্নু বলেন, সব মসলারই দাম বেড়েছে। বাড়তি দামের কারণে মানুষ কিনছে কম। জিরার দাম ২ মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০০ টাকার বেশি বেড়েছে, লবঙ্গের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, গোলমরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকার বেশি। তিনি বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না। আগে প্রতিদিন লাখ টাকার মতো বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মতো। মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে বাজারে তুলনামূলক কম দামের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে রসুন। যদিও এ পণ্যটিও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা এবং চায়না রসুন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। পাইকারি বাজারে এলাচের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় এসেছে, যা আগে ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা। পাশাপাশি দারুচিনির দাম কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। এছাড়া গোলমরিচের কেজি ৬২০ টাকা ও জয়ত্রী ৩ হাজার টাকা। অস্থিরতা দেখা গেছে জিরার বাজারে। প্রতি কেজি ভারতের জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় এবং আফগানিস্তানের জিরার দাম ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। অন্যদিকে দাম বেড়েছে লবঙ্গের- যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। প্রতি কেজি লবঙ্গ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, গোলমরিচ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, দারুচিনি ৪০০ টাকা এবং প্রতি কেজি ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। জানা গেছে, দেশে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় মসলা। টেকনাফ, বেনাপোলসহ কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়েও আসছে মসলাজাতীয় পণ্য। চলতি বছর এ পর্যন্ত এলাচ এসেছে প্রায় দেড় হাজার টন। এগুলোর দাম পড়েছে ১৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি এলাচ আমদানি করেছে ৩টি প্রতিষ্ঠান। সবকটিই চট্টগ্রামের। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার এলাচ আসে দেশে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App