×

অর্থনীতি

ডিজিটাল ব্যাংকের সুবিধা-অসুবিধা ও লেনদেন করবেন যেভাবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ১১:৪৯ এএম

ডিজিটাল ব্যাংকের সুবিধা-অসুবিধা ও লেনদেন করবেন যেভাবে

প্রতীকী ছবি

  • ডিজিটাল ব্যাংকিং কাকে বলে
  • বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক
  • ডিজিটাল ব্যাংকে লেনদেন করার উপায়
  • ডিজিটাল ব্যাংক ও প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সাথে পার্থক্য
  • ডিজিটাল ব্যাংকের গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধা
ডিজিটাল ব্যাংকিং কাকে বলে ব্যাংকে না গিয়ে কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে সমগ্র ব্যাংকিং সুবিধার ব্যবহারকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং বলে। এখানে, স্পর্শহীন মুদ্রা দারা আর্থিক লেনদেন বা ব্যাংকিং কার্জক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা সশরীরে লেনদেনের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে এখনো টাকা লেনদেন, হিসাব দেখার মতো কিছু সেবা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়। কিন্তু নতুন যে ব্যাংক চালুর কথা বলা হচ্ছে, সেখানে সকল কাজ হবে প্রযুক্তি নির্ভর। কিন্তু ব্যাংকটি আমানত গ্রহণ, ঋণ দেয়া থেকে অন্যান্য সকল কাজই করবে। ডিজিটাল ব্যাংক শুধুমাত্র মোবাইল, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করেই করা যাবে।

ডিজিটাল ব্যাংকে লেনদেন কীভাবে হবে

মোবাইল বা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা এই ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন। তাদের সশরীরে ব্যাংকের কেনো শাখায় যেতে হবে না। ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম ইত্যাদি থাকবে না। তবে প্রধান একটি কার্যালয় থাকতে পারে। তাদের এটিএম কার্ড বা এজেন্ট ব্যাংকিংও থাকবে না। তবে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড বা অন্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা থাকবে। জাতীয় পরিচয়পত্র সহ নিজস্ব তথ্যাদি আপলোড করে একজন হিসাব খুলতে পারবেন। একইভাবে ঋণ নেয়ার জন্যও প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করে ঋণের আবেদন করতে পারবেন। যারা বেতন-ভাতা বা ব্যবসার টাকা গ্রহণ করবেন, তারা অনলাইনে নিজের হিসাব নিতে পারবেন। অন্য ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করেও টাকা জমা করা যাবে। আবার অন্যদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ বা এজেন্টদের সেবা ব্যবহার করে নগদ অর্থ উত্তোলন করা যাবে। ডিজিটাল ব্যাংক ছোট আকারের ঋণ দিতে পারবে, বড় বা মাঝারি শিল্পে কোনো ঋণ দিতে পারবে না। বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের জন্য ঋণপত্রও খুলতে পারবে না এসব ব্যাংক। প্রযুক্তিনির্ভর সেবা হওয়ায় এসব ব্যাংকের কোনো কোনো সেবা দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাবে। প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের সাথে পার্থক্য স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার খোরশেদ মকসুদ বলেন, প্রচলিত ব্যাংক সময় নির্ভর, অনেক সেবার জন্য সশরীরে যেতে হয়। ঋণ নেয়া, আমানত খোলা, স্টেটমেন্ট নেয়ার জন্য অনেক সময় ব্যাংকে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়।কিন্তু এসব ব্যাংকে সেসব করতে হবে না। কিন্তু সব ধরনের সেবাই পাওয়া যাবে। লেনদেনের সকল বিষয় হবে ভার্চুয়ালি।

ডিজিটাল ব্যাংক: গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশে যেভাবে ডিজিটাল ব্যাংকিং চালু হয়েছে, বাংলাদেশেও সেটা চালু হলে:
  • ব্যাংকে যেতে না হওয়ায় গ্রাহকদের সময় সাশ্রয় হবে। অনেক সময় সেবা নিতে গ্রাহকদের ব্যাংকে গিয়ে সিরিয়ালে বসে থাকতে হয়। কিন্তু এখানে সেটা করতে হবে না। তাদের ব্যাংকে যাতায়াতের সময়ও বাঁচবে।
  • ব্যাংকের শাখা খুলতে না হওয়ায় সেখানে ভাড়া-কর্মীদের পেছনে ব্যয় অনেক কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলো সাশ্রয়ে কম খরচে গ্রাহকদের সেবা দিতে পারবে।
  • বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন।
  • চব্বিশ ঘণ্টার যেকোনো সময় এই ব্যাংকের সেবা নেয়া যাবে।
অন্যদিকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকের দক্ষতার অভাব এবং প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক মোবাইল ফোন না থাকায় তাদের এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের সেবা নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষ, নগর জীবনের বাইরের মানুষকে এই সেবার আওতায় আনা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সাথে যেভাবে মানুষজন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, তাতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সাথেও কয়েক বছরের মধ্যেই মানুষ খাপ খাইয়ে নেবে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার খোরশেদ মকসুদ বলেন নতুন প্রজন্ম প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের তুলনায় এ ধরনের ব্যাংকিং-এ বেশি আগ্রহী। সিঙ্গাপুর, ফিলিপিনের মতো দেশেও দেখা গেছে, প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় ডিজিটাল ব্যাংক মানুষ বেশি পছন্দ করছে।‘’ তিনি বলছেন, ‘’আস্তে আস্তে অনেক কিছুই ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে। আমরাও অনেক কেনাকাটায় নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিস ব্যবহার করি, মোবাইল ফোনের কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করি। এভাবেই ব্যাংকের অনেক সেবা পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। ব্রাঞ্চ ব্যাংকিংয়ের যে খরচ, সেটা ভবিষ্যতে অনেক ব্যাংক নিতে পারবে না।‘’ কোনো আশঙ্কা বাংলাদেশে যেখানে অনেক সময় প্রচলিত অনেক ব্যাংক নিয়ে অভিযোগ ওঠে, গ্রাহকের দিক থেকে আস্থার সংকট তৈরি হয়, সেখানে এসব ডিজিটাল ব্যাংকের ওপর গ্রাহকরা কতটা আস্থা রাখতে পারবে? এই প্রশ্নের জবাবে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার খোরশেদ মকসুদ বলেন, এখনো কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর আস্থা রেখে অসংখ্য মানুষ লেনদেন করছে। সেটাও একটা ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা। এক্ষেত্রেও হবে। তবে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে শক্তভাবে নজরদারি আর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, প্রচলিত সব ব্যাংকের মতো এসব ডিজিটাল ব্যাংকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিধিবিধান, নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং নজরদারির মধ্যে থাকবে। তাদেরকেও আমানতের একটা অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। শাখা না থাকলেও এসব ব্যাংকের একটি প্রধান শাখা থাকবে।গ্রাহকের অভিযোগ বা অসন্তুষ্টির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহক চাইলে প্রধান কার্যালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দিতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবার জন্য সমান এবং স্বচ্ছ হবে কি না- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকে মধ্যে। কারণ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমন অনেকে প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আগ্রহের কথা প্রকাশ হয়েছে, যাদের সরকার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার খোরশেদ মকসুদ বলেন, ‘’এটা একটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কিন্তু কথা হলো, এটা কি সবার জন্যই দেয়া হচ্ছে, নাকি কারও কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে? সেটা যদি হয়, তাহলে সেটা একটা বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এখানে যদি স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়, প্রতিযোগিতামূলক হয় এবং যোগ্যদেরই অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে এটা একটা ভালো পদক্ষেপ হবে।‘’ বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনো প্রান্তিক অনেক মানুষ প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং সেবার আওতাতেও আসেনি। তাদের এই প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবার ভিতর কতটা নিয়ে আসা যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেই সঙ্গ সাইবার সিকিউরিটির বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাদের মতে, নতুন এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে যখন আসবে, এর সাথে তথ্য প্রযুক্তিবিদদের সম্পৃক্ত করে এগিয়ে নেয়া উচিত। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন ‘’প্রচলিত ব্যাংকের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার কারণেই ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কথা আসছে। কিন্তু বর্তমানে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে, সেখানে যেমন বলা হয়েছে, এমডিকে হতে হবে ব্যাংকিং সেবায় ১৫ বছরের অভিজ্ঞ। তাহলে তো সেই প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চিন্তাভাবনা থেকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং চালু করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে বরং প্রযুক্তিতে দক্ষ নতুন চিন্তাভাবনার লোকজনকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এটা তো একপ্রকার স্টার্ট-আপ।‘’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App